ইনসাইড পলিটিক্স

দলীয় প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন: সমঝোতার প্রথম ধাপ?


প্রকাশ: 23/01/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগ গতকাল তার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে তারা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না। আওয়ামী লীগের এই দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্তের প্রধান কারণ হল দলটির অভ্যন্তরীণ কোন্দল সামাল দেওয়া। জাতীয় সংসদ নির্বাচন আওয়ামী লীগ এবার সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিল। যারা দলের মনোনয়ন পাননি তাদেরকেও নির্বাচনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছিল স্বতন্ত্র ভাবে। এ জন্য আওয়ামী লীগ কারও বিরুদ্ধে কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে না এমন ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রেক্ষিতে এবার স্বতন্ত্র প্রার্থীদের হিড়িক পড়ে। প্রচুর স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং রেকর্ড সংখ্যক বিদ্রোহী প্রার্থী এবার নির্বাচনে জয়ী হন। কিন্তু এই জয়ের পরে সারা দেশে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দল প্রবল আকার ধারণ করেছে।

নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক এবং উৎসবমুখর করার জন্যই আওয়ামী লীগ জেনে বুঝে এই ঝুঁকি নিয়েছে। কিন্তু এই ঝুঁকির পর এখন আওয়ামী লীগের ঘর সামলানো কঠিন হয়ে গেছে। সারা দেশে আওয়ামী লীগের কোন্দল এবং বিরোধ ছড়িয়ে পড়েছে। এরকম বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনের জন্য উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করার সিদ্ধান্ত নেয়। গতকালকের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সর্বসম্মত ভাবে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। আওয়ামী লীগ সভাপতি কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের মতামত দেন এবং তারা প্রায় সকলেই উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে না করার পক্ষে তাদের মতামত রাখেন। এরকম বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচনে দলের কোন্দল এবং বিরোধ কিছুটা প্রশমিত হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কিন্তু এই ঘটনা বৃহত্তম রাজনৈতিক পরিসরে একটি অন্য রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। 

বিএনপির গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে কোন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে না। কারণ স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী সকল নির্বাচন এখন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৮ নির্বাচনে বিপর্যয়ের পর বিএনপি কয়েকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। তারপর তারা নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয় এবং সেই বর্জনের ধারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। এখন প্রশ্ন দাঁড়িয়েছে, স্বতন্ত্র ভাবে যদি উপজেলা নির্বাচন হয় তাহলে বিএনপি কী করবে? বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন হলে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। 

বিএনপির একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, যেহেতু এই নির্বাচন দলগতভাবে করার কোনো বিষয় না। এটি একজন ব্যক্তির ইচ্ছা অনিচ্ছার নির্ভরশীল, সেজন্য ব্যক্তিগতভাবে কেউ যদি উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তাহলে সে ক্ষেত্রে তাকে বাধা দেওয়া বা তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করার কোনো কিছু নেই। 

ওই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেছেন, যখন দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে, তখন ধানের শীষ দেওয়ার বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়। এখানে যেহেতু স্বতন্ত্র নির্বাচন হচ্ছে সেখানে কাউকে ধানের শীষ দেওয়া হবে না। যে যার মতো করে নির্বাচন করবে। এক্ষেত্রে তাকে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। এই ঘটনার ফলে আওয়ামী লীগের কৌশলের দ্বিমুখী লাভ হলো বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এর ফলে একদিকে যেমন আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের মীমাংসা হলো ঠিক তেমনিভাবে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষদেরকেও সামাল দেওয়া গেছে। এর ফলে উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপি কোন আন্দোলন যেমন করবে না তেমনি বিএনপির বহু প্রার্থী স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচনে দাঁড়াবে তাদের অস্বস্তি রক্ষার জন্য। এটিকে অনেকে রাজনৈতিক সমঝোতার প্রথম ধাপ হিসেবে মনে করছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭