ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

কোন দিকে এগোচ্ছে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্ক?


প্রকাশ: 26/01/2024


Thumbnail

ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। ১৯৮৮ সালে মালদ্বীপের সরকার-বিরোধী অভ্য়ুত্থান দমন করেছিল ভারতীয় সেনা। যার নাম ছিল অপারেশন ক্যাকটাস। শুধু তা-ই নয়, বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভারতীয় সেনা স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে উদ্ধারকাজ চালিয়েছে। কিন্তু গত বছর মুহম্মদ মুইজ্জু ক্ষমতায় আসার পর থেকে ভারত এবং মালদ্বীপের মধ্যকার সম্পর্কের ক্রমাগত অবনতি হয়েছে। চীনপন্থি রাষ্ট্রপতি মুহম্মদ মুইজ্জু ভারতীয় সেনাকে দেশ ছেড়ে চলে যেতে বলার পর থেকেই বিষয়টিকে ঘিরে বেশ উত্তেজনা বিরাজ করছে দেশ দুটিতে। কেন এই বিদ্বেষ দেশ দুটির মধ্যে?

ভারত বরাবরই মালদ্বীপের পাশে থেকেছে কারণ ভারত মহাসাগরের ওপর অবস্থিত ছোট্ট এই দ্বীপ কৌশলগতভাবে ভারতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই রাস্তা বাণিজ্যপথে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে, ভূরাজনৈতিক দিক থেকেও এই অঞ্চলটি ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এসব কারণে দীর্ঘদিন ধরেই মালদ্বীপে বিভিন্ন দিক থেকে ভারত বিনিয়োগ করে আসলেও বর্তমানে দেশ দুটিতে ঘোরতর বিরোধের এক চাপা উত্তেজনা অনুভব করা যাচ্ছে। যার সূত্রপাত চীনের প্রতি অনুগত থাকা মুহম্মদ মুইজ্জু যখন মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি হন তখন থেকেই। আর বর্তমানে এ সম্পর্ক যাচ্ছে আরও অবনতির দিকে।

সম্প্রতি ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে মালদ্বীপের তিন উপমন্ত্রী বেশ অবমাননাকর মন্তব্য করেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সাম্প্রতিক লাক্ষাদ্বীপ সফরের এক ছবিতে মালদ্বীপের মন্ত্রী মরিয়াম শিউনা এবং অন্যান্য নেতাদের বেশ আপত্তিজনক মন্তব্যকে ঘিরে কূটনৈতিক উত্তেজনা ও সংঘাতের পারদ যেন বেড়েই চলেছে।

এ ছাড়াও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মালদ্বীপ বর্জনের ডাকে মুখ থুবড়ে পড়ছে দেশটির পর্যটন শিল্প। এমন পরিস্থিতিতে চীনের শরণাপন্ন হয়েছেন দ্বীপ দেশটির প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু। যিনি আগে থেকেই চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত। প্রেসিডেন্ট হবার শুরুতেই তিনি ঘোরতর ভারতবিরোধী আচরণ শুরু করেন। এর প্রমাণ হিসেবে মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণের কয়েক ঘণ্টা পরই দ্বীপরাষ্ট্র থেকে ভারতীয় সামরিক বাহিনী প্রত্যাহার করার জন্য ভারতকে ‘আনুষ্ঠানিকভাবে’ অনুরোধ করেছিলেন মোহাম্মদ মুইজ্জু।

মুইজ্জুর ‘ইন্ডিয়া আউট’ বয়ানকে অনেকেই নিছক বাগাড়ম্বর হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। বিশ্লেষকরা যুক্তি দিয়েছিলেন, দেশ শাসনের প্রয়োজনীয়তা তাঁকে আরও নমনীয় করবে। কিন্তু নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি বিষয়টি নিয়ে তৎপর। তিনি শুধু বিজয়ের পরপর মালেতে ভারতীয় হাইকমিশনের সঙ্গে ভারতীয় নিরাপত্তাকর্মীদের প্রত্যাহার বিষয়ে আলোচনা শুরু করেননি; মন্ত্রী রিজিজুর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে আনুষ্ঠানিকভাবে দাবিটি উত্থাপনও করেন।

ভারতের সঙ্গে স্বাক্ষরিত প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তাসহ প্রায় ২১টি চুক্তি দেশ দুটির মধ্যে বলবৎ রয়েছে। অবৈধভাবে মাছ ধরা, মাদকদ্রব্য ও অস্ত্র পাচার বন্ধ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মালদ্বীপের বিশাল বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষমতা না থাকায় ভারত তার নিরাপত্তা দিচ্ছে। উপকূলীয় নজরদারি রাডার স্থাপন, সামরিক হাসপাতাল ও মালদ্বীপের জাতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য প্রশিক্ষণ সুবিধাও দিচ্ছিল ভারত। একই সঙ্গে দিল্লি তাকে বিমান, হেলিকপ্টার, সামুদ্রিক অ্যাম্বুলেন্স, বিশেষ জাহাজ এবং ইন্টারসেপ্টর বোট বা টহলের নৌকাও দিয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত মালদ্বীপের সশস্ত্র বাহিনীকে প্রশিক্ষণও দিয়েছে। মালদ্বীপ প্রতিরক্ষা বাহিনীকে প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তার ৭০ শতাংশ পূরণ করেছে ভারত। অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশন এর তথ্যমতে, ‘কেবল গত ১০ বছরে ভারত ১৪০০ এর বেশি মালদ্বীপ সেনাকে প্রশিক্ষিত করেছে। যেখানে দেশটিতে মোট সেনা সদস্য মাত্র ৪০০০।’ যদিও চীনপন্থি হিসেবে পরিচিত মুইজ্জু অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং বাণিজ্যের জন্য চীনের ওপর বেশি ঝুঁকে পড়ে মালদ্বীপকে ভারত থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করতেই পারেন। কিন্তু চুক্তি বাতিল করা মালদ্বীপের জন্য ক্ষতি না লাভের বিষয় হয়ে দাঁড়াবে সেটাই দেখার বিষয়।আর বর্তমান প্রেক্ষাপট ক্রমশই আরও সাংঘাতিক ভবিষ্যতের দিকেই এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা অনেক বিশ্লেষকদের। মালদ্বীপের ওই গুটিকয়েক মন্ত্রী ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা এক কথায় কুৎসিত, আর তার খেসারত কি ভাবে দিতে হতে পারে মালদ্বীপকে এ প্রশ্ন অনেকেরই মনে।

তবে মুইজ্জু বেশ জোরেশোরেই চীনের সাথে বন্ধুত্ব জোরদার করে চলেছে। ইতোমধ্যেই চীনের গবেষণা জাহাজকে বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দিয়ে দিয়েছে মালদ্বীপ। ফলে ভারতের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক আরও অনেক খারাপ হতে পারে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭