ইনসাইড বাংলাদেশ

চীন কি বাংলাদেশকে মালদ্বীপ বা শ্রীলঙ্কা বানাতে চায়?


প্রকাশ: 28/01/2024


Thumbnail

৭ জানুয়ারি জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং ১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় সবচেয়ে তৎপর যে দেশটি তার নাম হল চীন। চীনের রাষ্ট্রদূত বিরামহীন ব্যস্ততা কাটাচ্ছেন। একের পর এক বিভিন্ন মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন। অন্যদিকে চীনের আন্তর্জাতিক বিভাগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস মিনিস্টার সুন হাইয়া চার দিনের বাংলাদেশ সফর শেষ করে ফিরে গেছেন।

নির্বাচনের পরপরই চীনের এই তৎপরতা কূটনৈতিক অঙ্গনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে চীনের রাষ্ট্রদূত আজ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। বাংলাদেশে যদি রিজার্ভ সংকট দেখা দেয় তাহলে এই তারল্য সংকট মোকাবেলায় সহায়তা দিতেও চীন প্রস্তুত বলে জানিয়েছে। ঠিক একই রকম প্রস্তাব দিয়েছিল শ্রীলঙ্কাকে এবং মালদ্বীপকেও। শ্রীলঙ্কা ওই প্রস্তাব গ্রহণ করে শেষ পর্যন্ত দেউলিয়া হয়েছে। সেখান থেকে শ্রীলঙ্কা কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে বটে। অন্যদিকে মালদ্বীপ এখন পুরোপুরি ভাবে চীনের দখলে। বাংলাদেশের নির্বাচনের পর চীন কি সেই লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে? সে রকম কোন পরিকল্পনা কি আছে বাংলাদেশকে ঘিরে তাদের এই প্রশ্নটি এখন উঠেছে। 

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরপরই চীন নির্বাচনকে স্বাগত জানিয়েছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে এক বিবৃতিতে তারা বলেছে, বাংলাদেশের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে। ১১ জানুয়ারি সরকার গঠিত হওয়ার পর রই চীনের পক্ষ থেকে নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানো হয়। এরপরই বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূতের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়। তিনি একের পর এক বিভিন্ন মন্ত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। আজ তিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন এবং সেখানে তিনি বাংলাদেশ থেকে আরও রপ্তানির অভিব্যক্ত করেছেন। বিশেষ করে মাছ, আম ইত্যাদি পণ্য আমদানির ব্যাপারে তার আগ্রহ জানিয়েছেন। এর ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশ নিয়ে চীনের অভিপ্রায় কি? 

বাংলাদেশের ব্যাপারে চীন এত উৎসাহী কেন? এই অতি আগ্রহের পিছনে কী রয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে বিভিন্ন দেশের উদাহরণ চোখে পড়ে। বিশেষ করে মালদ্বীপ এবং শ্রীলঙ্কা এই উপমহাদেশে চোখের সামনে উদাহরণ। এই দুটি দেশকে চীন প্রায় পুরোপুরি তাদের করতলগত করেছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করতে করতে চীন দেশটিকে পুরোপুরি নির্ভরশীল করে ফেলে। এমন কিছু মেগা প্রকল্প গ্রহণ করতে প্ররোচিত করায় যে সমস্ত মেগা প্রকল্প আর্থিকভাবে লাভজনক নয়। হাম্বানটোটা বন্দর কিংবা আর বিমানবন্দর নির্মাণের উচ্চাভিলাষী প্রস্তাবগুলো ছিল বাস্তবতা বিবর্জিত। এরকম একটি বাস্তবতায় নগদ অর্থের লোভে শ্রীলঙ্কা এই প্রস্তাবগুলো গ্রহণ করে এবং একটি পর্যায়ে তারা চীনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তাও নেয়। এর ফলে এখন প্রায় দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল দেশটি। অন্যদিকে মালদ্বীপের ব্যাপারেও চীনের আগ্রাসী নীতি ছিল। তেমন কিছু কি বাংলাদেশকে ঘিরে পরিকল্পনা করছে চীন?

কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন চীনের এরকম একটি পরিকল্পনা থাকতেই পারে। তবে বাংলাদেশে এরকম একটি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। কারণ প্রথমত, বাংলাদেশ চীনের সাথে একটি অর্থনৈতিক রাখছে বটে তবে পুরোপুরি চীনের অর্থনৈতিক কৃতৃত্বের মধ্যে প্রবেশ করবে না। দ্বিতীয়ত, ভারত বাংলাদেশের ঘনিষ্ট বন্ধু এবং ভারতের ওপর বাংলাদেশ নানা কারণে নির্ভরশীল। ভারত বাংলাদেশের সাথে চীনের সম্পর্ককে একটি সীমা রেখায় আটকে ফেলবে। তৃতীয়ত, বর্তমান সরকারের জন্য চীনের চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ পশ্চিমা দেশগুলোর আস্থা অর্জন। এ কারণে চীন যতই উৎসাহ দেখাক, চীনের সঙ্গে একটি দূরত্বের সম্পর্ক বাংলাদেশ রাখবেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭