ইনসাইড পলিটিক্স

নয় এমপি'কে সঙ্গে নিয়ে সংসদে আসছেন রওশন?


প্রকাশ: 28/01/2024


Thumbnail

আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে গেল জাতীয় পার্টি। আজ জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেকে দলের চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন। একই সাথে তিনি জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদকে দলের মহাসচিব হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছেন। আর জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদের এবং মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে অব্যাহতি দিয়েছেন। 

গুলশানের বাসায় এই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে রওশন এরশাদ বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০/১ ধারা অনুযায়ী জি এম কাদের এবং চুন্নুকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। তবে জাতীয় পার্টির জি এম কাদের অংশের মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, রওশন এরশাদের এ ধরনের অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার নেই। স্বঘোষিত চেয়ারম্যান হওয়ারও কোন ক্ষমতা তার নেই। তিনি সাংবাদিকদের বলেছেন, এ সব বিষয়কে গুরুত্ব দেই না। কারণ এগুলো একাধিকবার হয়েছে। তবে তারা এ সব করে জাতীয় পার্টির ভাঙন ধরাতে পারেননি। যারা এটা করেছেন সেটি এখতিয়ার বহির্ভূত। কিন্তু জাতীয় পার্টির ভিতরের খবর হলো রওশন এরশাদ জাতীয় পার্টির একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ সদস্যদের সাথে আলাপ করেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তবে এর ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে জাতীয় পার্টি ভেঙে যাবে কিনা নাকি শেষ পর্যন্ত একটি মধ্যস্থতা হবে সেই নিয়ে গুঞ্জন রয়েছে।

জাতীয় পার্টির সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্র জানাচ্ছে, রওশন এরশাদ আসলে এটি করেছেন জাতীয় সংসদে নারী সংসদ সদস্য হিসাবে শেরীফা কাদেরকে রুখে তিনি যেন নারী সংসদ সদস্য হতে পারেন সেজন্য। এ ব্যাপারে নয় জন সংসদ সদস্যের সমর্থন রয়েছে। শেষ পর্যন্ত জি এম কাজের যদি তার স্ত্রী শেরীফা কাদেরকে বাদ দিয়ে রওশন এরশাদ এবং সালমা ইসলামকে  সংরক্ষিত কোটায় মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাহলে জাতীয় পার্টির এই ভাঙন রোধ হবে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র মনে করছে। 

নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় পার্টিতে নানা রকম সমস্যা এবং সংকট দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে জাতীয় পার্টিতে গণপদত্যাগের ঘটনাও ঘটেছে। জি এম কাদেরের নেতৃত্ব সকলে মেনে নেওয়ার ব্যাপারে আপত্তি জানাচ্ছিল। বিশেষ করে নির্বাচনে জাতীয় পার্টির যে কৌশল তা দলের সিনিয়র নেতারা পছন্দ করেননি। কেউ কেউ মনে করেন নিজের স্ত্রীকে ঢাকা-১৮ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার জন্যই তিনি সরকারের সাথে ‘অসম্মান জনক’ সমঝোতা করেছেন। 

জাতীয় পার্টির একাধিক নেতা বলেছেন, ঢাকায় যে দুটি আসনে জাতীয় পার্টির এমপিরা ছিল, সেই দুটি আসন ছেড়ে দিয়ে তিনি তার স্ত্রীর জন্য ঢাকা-১৮ আসন নিয়েছেন এবং যেখানে তিনি জামানত হারিয়েছেন। শুধু তাই নয়, জাতীয় পার্টির মধ্যে ক্ষোভ আরও বেড়েছে যখন জি এম কাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে শেরীফা কাদের যিনি সরাসরি ভোটে পরাজিত হয়েছেন তাকে এবং সালমা ইসলামকে সংরক্ষিত নারী কোটায় এমপি বানাবেন। 

সালমা ইসলামের ব্যাপারে কারও কোন আপত্তি নেই। কারণ সালমা ইসলাম জাতীয় পার্টির অন্যতম পৃষ্ঠপোষক তিনি। কিন্তু শেরীফা কাদেরকে সংরক্ষিত কোটায় এমপি করা নিয়েই আসলে জাতীয় পার্টিতে মূল উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে। দলের অধিকাংশ নেতারাই এটি পছন্দ করছেন না। আর এর ফলে দলের ভেতরে থাকা নেতারাই রওশন এরশাদকে উস্কে দিয়েছেন এবং রওশন এরশাদ যেন আলাদা অবস্থান গ্রহণ করেন এবং এর ফলে যেন জি এম কাদেরকে একটি সমঝোতায় যেতে হয় তার অংশ হিসেবেই জাতীয় পার্টিতে এই নাটক বলে অনেকে মনে করছেন।

বিভিন্ন নেতারা বলছেন, রওশন এরশাদের এরকম বয়স নেই যে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হয়ে দল চালাবেন। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে তাকে অপমান করা হয়েছে, তাকে মনোনয়ন দেয়া হয়নি। এ সমস্ত ঘটনাগুলোর একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দলের ওপর। আর এ কারণে রওশন এরশাদকে সামনে আনা হয়েছে। এখন দেখার বিষয় জাতীয় পার্টি চূড়ান্ত ভাঙনের পথে যায় নাকি সংরক্ষিত আসন নিয়ে শেষ পর্যন্ত রওশন এরশাদের সঙ্গে সমঝোতা হয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭