প্রকাশ: 29/01/2024
সামরিক জান্তার ক্ষমতা দখলের তৃতীয় বার্ষিকী সামনে রেখে সশস্ত্রগোষ্ঠী আরাকান আর্মির সঙ্গে সেনাবাহিনীর তুমুল যুদ্ধ চলছে। অসমর্থিত সূত্রের খবর, যুদ্ধে চলতি সপ্তাহে ১২ থেকে ১৫ জন নিহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে চীন মধ্যস্থতা করে রাখাইন রাজ্যে যুদ্ধবিরতির বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে রাখাইন রাজ্যে অস্থিতিশীলতার কারণে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের পদক্ষেপ বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা বৃদ্ধি পাওয়ায় সীমান্ত এলাকায় সতর্কতা বৃদ্ধি করেছে বাংলাদেশ।
নির্ভরযোগ্য
তথ্যসূত্র ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে থেকে জানা যায়, তিন বিদ্রোহী গোষ্ঠীর জোট থ্রি ব্রাদারহুড
সম্প্রতি মিয়ানমার বাহিনীকে হটিয়ে দিয়ে রাখাইনের বেশির
ভাগ এলাকার নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করায় এ অবস্থা
তৈরি হয়েছে। মিয়ানমার বাহিনী এখন স্থল এলাকা
থেকে কামান
ও মেশিনগানের গোলাবর্ষণ ছাড়াও বিমান ও হেলিকপ্টার থেকে
হাতছাড়া হওয়া এলাকায় অনবরত
বোমাবর্ষণ করছে। ফলে স্থানীয় বাসিন্দারা
বাড়িঘর ছেড়ে পালাচ্ছেন এবং
তারা ভারতসহ বাংলাদেশে ঢুকে পড়ার চেষ্টা
করছেন। এ কারণে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত বরাবর এবং নাফ নদ
এলাকায় বিজিবি সর্বাত্মক সতর্ক অবস্থান নিয়েছে।
এদিকে
রাখাইনে বিস্ফোরণ এবং গোলাগুলির শব্দে
বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকায়ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। মাঝেমধ্যেই বাংলাদেশ অংশে এসব গোলা
ছুটে আসায় আতঙ্ক নতুন
মাত্রা পেয়েছে। শঙ্কা দেখা দিয়েছে মিয়ানমার
থেকে আবার রোহিঙ্গাদের ঢল
বাংলাদেশে এসে পরে কি
না তা নিয়ে।
এর আগে গত শনিবার
বিকালে রাখাইনে দুই পক্ষের গোলাবর্ষণে
ছোড়া একটি গুলি এসে
পড়েছে টেকনাফের উলুবনিয়া সীমান্তের একটি বাড়িতে। সীমান্তের
ওপারে দিনব্যাপী মর্টার শেল হামলা ও
গোলাগুলির এক পর্যায়ে একটি
গুলি উলুবনিয়া গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলামের বাড়ির টিনের চালে এসে পড়ে।
পরে গুলিটি বিজিবির স্থানীয় ফাঁড়ির ইনচার্জকে জমা দেওয়া হয়।
এদিকে সীমান্তের ওপারে উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকায় পাহারা জোরদার করেছে বিজিবি।
সীমান্তে
নাফ নদ এবং স্থলভাগে
বিজিবি সতর্ক টহলে রয়েছে। কক্সবাজারের
টেকনাফ, উখিয়ার পালংখালী এবং নাইক্ষ্যংছড়ি, আলীকদম
পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ
সীমান্তে বিজিবি টহল জোরদার করেছে
বলে বিজিবি সূত্র জানিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাসহ
যে কোনো ধরনের অনুপ্রবেশ
ঠেকাতে প্রস্তুত রয়েছে বিজিবি। গত বছর নাইক্ষ্যংছড়ি
সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরাকান আর্মির গোলাগুলি ও মর্টার শেল
হামলার এক পর্যায়ে নাইক্ষ্যংছড়ির
তুমব্রু গ্রামে মর্টার শেল এসে পড়েছিল।
এ ছাড়া বেশ কয়েক
দফা বাংলাদেশের সীমানায় মিয়ানমারের সামরিক হেলিকপ্টার এসে গুলিবর্ষণের ঘটনায়
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে মিয়ানমারের কাছে প্রতিবাদ জানিয়েছিল।
বিজিবির
সদর দফতর থেকে জানানো
হয়েছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল এ
কে এম নাজমুল হাসান।
এ সময় বিজিবি মহাপরিচালক
সীমান্তে দায়িত্বরত সব পর্যায়ের বিজিবি
সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি সবাইকে সর্বোচ্চ
পেশাদারির সঙ্গে দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সীমান্তে উদ্ভূত যে কোনো পরিস্থিতি
মোকাবিলায় সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশনা দেন।
বিজিবির
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বিজিবি
মহাপরিচালক বিজিবির কক্সবাজার ব্যাটালিয়নের (৩৪ বিজিবি) অধীনস্থ
উখিয়ার পালংখালী বিওপি এবং বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির
তুমব্রু বিওপি ও ঘুমধুম সীমান্ত
এলাকা এবং টেকনাফ ব্যাটালিয়ন
(২ বিজিবি) এর অধীনস্থ হোয়াইক্যং
বিওপি ও তৎসংলগ্ন সীমান্ত
এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনের সময় বিজিবি মহাপরিচালকের
সঙ্গে বিজিবি সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন
কর্মকর্তা, কক্সবাজার রিজিয়ন কমান্ডার, রামু সেক্টর কমান্ডার
ও সংশ্লিষ্ট ব্যাটালিয়নসমূহের অধিনায়কসহ বিজিবির অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত
ছিলেন।
আন্তর্জাতিক
বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত
বৃহস্পতিবার থেকে রাখাইনের স্বাধীনতাকামী
বিদ্রোহীরা মিয়ানমার জান্তা বাহিনীর ওপর চূড়ান্ত আঘাত
হানা শুরু করে। এরপর
তিন দিনে তারা রাখাইনের
বেশির ভাগ এলাকা দখল
করতে সমর্থ হয়। এ লড়াইয়ে
মিয়ানমার বাহিনী ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি স্বীকার করে এবং প্রচুর
অস্ত্রশস্ত্র গোলাবারুদ ফেলে পালিয়ে যেতে
বাধ্য হয়। তিন বিদ্রোহী
গোষ্ঠীর জোট ‘থ্রি ব্রাদারহুড’-এ রয়েছে আরাকান
আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স আর্মি ও ন্যাশনাল লিবারেশন
আর্মি। এই পরিস্থিতিতে এতদিন
ধরে মিয়ানমার জান্তার সঙ্গে সমঝোতার জন্য আলোচনা চালিয়ে
যেতে থাকা আরেক গোষ্ঠী
ন্যাশনাল লিবারেশন অর্গানাইজেশনও (পিএনএলও) আলোচনা বাতিল করে লড়াইয়ের ময়দানে
নেমে পড়ার ঘোষণা দিয়েছে।
এতে রাখাইন পরিস্থিতি আরও জটিল আকার
ধারণ করেছে। মিয়ানমার বাহিনীর এখন আরও পিছু
হটে যাওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
মিয়ানমারের
স্থানীয় গণমাধ্যম নারিনজারা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে,
গত শুক্রবার আরাকান আর্মি রাখাইনের বন্দরনগরী পকতাও পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর ম্রাক উ,
মিনবিয়া, কিয়াকতো ও রাথিডং শহরের
নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার
জন্য সেনাবাহিনীর সঙ্গে তুমুল লড়াই শুরু করে।
শুক্রবার ভোরে কালাদান উপত্যকার
কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এলাকা সেনাবাহিনীর নবম কমান্ড এলাকায়
হামলা চালালে দুই পক্ষের মধ্যে
তুমুল লড়াই হয়। কিয়াকতো
এলাকায় অবস্থিত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নবম কমান্ড এলাকাকে
গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক
পর্যায়ে বিদ্রোহীদের সঙ্গে টিকতে না পেরে বিপুল
গোলাবারুদ ও অস্ত্রশস্ত্র ফেলে
মিয়ানমার সেনারা পালিয়ে যায়। এরপর থেকে
মিয়ানমার বাহিনী তাদের অবস্থান থেকে কামানের গোলা
নিক্ষেপ করছে এবং বিমান
ও হেলিকপ্টার থেকে বোমাবর্ষণ করে
চলেছে।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭