ইনসাইড থট

ধর্ষণের বিচারে নতুন আইন চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 03/04/2018


Thumbnail

গত কয়েকদিন পত্রিকা আর সোশ্যাল মিডিয়ায় যে খবর পাওয়া যাচ্ছে তাতে দেশে মেয়ে, শিশু আর নারী নির্যাতন চরম আকারে বেড়ে গেছে। অনেকে বলছেন, মানসিক অসুস্থ মানুষের সংখ্যা চরম আকারে বেড়ে চলেছে দেশে। বিশ্ব তথা গোটা দেশে এখন এক একটি ঘন বসতির গ্রাম, যারা একে অপরের খুব ঘনিষ্ঠভাবে থাকে। তাই আইটি’র এই যুগে অপকর্ম করে আগের মতো আর লুকানো সম্ভব হচ্ছে না। যেখনেই যা ঘটছে তা সাথে সাথেই চলে আসছে মিডিয়ায়, জানছে মানুষ, জানতে পারছেন সবাই। তৈরি হচ্ছে জনমত, ঘৃণা।

পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে যে, হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে কিশোরী বিউটি আক্তারকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়াকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। র‌্যাব ৯ ও পুলিশের একটি যৌথ দল সিলেটের বিয়ানিবাজার থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা এবং সিলেটে র‌্যাব ৯ এর পরিচালক মনিরুজ্জামান গণমাধ্যমকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শনিবার (৩১ মার্চ) দুপুরে সিলেটে র‌্যাবের সদর দপ্তরে এক প্রেস কনফারেন্সে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে। র‌্যাবের মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খানও এই তথ্য নিশ্চিত করেন।

গত ২১ জানুয়ারি শায়েস্তাগঞ্জের ব্রাহ্মণডোরা গ্রামের দিনমজুর সায়েদ আলীর মেয়ে বিউটি আক্তারকে (১৪) বাড়ি থেকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বাবুল মিয়া ও তার সহযোগীরা। এক মাস তাকে আটকে রেখে ধর্ষণ করে। এক মাস নির্যাতনের পর বিউটিকে কৌশলে তাঁর বাড়িতে রেখে পালিয়ে যায় বাবুল। এ ঘটনায় গত ১ মার্চ বিউটির বাবা সায়েদ আলী বাদী হয়ে বাবুল ও তার মা স্থানীয় ইউপি মেম্বার কলমচানের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে অপহরণ ও ধর্ষণ মামলা দায়ের করেন। পরে মেয়েকে সায়েদ আলী তার নানার বাড়িতে লুকিয়ে রাখেন। এরপর বাবুল ক্ষিপ্ত হয়ে ১৬ মার্চ বিউটি আক্তারকে উপজেলার গুনিপুর গ্রামের তার নানার বাড়ি থেকে রাতের আঁধারে জোর করে তুলে নিয়ে যায়। ফের ধর্ষণের পর তাঁকে খুন করে লাশ হাওরে ফেলে দেয়। বিষয়টি জানাজানি হলে দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। কত খারাপ এই মানুষগুলো। কী তাঁদের পারিবারিক আর সামাজিক শিক্ষা! এমন ছেলের বাব - মা হওয়ার চেয়ে সন্তান না থাকা অনেক ভালো। আমরা ভাগবান নামের অমিতাভ বাচ্চনের একটা ছবি দেখেছিলাম সেখানে এমন কথাই বলা হয়েছিলো যে, নৈতিকতা বিবর্জিত ছেলে মেয়ের বাবা মা হওয়ার চেয়ে নিঃসন্তান হওয়া অনেক ভালো।

যা হোক বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের দেশে ধর্ষণ চরম আকারে বেড়ে গেছে। এর লাগাম টানা দরকার। এক সময় এমন আকারে এসিড সন্ত্রাস বেড়ে গিয়ে যখন চরম আকার ধারণ করে তখন নতুন আইন প্রনয়নের মাধ্যমে এই ধরণের অপরাধ দমন কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছে। তাই তেমন কিছু একটা ভাবা দরকার। ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে এর আগে ছিলেন একটা পৌরসভার মেয়র যেখানে তিনি সুসংগঠিত সন্ত্রাসের আর মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা যখন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছিল তখন তিনি ব্যাপকহারে ক্রস ফায়ার শুরু করে দেন তাদের। এতে কিছু নামী উকিল, মানবাধিকার কর্মী আর সে দেশীয় সুশীলরা খুব চটে গেলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো দুতের্তে দমবার পাত্র নয়। তিনি সুসংগঠিত সন্ত্রাসের আর মাদক চোরাচালানের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে তাঁর স্টাইলে ক্রসফায়ার চালিয়ে গেলেন। বহু খারাপ লোক যাদের জেলে আটকে রাখা যায় না, দুর্বল আইন, দামী উকিল আর মানবাধিকার কর্মীদের অত্যাচারে জনগণের জানমাল রক্ষা করতে পাইকারী ক্রসফায়ার দিলেন তিনি। এর ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলেন। তাই মেয়র থেকে হলেন ফিলিপাইনের প্রেসিডেন্ট, নির্বাচনের মাধ্যমে, বিপুল ভোটে মে ২০১৬ সালে। এর পরে ক্ষমতায় এসেই সারা দেশে শুরু করলেন বেশুমার ক্রসফায়ার। কারণ দাভাও শহরে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় শহরটির অপরাধ দমনের ব্যাপারে রদ্রিগোর ব্যাপক ভূমিকা পালন করেন, তাই তাঁর জনপ্রিয়তা ও জয়ের কারণ বলে সবাই মনে করেন।

বাংলাদেশের মতো দেশ যেখানে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পীকার আর প্রধান শক্তিশালী বিরোধীদলের নেতাও মহিলা। সেই দেশে নারী, মহিলা ও শিশুরা ধর্ষিত হয় অহরহ, তাও মিডিয়ায় খবর প্রকাশ পায়। সেই দেশে তেমন কোন কার্যকর আইন নেই, যা আছে নেই তাঁর প্রয়োগ। কী অভাগা দেশের মানুষ আমরা! আমরা শুধুই ভিজিবুল বা দৃশ্যমান উন্নতির জন্য কসরত করছি, দেশের আপামর জনগণের উন্নতির আশায়।

ইন্দোনেশিয়ার সরকার শিশু যৌন নির্যাতনকারীদের রাসায়নিকভাবে নপুংসক করার নীতি নিয়েছে। ফলে ইন্দোনেশিয়ায় যৌন অপরাধ পুরোপুরি নির্মূল হতে পারে বলে ইন্দোনেশিয়ারপ্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো মনে করেন।

বাংলাদেশে যেমন সব সময় খুনী, সন্ত্রাসী ও টাকাওয়ালা জঘন্য অপরাধীদের পক্ষ নেয় মানবাধিকার কর্মীরা, ঠিক একই ভাবে ইন্দোনেশিয়ায় মানবাধিকার কর্মীরা ধর্ষকদের পক্ষ নিয়েছিলও। তাই সে দেশের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘মানবাধিকারকে সম্মান করে, তবে যন নির্যাতনকারীদের শাস্তির বিষয়ে কোন আপোষ হতে পারে না’। ইন্দোনেশিয়ায় ১৪ বছর বয়সী এস কণ্যাশিশুকে গনধর্ষণ ও হত্যার পরে ২০১৬ সালে মেয়ে শিশু নির্যাতনকারীদের রাসায়নিকভাবে নপুংসক করার একটা আইন পাশ করে। যদিও তাঁদের সংসদে এটা নিয়ে তুমুল বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তু এই ঘটনার পরে ইন্দোনেশিয়ায় নারি ও শিশু নির্যাতনের হার অনেক কমে গেছে।

আমাদের মতো দেশে ধর্ষক ও তাদের সহযোগীরা ধর্ষণের যৌক্তিকতা তুলে ধরে তাদের অপকর্মকে বৈধ করতে নানা কারণ দেখান, সেখানে প্রয়োজনে ধর্মকে ব্যাবহার করে। পোশাক নিয়ে কথা বলে তাদের অপকর্মকে বৈধতা দিতে চায়। দেশটাকে তারা ‘আয়ামে জাহেলিয়াতের’ যুগে নিয়ে যেতে চায়। ইসলামে চুরি-ডাকাতি-মদ্যপান-খুন-জখম-মানহানি-জেনা (এগুলো হুদুদ মামলা) যার প্রমাণ চারজন পুরুষ সাক্ষী লাগে, নারী সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। এছাড়া “হুদুদ মামলায় পারিপার্শ্বিক প্রমাণ চলিবে না।” (চাক্ষুষ সাক্ষী থাকতে হবে)। ফলে ইসলামী আইনে বাংলাদেশে ধর্ষণের বিচার সম্ভব নয়।

জানিনা আমাদের প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেত্রী, স্পীকার আর প্রধান শক্তিশালী বিরোধীদলের নেতা এটা নিয়ে কতটা চিন্তিত। মিডিয়ার খবর তাঁদের কাছে পৌঁছে কি না। নারির ক্ষমতায়ন যে সরকার ও দেশের অন্যতম প্রধান এজেণ্ডা সেই দেশে নারী ও শিশুদের ধর্ষণের মত চরম অন্যায়ের হাত থেকে রক্ষা করার কোন পদক্ষেপ নেওয়া হবে কি না। এই সব পশুদের লালসায় লাগাম দিতে ফিলিপাইনের মতো ক্রসফায়ার বা ইন্দনেশিয়ার মতো ধর্ষকদের রাসায়নিকভাবে নপুংসক করার একটা আইন পাশ করার কোন আইন প্রণীত হবে কি না। কী অভাগা দেশের মানুষ আমরা! আমরা শুধুই ভিজিবুল বা দৃশ্যমান উন্নতির জন্য কসরত করছি, দেশের আপামর জনগণের উন্নতির আশায়। আমাদের জিডিপি উঠে দাঁড়িয়েছে কম বেশী ৭ এ। সামজিক সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমাদের মানসিকতার বা আত্মীক উন্নতি না হলে এই টাকা দিয়ে কী হবে? কী হবে উন্নত দেশ, যদি দেশের মানুষের জীবন না বাঁচে, যদি সম্মানের সাথে না বাঁচা যায়!

সায়েদুল আরেফিন, উন্নয়ন কর্মী ও কলামিস্ট

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭