প্রকাশ: 25/01/2024
আওয়ামী লীগ যে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করবে না, আমি মোটামুটি ভাবে জানি। এই বিষয়ে একমাত্র দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা ছাড়া আর কেউ সঠিকভাবে জানতেন না। তাহলে তিনি কেন দলীয় প্রতীক বাদ দিলেন? এর কিন্তু একটা দার্শনিক ভিত্তি আছে। আমি আগেই বলেছি যে, রাজনীতি কিন্তু দার্শনিক ভিত্তিতে চলতে হয়। এখানে রাজনীতিতে দার্শনিক ভিত্তিতেই শেখ হাসিনা সিদ্ধান্ত নেন। কোন রোমান্টিসিজমে তিনি সিদ্ধান্ত নেন না। সুতরাং, যেকোন সিদ্ধান্ত নিলে বুঝতে হবে যে, এর পিছনে তার মস্তিষ্ক কাজ করছে। আর হৃদয়ে কাজ করছে, অবশ্যই গণমানুষের কোনটা ভালো হবে। তিনি যেহেতু দলীয় প্রধান, তাই দলের কোনটা ভালো হবে তিনি সেটাও চিন্তা করেন।
আমার মতে এই উপজেলায় প্রতীক বরাদ্দ না করার প্রধানতম কারণ হচ্ছে যে, এর দ্বারা কে কার কতটুকু জনপ্রিয় সেটাই যাচাই হবে এবং এই যাচাই বাছাইয়ের মাধ্যমে আস্তে আস্তে দলের ভিতরে যে কোন্দল আছে এবং অনেকে মনে করেন যে, এভাবে দলীয় প্রতীক ছাড়া নির্বাচন করলে দল আরও ভাগ হয়ে যাবে, এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। আসল ব্যাপার হচ্ছে, যখন দেখবে যে এই লোক পপুলার না, এবং পরে যে নির্বাচিত হবে আস্তে আস্তে তার দিকেই লোক আসবে।
যারা ভুলে না গেছেন তারা দেখবেন যে, ১৯৮১ সালে যারা শেখ হাসিনাকে দলীয় প্রধান করে আনেন। তাদের ধারণা ছিল যে, উনি হবেন একজন জাস্ট শো একটা পুতুলের মত, তাকে যা খুশি তাই করা যাবে। যখন দেখা গেল যে, তিনি আওয়ামী লীগের মতো এত বড় একটি পুরাতন সংগঠনের প্রধান হিসেবে আছেন, তখনই তিনি একটা দার্শনিক ভিত্তিতে রোডম্যাপ করলেন। তার রোড ম্যাপ ছিল প্রথমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন এবং সাথে সাথে ভোটের অধিকার এবং ভাতের অধিকার সবার জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে। ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা সম্ভব না যদি রাজনৈতিক ক্ষমতায় না যাওয়া যায়। আর রাজনৈতিক ক্ষমতায় যাওয়া যায় না যদি নিজের দল যদি ঠিকমতো সংঘটিত না হয়। এই কারণের জন্যই তার আন্দোলনের ফলে তখনকার ছিল তার পর চলে গেল। দলকে তিনি সংগঠিত করার একটি পন্থা হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেন। এবং পরিশেষে ২১ বছর পরে তার দলকে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আনলেন। প্রতিবিপ্লবীদের প্রতিহত করে আবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসা একমাত্র দার্শনিক ভিত্তিতেই সম্ভব। এটা কখনওই রোম্যান্টিসিজম এর দ্বারা সম্ভাবনা৷।
এ দেশে জাসদের রাজনীতিতে আমরা দেখেছি। তখন রোম্যান্টিসিজমের কারণে এদেশে যারা বাংলাদেশ গড়তে পারত সত্যিকারে, আমার মতে একাত্তরে এই আল-বদর, আল-শামস এ দেশের যত বুদ্ধিজীবী হত্যা না করেছে তার চেয়ে বেশি হত্যা করেছে বা তারা হত্যার শিকার হয়েছে এই জাসদের রোমান্টিসিজমের রাজনীতির কারণে। সুতরাং, একজন রাজনীতিবিদকে যদি সত্যিকারের দেশকে গড়তে হয়, তাহলে তার ভিতরে থাকতে হবে দার্শনিক ভিত্তি। এই দার্শনিক ভিত্তির অংশ হিসাবে কিন্তু তিনি এটাকে এবার দলীয় প্রতীক তুলে দিয়েছেন। তিনি কোনও এক্সপেরিমেন্ট করেন না। রাজনীতি নিয়ে তার একটি দর্শন এবং সেই দর্শনের পথে দেখা যাবে যে, এখানে গণ্ডগোল হবে কিনা। অনেকে বলেন, হ্যা গণ্ডগোল কিছু হবে। ডেভেলপিং কান্ট্রিজ এর রাজনীতিতে হয়, এমনকি ডেভেলপড্ কান্ট্রিতেও দেখি আমরা। এটা খুব বিরাট একটা কিছু না। এটা যেমন স্বাভাবিক ভাবে হয়, আর তাই আগের নির্বাচনের চেয়ে এবার একটু কম বলে আমার মনে হয়। কেননা, যারা এই নির্বাচন পরিচালনা করছেন তারা কিন্তু খুব সুন্দরভাবে, নিরপেক্ষভাবে রাজনীতি করছেন। আর সরকারও অত্যন্ত নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করেছে।
যেহেতু প্রতীক নাই, সুতরাং যারাই দাঁড়ান না কেন জনপ্রিয় হলে তারাই নির্বাচিত হবেন। জনপ্রিয় হলে সব মানুষের একটা টেনডেন্সি যে, আস্তে আস্তে বিজয়ীর সাথে যায়, পরাজিতের সাথে কেউ যেতে চায় না। যেমন এখন আর বিএনপিতে কেউ যোগদান করবে না। তাই যদি হত তাহলে জাসদের মতো দল যাদের মন্ত্রী এবং আল্লাহর তাদের টাকা-পয়সাও দিয়েছে। রাশেদ খান মেননের মতো লোক যারা সারা জীবন দিল, মোটামুটি আমি জেনে বলছি, কেউ তো সংগঠন গড়ে তুলতে পারলেন না। কারণ হচ্ছে, এখন ছোট ছোট যে রাজনৈতিক দলগুলি করা হচ্ছে এরা সবাই রোমান্টিসিজমের উপরে করছে। তার ফলে রোম্যান্টিসিজমে ওরা কতগুলো ইঞ্জিন পেয়েছে, কিন্তু বগি পাচ্ছে না। মানে সমর্থক নাই, নেতা আছে। এখন নেতা তো রোম্যান্টিসিজমও করতে পারে। আর এই জাসদের যে এক্সপেরিএন্স, সেটা দেখে হঠাৎ করে এখন আর ইয়াং জেনারেশন রোম্যান্টিসিজমের রাজনীতিতে যোগদান করতে চায় না। তারা দার্শনিক শেখ হাসিনার প্রতি আকৃষ্ট হয়। সুতরাং, এবার যে দলীয় মার্কা তুলে দেওয়া হল, এটা স্থায়ীভাবে তুলে দেওয়া হবে। কারণ হচ্ছে যে, এই পর্যন্ত উনি চান যে যারা জনপ্রিয় তারাই আসুক। আর রাজনীতির উপর দিকে যারা যাবে, তারা রাজনৈতিকভাবে রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকেই আসবেন। সুতরাং, যদি ভবিষ্যৎ চিন্তা করি তাহলে বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত এবার গ্রহণ করলেন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক এই উপজেলায় মার্কা বাদ দিয়ে।
এখানে তিনি প্রমাণ করতে চাইলেন যে, আপনাকে উপজেলা পর্যন্ত নিজের কতটুকু যোগ্যতা, আপনি কতটুকু জনপ্রিয় হলেন, কতটুকু ভালোবাসে জনগণ, সেটা প্রমাণ দিয়ে আসুন। কারণ, তাই না হলে বিভিন্ন দেশ বলে যে, জনপ্রিয় কিনা বোঝা যায় না। আমাদের দেশ সম্বন্ধে তারা বলে, আমরাও অবশ্য তাদের সম্বন্ধে একই কথা বলতে পারি। সুতরাং, জনপ্রিয় হয়েই আসতে হবে। এই জনপ্রিয় হওয়ার জন্যে একটি বাস্তব পদক্ষেপ হচ্ছে মার্কা তুলে দেওয়া। কারণ, যদি মার্কা থাকে তাহলে কিছু ভোটার আছে যারা লোক দেখে না এখনও মার্কা দেখে ভোট দেয়। সুতরাং, উপজেলা পর্যন্ত মার্কা তুলে দিলেন জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগাতে। অর্থাৎ, আমাদের যে গণতন্ত্র সেই গণতন্ত্রকে শক্তিশালীকরণে একটি পদ্ধতি এটি। এতে করে একদিকে দলীয় যেসব কোন্দল ছিল সেগুলো আস্তে আস্তে মিটে যাবে, অন্যদিকে রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ভিত্তি স্থায়ী হবে। আর, জনপ্রিয়তার বাইরে যে কোন কিছু নাই, সেটারই স্থায়ী রূপ দিলেন ইতিহাসের মহান একজন দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনা। এই রকম একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের জন্য দার্শনিক রাষ্ট্রনায়ককে দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে অবশ্যই ধন্যবাদ দেওয়া উচিৎ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭