ইনসাইড থট

‘বাংলা ইনসাইডার’ কি, কেন, কার?

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 04/04/2018


Thumbnail

গত তিন এপ্রিল মঙ্গলবার বিএনপির শীর্ষ নেতারা তাদের দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন করেন। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন এই সংবাদ সম্মেলনে নেতৃত্ব দেন। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আট নেতার ব্যাংকে ১২৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেন বিষয়ে তদন্তের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হয়। কিন্তু লক্ষণীয় যে, ওই সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল ‘বাংলা ইনসাইডারে’র সমালোচনা। বাংলাদেশে ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্টের পর একটি রাজনৈতিক সংস্কৃতি দাঁড়িয়েছে যে, কোনো গণমাধ্যম কোনো রাজনৈতিক দলের সমালোচনা করলেই তার কণ্ঠরোধের চেষ্টা করা হয়। একটি গণমাধ্যমের রিপোর্ট যদি রাজনৈতিক দলের বিপক্ষে যায়, তাহলে আর রক্ষা নেই। মঙ্গলবার বিএনপি নেতাদের সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলা ইনসাইডারে’র উপর তাদের আক্রোশ আর গোপন থাকেনি। তাদের বডি ল্যাংগুয়েজ এমন ছিল, যাতে মনে হয়, সামনে থাকলে এখনি তারা ওই নিউজ পোর্টালকে গিলে খেয়ে ফেলবে। অথচ এই নেতারাই দিনরাত অহর্নিশ গণতন্ত্রের ছবক দেন!

প্রসঙ্গগত উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ বাংলা ইনসাইডার গোয়েন্দা সূত্রের বরাত দিয়ে বিএনপি নেতাদের অস্বাভাবিক লেনদেন খবর প্রকাশ করে। ওই সংবাদ প্রকাশের পর বিএনপি বা কোনো নেতা তার আনুষ্ঠানিক প্রতিবাদ জানাননি। গত ২ এপ্রিল দুর্নীতি দমন কমিশন, ১২৫ কোটি টাকার অস্বাভাবিক লেনদেনের অভিযোগের বিএনপির ৮ নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়। দুদক কোথাও বলেনি যে বাংলা ইনসাইডারের রিপোর্টের ভিত্তিতে তারা তদন্ত করছে। দুর্নীতি দমন কমিশন বলেছে, গোয়েন্দা রিপোর্টের ভিত্তিতে এই তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যেহেতু এই বিষয়টি তদন্তাধীন, তাই এই নিয়ে আমাদের কোনো বক্তব্য নেই। তবে, একটি কথা না বললেই নয়, বিএনপি নেতারা যে অসত্য বলায় চ্যাম্পিয়ন তা আরেকবার প্রমাণিত হলো। ৭৫ এর পর থেকে গোয়েবলসীয় মিথ্যাচারই যে তাদের রাজনীতির একমাত্র অবলম্বন সেটি বিএনপি নেতারা আবার দেখালেন। এরা যেমন জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বানানোর মিথ্যাচার করেছে। এরা যেমন দুর্নীতিবাজ তারেক জিয়াকে সৎ, পুত্র পবিত্র বানানোর জন্য গলাবাজি করে। তেমনি এই সংবাদ সম্মেলন অকপটে মিথ্যাচার করেছে। এনিয়ে নিশ্চয়ই আমরা অন্য লেখায় আলোকপাত করবো। আজকে আমার লেখার বিষয় এটি নয়। আমার বিষয় বাংলা ইনসাইডার সম্পর্ক বিএনপি নেতাদের আক্রোশের জবাব দেওয়া।

ওই সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতারা অভিযোগ করেছেন: ১. বাংলা ইনসাইডার সরকারি এজেন্সি’র অর্থায়নে পরিচালিত ২. বিরোধী দলকে ঘায়েল করার জন্য সরকার যে সব প্রোপাগান্ডা পোর্টাল (আমীর খসরুর মতে ২৫টি), করেছে ‘বাংলা ইনসাইডার তার অন্যতম ৩. বাংলা ইনসাইডারের একমাত্র কাজ হলো বিএনপির বিরুদ্ধে কুৎসা ছড়ানো।

বিএনপি নেতাদের সদয় অবগতির জন্য জানাচ্ছি, ‘বাংলা ইনসাইডার’ কোনো এজেন্সি বা সরকারের এক কানাকড়ি অর্থ নিয়ে পরিচালিত নয়। ‘বাংলা ইনসাইডার’ নিউজ পোর্টালটি ‘বাংলা ইনসাইডার লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানির দ্বারা পরিচালিত। এই কোম্পানির সিংহভাগ মালিকানা ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেড এর। ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেড দেশের শীর্ষ দশ বিজ্ঞাপনী সংস্থার একটি। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ভাবে সৃষ্টিশীল কাজের জন্য এই প্রতিষ্ঠানটি বহু পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে। ক্রিয়েটিভ মিডিয়ার দুই জন কর্মী, তাদের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে বাংলা ইনসাইডার লি: এর পরিচালক হয়েছেন। ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লি: এর মূল উৎস হলো ‘পরিপ্রেক্ষিত’। ১৯৯৭-২০০১ সালে ‘পরিপ্রেক্ষিত’ বাংলাদেশ টেলিভিশনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান। অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ। ‘পরিপ্রেক্ষিত ১৯৯৯ সালে একটি উন্নয়ন মূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পরিপ্রেক্ষিত যে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ধারা আমরা সূচনা করেছিলাম ওই ধারাকে অব্যাহত রাখতেই ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ‘বাংলা ইনসাইডার’ গঠন করা হয়। গত বছরের পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) থেকে এই ভিন্নধর্মী, অনুসন্ধানী নিউজ পোর্টালটি আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ করে। বিএনপি নেতাদের সবিনয় জানাতে চাই, ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লি: এর অর্থায়নে বাংলা ইনসাইডার চলে। কোনো এজেন্সি বা দলের টাকায় নয়। এ প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন বিএনপি নেতাদের করার লোভ সংবরণ করতে পারছি না, আপনাদের টাকায় যে বেশ কিছু তথাকথিত নিউজ পোর্টাল চলে তা কিন্তু আমরা জানি। ওই পোর্টাল গুলো কিভাবে নোংরা আবর্জনা ছড়ায় তা কি আপনারা দেখেছেন?

এবার আসা যাক বাংলা ইনসাইডারের সম্পাদকীয় নীতি নিয়ে। বাংলা ইনসাইডার মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন করে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ চায়। ব্যস এটুকুই। আমরা ক্লিশে, জংধরা, প্রতিহিংসা এবং ব্যক্তিগত আক্রমণের মূলধারার সাংবাদিকতাকে প্রত্যাখ্যান করি। আধুনিক, অনুসন্ধানী এবং ভিন্ন দৃষ্টি ভঙ্গীর সাংবাদিকতাকে ধারণ করি। গত এক বছরে দেখবেন, বিএনপি ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে দুর্নীতি লুটপাট যেমন আবার আমরা পাদপ্রদীপে এনেছি তেমনি আওয়ামী লীগেরও সমালোচনা করেছি। আমাদের কৃতিত্ব আমরা ভুলে যাওয়া হাওয়া ভবন, বিএনপির লুণ্ঠন রাজনীতি জনগণকে মনে করিয়ে দিয়েছি। অকপটে সত্য প্রকাশের দুর্দান্ত সাহসই আমাদের শক্তি। কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নে না বরং অকপটে সত্য অনুসন্ধানই আমাদের লক্ষ্য। এজন্যই স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই বাংলা ইনসাইডার পাঠকের আস্থায় জায়গা করে নিয়েছে।

আশা করি, বিএনপি নেতারা এখন থেকে নিয়মিত ‘বাংলা ইনসাইডার’ পড়বেন। আয়নায় নিজেদের মুখ দেখবেন। আর জানবেন, আমাদের যতই ভয় দেখান, সত্য প্রকাশে আমরা পিছপা হবো না।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ                                      



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭