ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে ভারত-চীনের কূটনৈতিক লড়াই


প্রকাশ: 24/01/2024


Thumbnail

নির্বাচনের পরপরই বাংলাদেশে ভারত এবং চীনের কূটনৈতিক লড়াই জমজমাট হয়ে উঠেছে। ভারত মালদ্বীপের অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশে যেন কোন ভাবেই চীনের প্রভাব বলয় বিস্তার না হয় সেজন্য চেষ্টা করছে। অন্যদিকে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের অর্থনৈতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এর ফলে এই দুটি দেশের কূটনৈতিক লড়াই বাংলাদেশে ক্রমশ দৃশ্যমান হচ্ছে। উল্লেখ্য, মালদ্বীপেও এর আগে ভারত এবং চীনের মধ্যে কূটনৈতিক লড়াই হয়েছিল এবং যে লড়াইয়ে এবারের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে চূীনপন্থী রাজনৈতিক দল ক্ষমতা দখল করেছে এবং মালদ্বীপের মতো একটি কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ভারতের প্রভাব অনেকটাই খর্ব হয়েছে। সেই কারণেই বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারত এবং চীন উভয়ের মনোযোগী। 

নির্বাচনের পর ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হচ্ছে। টানা চতুর্থবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন শেখ হাসিনা। নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর সবচেয়ে ব্যস্ত যে রাষ্ট্রদূত তিনি হলেন প্রণয় ভার্মা। তিনিই প্রথম বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এবং আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গেও প্রণয় ভার্মার বৈঠক হয়েছে। আর এই বৈঠকগুলোতে ভারতের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সুস্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন। 

বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ সুস্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, ভারত বাংলাদেশের পরীক্ষিত বন্ধু এবং তার দ্বিপাক্ষিক বিদেশ সফরের প্রথম দেশটি হবে ভারত। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাবে একটি বার্তা পরিষ্কার হয়েছে তা হল প্রতিবেশী এবং বিদেশী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে ভারতই প্রথম। ভারতের সঙ্গে এই গভীর হৃদতাপূর্ণ সম্পর্কে চীন বিচলিত হয়নি বা দূরে সরে যায়নি। বরং চীনও বাংলাদেশে তার প্রভাব বলয় অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য চেষ্টা করছে। 

চীনের কমিউনিস্ট পার্টির আন্তর্জাতিক দফতরের ভাইস মিনিস্টার সুন হাইয়া এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। গত মঙ্গলবার তিনি ঢাকায় এসেছেন। এছাড়া চীনের রাষ্ট্রদূতও এখন ভারতের রাষ্ট্রদূতের পদাঙ্ক অনুসরণ করে বিভিন্ন মন্ত্রী এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত শুরু করেছেন। আজ তিনি আইসিটি প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। চীনের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা তিনিও প্রধানমন্ত্রী সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। তিনি চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। তবে বাংলাদেশ ভারত বা চীন কারও বলয়ে যাবে না। বাংলাদেশের কূটনৈতিক নীতি হল সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সাথে বৈরিতা নয়। 

একদিকে কৌশলগত কারণে চীনের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক যেমন বাংলাদেশের অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। কারণ বাংলাদেশের যে মেগা প্রকল্পগুলো হচ্ছে, বড় বড় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হচ্ছে, তাতে চীন একটা বড় অংশীদার। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে গত ১৫ বছরে তীল তীল করে সেই সম্পর্ক একটা অবয়ব পেয়েছে। তাছাড়া এবারের নির্বাচনে ভারত যেভাবে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছে সেটি বাংলাদেশের জন্য একটি বড় পাওয়া। আর এ কারণে বাংলাদেশ ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের একটি নতুন ধারার সূচনা করতে চায়। এখন প্রশ্ন হলো মালদ্বীপের নির্বাচন এবং মালদ্বীপের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে ভারত এবং চীন যেভাবে বিরোধে জড়িয়েছে সেরকম বিরোধ বাংলাদেশে হবে কি না। বাংলাদেশের কূটনীতিকরা বলছেন, তেমন হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। কারণ বাংলাদেশ একটি নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে দুদেশের সঙ্গে একটি স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখতে চায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭