ইনসাইড পলিটিক্স

উপজেলা নির্বাচন নিয়ে বিএনপিতে অদ্ভুত নীরবতা


প্রকাশ: 24/01/2024


Thumbnail

উপজেলা নির্বাচন আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে করবে না। দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত না হলে বিএনপি কী করবে—এ নিয়ে বিএনপি এখন পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত জানায়নি। বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এই নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেছেন, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে লন্ডন থেকে। লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া যে নির্দেশনা দিবেন, সেই নির্দেশনা অনুযায়ী বিএনপি কাজ করবে বলেও জানা গেছে। 

বিএনপির বিভিন্ন সূত্র বলছে, তিনটি কারণে উপজেলা নির্বাচনে বিএনপি শেষ পর্যন্ত অংশগ্রহণ করতে পারে। প্রথমত, যেহেতু এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অনুষ্ঠিত হবে না, কাজেই বিএনপির কোন নেতাকর্মী যদি স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে দাঁড়ান তাহলে সেখানে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। বিষয়টি দলীয় সিদ্ধান্তের নয়। 

বিএনপির একজন নেতা জানিয়েছেন, দল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে দলগত ভাবে তারা এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে এবং সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু যেহেতু উপজেলা নির্বাচন দলগতভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে না, কাজেই নির্বাচনে তাদের অংশগ্রহণ করা না করার কোন বিষয় নেই। 

দ্বিতীয়ত, বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে একটা হতাশা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের পর আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যে প্রতিরোধ আশা করা হয়েছিল, তেমন প্রতিরোধ হয়নি। বরং সব দেশ সরকারের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে এগিয়ে আসছে। এরকম পরিস্থিতিতে বিএনপির হতাশা দূর করার জন্য নেতাকর্মীদেরকে নির্বাচনের মাঠে নামানোটা একটি ভাল বিকল্প বলে মনে করছেন বিএনপির অধিকাংশ নেতা। এ কারণে বিএনপি শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে যেতেই পারে। 

তৃতীয়ত, বিএনপি মনে করছে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যে মামলা এবং অন্যান্য হয়রানি চলছে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য নির্বাচনে অংশগ্রহণ একটি ভাল বিকল্প। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে তারা মাঠে নামার সুযোগ পাবে এবং এর ফলে সংগঠনও শক্তিশালী হবে। এই সমস্ত হিসাব নিকাশ থেকে বিএনপি উপজেলা নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের নীরবতা পালন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আর এই সিদ্ধান্ত যদি শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হয় তাহলে উপজেলা নির্বাচনে বিপুল সংখ্যক বিএনপির নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এর ফলে সরকারের একাধিক লাভ হবে। 

প্রথমত, নির্বাচন নিয়ে যে এক ধরনের অনীহা ছিল জনগণের মধ্যে সেটা দূর হবে। দেশ নির্বাচনমুখী হবে। দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন সময় বিএনপি যে নির্বাচন কমিশনকে অবৈধ এবং অগ্রহণযোগ্য বলেছিল সেই অবস্থান থেকে পরোক্ষভাবে হলেও বেরিয়ে আসবে। এর ফলে আশা সবচেয়ে বড় যে লাভটা সরকার হবে তা হল নতুন সরকার একটি আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাবে। আর এ কারণেই নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপি যদি আগ্রহী হয় তাহলে সরকার সেটিকে স্বাগত জানাবে বলেই ধারণা করা হচ্ছে।

বিএনপির সামনে এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ হলো সংগঠনকে পুনরুদ্ধার করা এবং সাংগঠনিক শক্তিকে দৃঢ় করা। আর সেটি করার জন্য নির্বাচন একটি ভালো টনিক। আর এ কারণেই বিএনপির মধ্যে এখন নির্বাচনে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। দলের মাঠ পর্যায়ে যারা নেতা আছেন বিশেষ করে বিভিন্ন এলাকায় যারা জনপ্রিয় তারা উপজেলা নির্বাচনে আগ্রহী। আর এই আগ্রহকে প্রশ্রয় দেওয়া ছাড়া বিএনপির সামনে কোন বিকল্প নেই। দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে না হলে কেউ যদি স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে দল সাংগঠনিক ব্যবস্থাও নিতে পারবে না। আর এই বাস্তবতায় উপজেলা নির্বাচনের বিষয়টি বিএনপি নীরবতার মাধ্যমে উপক্ষো করছে। এর অর্থ হলো যার খুশি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুক, যার খুশি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করুক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭