ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

যেভাবে প্রেসিডেন্ট হবার পথে এগিয়ে চলেছেন ট্রাম্প


প্রকাশ: 22/01/2024


Thumbnail

এ বছরটা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। এ বছরের নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। লড়াইয়ে কারা মুখোমুখি হচ্ছেন এ নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে নানা জল্পনাকল্পনা, হিসাব-নিকাশ ও ছক কষাকষি। বিভিন্ন নির্বাচনি জরিপের ফলাফল অনুযায়ী যদিও এতদিন ধারণা করা হতো যে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দল থেকে প্রার্থী হিসেবে দেখা যাবে ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে, কিন্তু বর্তমানে এই ধারণা বাস্তবে রূপান্তর হওয়া শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ইতোমধ্যেই রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসাবে যার নাম সবচেয়ে বেশি আলোচনায় ছিল সেই রন ডিস্যান্টিস সরে দাঁড়িয়েছেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দৌড় থেকে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আইওয়া অঙ্গরাজ্যে ব্যাপক ব্যবধানে হেরে শেষ অবধি তাকেই সমর্থন জানাচ্ছেন ফ্লোরিডার গভর্নর এবং ট্রাম্পের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আলোচনায় থাকা এই রন ডিস্যান্টিস।

আগামীকাল নিউ হ্যাম্পশায়ার অঙ্গরাজ্যে রিপাবলিকান প্রার্থী বাছাইয়ের ভোট (প্রাইমারি) অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর আগেই যেন রণে ভঙ্গ দিলেন ডিস্যান্টিস। তিনি আর এ প্রতিদ্বন্দ্বীতায় থাকবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। যদিও প্রথম থেকে তাকেই রিপাবলিকান পার্টি থেকে মনোনয়ন পাওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিযোগী হিসাবে বিবেচনা করা হয়েছিল কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রতিযোগিতায় হেরে গেলেন। নিজ থেকেই নির্বাচনের প্রাথমিক ধাপ থেকেই সরে গিয়ে ট্রাম্পকে সমর্থন জানাচ্ছেন তিনি।

আর এর মাধ্যমেই প্রেসিডেন্ট হবার দৌড়ে ট্রাম্পের পথ যেন আরও সুগম হয়ে গেল। সকল জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত ট্রাম্পই আসছেন ক্ষমতায়, বর্তমানে এমনটাই ধারণা করছেন বিশ্লেষকগণ।

বর্তমান প্রেক্ষাপট যা বলছে তাতে এটি সুনিশ্চিত যে রিপাবলিকানরা সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই আরেকবার সুযোগ দিতে চান। এমন পরিস্থিতিতে রিপাবলিকান থেকে ট্রাম্পের শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী ডিস্যান্টিস নিজ থেকে সরে যাওয়াটাই উত্তম বলে মনে করেছেন।

গতকাল রোববার এ বিষয়ে ডিস্যান্টিস বলেন, বিজয়ী হওয়ার কোনো সুস্পষ্ট পথ দেখছেন না তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও পোস্ট করে তিনি সাত মাস ধরে চলা নির্বাচনী প্রচারের ইতি টানার ঘোষণা দেন। এতে ডিস্যান্টিস বলেন, ‘নির্বাচনের মাঠ ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আইওয়ার প্রাইমারিতে ৫১ শতাংশ ভোট পেয়ে ট্রাম্প সবার চেয়ে এগিয়ে আছেন। এটা স্পষ্ট যে রিপাবলিকানদের বেশির ভাগ ট্রাম্পকে আরেকটি সুযোগ দিতে চান।‘

ডিস্যান্টিস সরে যাওয়ায় এখন ট্রাম্পের সামনে সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী তাঁরই প্রশাসনের কর্মকর্তা নিকি হ্যালি। এ প্রসঙ্গে নিকি বলেছেন, পরবর্তী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনকে টক্কর দেওয়ার মতো একজনই রয়েছেন, আর সেটা তিনি।

তবে বিশ্লেষকেরা বলছেন, নিউ হ্যাম্পশায়ারের প্রাইমারিতে চমকে দেওয়ার মতো কোনো ফল না পেলে হ্যালির প্রার্থী হওয়া নিয়ে ইতিমধ্যে তৈরি অনিশ্চয়তা আরও জোরালো হতে পারে।

অর্থাৎ, রিপাবলিকান পার্টি থেকে প্রার্থী হওয়া থেকে ট্রাম্পের সামনে আর তেমন কোনো শক্ত বাধা আছে বলে মনে করা হচ্ছে না।

মামলা যেন শাপেবর:

অনেকেই মনে করেন ট্রাম্পের আবারও নজরের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠার পেছনে তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো বেশ ভালো গুরুত্ব বহন করেছে। জো বাইডেনের কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ডজনখানেক মামলা হয়েছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। বহু আমেরিকানদের ধারণা তাকে নির্বাচন থেকে সরিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যেই তার বিরুদ্ধে যত ফৌজদারি মামলা। আর এ কারণেও বহু আমেরিকানদের সমর্থনের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন সাবেক এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

এদিকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে যৌন নির্যাতনের মামলায় পর ইউসিএলএ ল স্কুলের নির্বাচনী আইন সংক্রান্ত অধ্যাপক রিচার্ড হ্যাসেন বলেছিলেন, “যুক্তরাষ্ট্রে কেউ ‘ফেলোনি’ বা গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত হলেও তার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচন করার পথে কোনো সাংবিধানিক বাধা নেই।”

এ ছাড়াও বিশ্লেষকরা উদাহরণ দেন, কারাগারে থেকেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার অন্তত দুটি নজির রয়েছে। ১৯২০ সালে ইউজিন ডেবস নামে সোশ্যালিস্ট পার্টির এক ব্যক্তি গুপ্তচরবৃত্তি আইন লঙ্ঘনের দায়ে আটলান্টায় জেলে থাকা সত্ত্বেও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হয়েছিলেন। এ ছাড়া লিন্ডন লা’রুশ নামের আরেকজন ১৯৯২ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কারাগারে থাকা অবস্থায়য়ই। তিনি কর জালিয়াতির মামলায় জেল খাটছিলেন।

এ ছাড়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশ গোঁড়া একটা সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে, যাদের কাছে এখনো তাঁর আবেদন আছে। এ সমস্ত উদাহরণ এবং সেই সাথে ট্রাম্পের বিপুল পরিমাণ সমর্থন থাকার ফলে ধরে নেয়াই যায় নির্বাচনী দৌড়ে বেশ ভালোমতোই এগিয়ে যাচ্ছেন ট্রাম্প। আর তা শত বিতর্ক এবং মামলা থাকা সত্ত্বেও।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭