ইনসাইড বাংলাদেশ

নির্বাচনের পরও কেন ইউনূসের ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে সরকার?


প্রকাশ: 29/01/2024


Thumbnail

নির্বাচনের আগে থেকেই ড. ইউনূসের ব্যাপারে সরকারের আগ্রাসী এবং কঠোর অবস্থান ছিল। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে একদিকে যেমন শ্রম আদালতের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য চেষ্টা ছিল, পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনেও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে তদন্ত দ্রুততার সঙ্গে নিষ্পত্তি করার একটা প্রচেষ্টা ছিল। 

অনেকের ধারণা করেছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনে যেন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না করতে পারে, আন্তর্জাতিক মহলে যেন নির্বাচন বিরোধী লবি করতে না পারেন, রাষ্ট্র এবং সরকারের বিরুদ্ধে নতুন করে কোন ষড়যন্ত্র করার সময় না পান সেজন্যই ড. ইউনূসকে ব্যতিব্যস্ত রাখার কৌশল হিসাবে এই সমস্ত মামলাগুলোকে দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। নির্বাচনের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকার একটা সমঝোতার উদ্যোগ নেবে এটা অনুমিত ছিল। এই সমঝোতার উদ্যোগে ড। মুহম্মদ ইউনূসের ব্যাপারে সরকার ছাড় দিতে পারে—এমন ধারণাও কোন কোন মহল পোষণ করেছিলেন। কিন্তু ৭ জানুয়ারি নির্বাচন এবং তার প্রেক্ষাপটে ১১ জানুয়ারি সরকার গঠনের পর দেখা যাচ্ছে, ড. ইউনূসের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান এতটুকুও পরিবর্তন হয়নি। বরং সরকার আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে গেছে। 

কেন ড. ইউনূসের ব্যাপারে সরকারের অবস্থান আরও কঠিন—এই নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠেছে। নির্বাচনের পরপরই শ্রম আদালতের মামলা এই ড. ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়। যদিও আদালত থেকে তিনি জামিন পান এবং গতকাল উচ্চ আদালতে তিনি স্থায়ী জামিন পেয়েছেন। আর অন্যদিকে দুর্নীতি দমন কমিশন গ্রামীণ টেলিকমের আত্মসাতের বিষয় নিয়ে যে তদন্ত করেছিল সেই তদন্তের প্রেক্ষিতে আজ ড. ইউনূস সহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছে। এর মাধ্যমে সুস্পষ্ট হয়ে গেল নির্বাচনের আগে ড. ইউনূসকে নিয়ে যে অবস্থানে সরকার ছিল নির্বাচনের পর সেই অবস্থানের কোন পরিবর্তন হয়নি। তাহলে সরকার কি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার চেষ্টা করছে না? ইউনূসের ব্যাপারে সরকারের এই অবস্থানের কারণ কি? 

এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একাধিক মতামত দিয়েছেন। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকার সম্পর্ক উন্নয়ন করতে চায় এটা সত্যি। তবে সেই সম্পর্ক উন্নয়ন ইউনূসের বিনিময়ে নয়, বাণিজ্যিক লেনদেনের বিনিময়ে। গভীর সমুদ্র বন্দরে মার্কিন তেল গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানিগুলোকে অনুসন্ধানের সুযোগ দেওয়ার চুক্তি, বোয়িং ক্রয় সহ নানা বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক সরকার এগিয়ে নিতে চাচ্ছে। ইউনূসের বিষয়ে সরকার কোন রকম ছাড় না দেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে। এর কারণ হিসেবে অনেকে মনে করেন যে ড. ইউনূস সবসময়েই এই সরকারের বিরুদ্ধে। তার ব্যাপারে যদি সরকার উদারতা দেখায় তাহলে তিনি বলবেন, হয়রানিমূলক ভাবে তার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। গতকালও হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এরকমই বক্তব্য বলেছেন। যদি দেশে এই কথা বলেন তাহলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইউনূস বাংলাদেশ সম্পর্কে কি বার্তা দিচ্ছেন তা বলাই বাহুল্য।

সরকার মনে করে ইউনূসের বিরুদ্ধে যে সমস্ত অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে তার কোনটাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত নয়, কোনটাই হয়রানিমূলক নয়। বরং মনে যেকোনো ব্যক্তি যে আইনের আওতার মধ্যে পড়েন, কেউই আইনের উর্ধ্বে নয় সেই বার্তাটি প্রতিষ্ঠিত করার জন্যই এই ধরনের মামলাগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এখন যদি সরকার স্বপ্রণোদিত হয়ে মামলাগুলো প্রত্যাহার করে বা মামলাগুলোকে হালকা করে নেয় বা দীর্ঘ সূত্রিতার বাক্সে বন্দি করে তাহলে মনে করা হবে সরকার নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্যই ইউনূসকে কোণঠাসা করেছিল। এখন ইউনূসের বিরুদ্ধে সরকারের আগে মতো রাগ নেই। আর এর ফলে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলাগুলো উদ্দেশ্যমূলক, হয়রানিমূলক ইত্যাদি প্রমাণ করা সহজ হবে। সরকার সে পথে যেতে চায় না। বরং আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে। ইউনূসের ব্যাপারে আদালত কি সিদ্ধান্ত নেয় সেটি চূড়ান্ত হবে। এরকম অবস্থান থেকেই সরকার এগোচ্ছে। এখন দেখার বিষয় এই অবস্থানের পাল্টা হিসেবে ড. ইউনূস কি করে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭