ইনসাইড থট

খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ সংরক্ষণে জলাভূমির গুরুত্ব


প্রকাশ: 02/02/2024


Thumbnail

মানব জাতির সমৃদ্ধি এবং সুস্থ পরিবেশ রক্ষায় জলাভূমির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার উপর জোর দিয়ে বিশ্বব্যাপী ১৯৯৭ সাল থেকে প্রতি বছর ২ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব জলাভূমি দিবস পালিত হয়ে আসছে। জলাভূমিতে উদ্ভিদ ও প্রাণীকূলের প্রতিবেশ ব্যবস্থা যথাযথভাবে সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় সচেতনতা ও উদ্যোগ গড়ে তোলার উদ্দেশ্যেই দিবসটি বিশ্বব্যাপী পালিত হয়ে থাকে। ১৯৯৭ সাল থেকে বাংলাদেশেও দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জলাভূমি হ্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ এবং সংরক্ষণে জাতিসংঘের আয়োজনে ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইরানের রামসার শহরে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে জলাভূমির আন্তর্জাতিক উপযোগিতার কথা তুলে ধরা হয়। জলাভূমি এবং মানুষের স্বাস্থ্যের বিভিন্ন দিকগুলোর মধ্যে আন্তঃসংযোগ স্থাপনের গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে এ বছরের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে “মানব জাতির কল্যাণে জলাভূমি” (Wetlands and Human Wellbeing)


জলাভূমি, এক লাখেরও বেশি প্রজাতির আবাসস্থল, অত্যাবশ্যকীয় মিঠা পানি সরবরাহ করে, বিশ্বব্যাপী খাদ্য উৎপাদনে উল্লেখযোগ্য ভ’মিকা রাখে, যেমন জলাভূমিতে জন্মানো চাল, যা ৩০০ কোটি মানুষের খাদ্যের যোগান দেয়। অধিকন্তু, জলাভূমি প্রাকৃতিক শক শোষণকারী হিসেবে কাজ করে, বৃষ্টিপাতের প্রভাব প্রশমিত করে এবং বন্যা ও ঝড়ের ঝুঁকি হ্রাস করে। জাতিসংঘের ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী অষ্টাদশ শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত পৃথিবীর প্রায় শতকরা ৮৫ ভাগ জলাভূমি হারিয়ে গেছে। মূলত কৃষি, বসবাসের জন্য বাড়িঘর তৈরী, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও শিল্প-কারখানা স্থাপন প্রক্রিয়ায় পৃথিবীর নানা জায়গায় জলাভূমি ধ্বংস করা হয়েছে। ফলে এসব জলাভূমির উপর নির্ভরশীল মানুষ এবং জীব‣বচিত্র্যের জীবনযাত্রা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনভূমির চেয়ে তিনগুণ হারে জলাভূমি হারিয়ে যাচ্ছে। জার্নাল নেচার জিওসায়েন্সের ২০২১ সালের ৮ মার্চের সম্পাদকীয়তে বিগত ৫০ বছরে পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৫ শতাংশ জলাভূমি হারিয়ে যাওয়ার তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে। দ্রুত হারিয়ে যাওয়া থেকে জলাভূমি রক্ষা, সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে বশ্বিক ও জাতীয় পর্যায়ে এখনই সচেষ্ট হওয়া জরুরি।


জলাভূমি জীব-বচিত্র্যের জন্য অত্যন্ত সংবেদনশীল। এটি বিপন্ন এবং বিরল প্রজাতির পাখি এবং প্রাণী, গাছপালা এবং কীঠপতঙ্গের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান সরবরাহ করে। জলাভূমি বিভিন্ন প্রাণী এবং শীতকালীন পাখির আশ্রয়স্থল। রামসার কনভেনশন অনুযায়ী জলাভূমি বলতে বোঝায় নিচু জমি, যার পানির উৎস প্রাকৃতিক কিংবা কৃত্রিম, পানির স্থায়িত্বকাল সারাবছর কিংবা মৌসুমভিত্তিক, পানি স্থির কিংবা গতিশীল, স্বাদু, আধা-লবনাক্ত বা লবনাক্ত, এছাড়াও কম গভীরতাসম্পন্ন সামুদ্রিক এলাকা যার গভীরতা ৬ মিটারের কম ও অল্প স্রোতযুক্ত। জলাভূমি শুধুমাত্র পানি ধরে রাখার কাজেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে না বরং বন্যার অতিরিক্ত পানি ধরে রাখার মাধ্যমে বন্যার ঝুঁকি কমায়। পানি প্রবাহ এবং পানি সংরক্ষণ জলাভূমি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই জলাভূমিকে পৃথিবীর কিডনি বলা হয়। জলাভূমি পৃথিবীতে জীবন টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করে। তাই আমাদেরকে নিজেদের স্বার্থেই জলাভূমিকে বাঁচিয়ে রাখা অতীব গুরুত্বপূর্ণ।

জলাভূমি জনপদের সঞ্জীবনী, প্রাকৃতিক ও সামাজিক সম্পদ এবং জীব‣বচিত্র্য, মৎস্য, জলজ উদ্ভিদ, ফল ও খাদ্যশস্যের আধার। এখানে জন্মানো জলজ উদ্ভিদ ও প্রাণী পরিবেশ সুরক্ষায় ভূমিকা রাখছে। আমাদের কৃষিকাজ জলাভূমির পানির উপর নির্ভরশীল। জলাভূমি ভূগর্ভের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে। কিন্তু দ্রুত নগরায়নে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে আমাদের দেশের অধিকাংশ জলাভূমি। আর শহরে জলাভূমি ভরাটের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। জলাভূমি অপব্যবহারে ইতিমধ্যে অনেক জলাভূমি হারিয়ে গেছে। বিকাশমান নগরায়ন ও শিল্পায়নের কারণে জলাভূমিগুলোর শ্রেণী পরিবর্তন হয়ে আবাসিক ও বাণিজ্যিক অবকাঠামোয় রূপান্তরিত হচ্ছে। জলাভূমির পানি প্রকৃতির অফুরন্ত দান নয় বরং একটি সীমিত সম্পদ। আমাদের কৃষি ও পরিবেশের প্রয়োজনে পানি সম্পদ ও জলাভূমি সুরক্ষায় জোরালো পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যাবশ্যক। দেশে মোট ৩৭৩টি জলাভ’মি রয়েছে, যার মোট আয়তন ৮,৫৮,৪৬০ হেক্টর। এই জলাভূমির রয়েছে বিশেষ গুরুত্ব। সুন্দরবন ও টাঙ্গুয়ার হাওরের জলাভূমি আন্তর্জাতিক মর্যাদা লাভ করেছে। 


বাংলাদেশে জলাভূমি আজ তীব্র সঙ্কটের মুখে। ক্রমবর্ধমান ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে জলাভূমি ধ্বংসের কারণে ইতোমধ্যে আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে, জলকেন্দ্রিক জীবনচক্র ও  বাস্তুসংস্থানের জন্য যা অশনিসংকেত। প্রত্যক্ষভাবে প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবিকার অবিচ্ছেদ্য অংশ। দেশের ১৮ কোটি মানুষের জীবন কোনো না কোনোভাবে এইসব জলাভূমির অস্তিত্বের সাথে যুক্ত। বিপন্ন জলাভূমির উপর নির্ভরশীল লক্ষ লক্ষ পরিবারের জীবন-জীবিকা। বিভিন্ন গবেষণা তথ্য অনুযায়ী জলাভূমি দেশের মোট জমির দুই-তৃতীয়াংশ নিয়ে গঠিত। জলাভূমির আয়তন কমে এখন ৪৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। 


বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। কৃষি এবং কৃষকরাই বাংলাদেশের অর্থনীতির মেরুদন্ড। বাংলাদেশ কৃষি পরিসংখ্যান তথ্য অনুসারে দেশের মোট আবাদী জমির পরিমাণ ৮৫.৭৭ লক্ষ হেক্টর যার মধ্যে ৭৪.৪৮ লক্ষ হেক্টর জমিতে সেচ এর মাধ্যমে কৃষিকাজ চলমান। এই সেচ এর প্রায় ৭৮% শতাংশ পুরোপুরি ভূ-গর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। বাংলাদেশে মাটির উপরে পানির বিভিন্ন উৎসের মধ্যে রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী, হ্রদ ও জলা, হাওর, বাঁওড়, খাল, বিল, ঝিল, দীঘি, পুকুর, প্লাবিত কৃিষজমি, পরিত্যক্ত নদীখাত, শুকনো নদীপৃষ্ঠ, খাড়ি, ঝর্ণা ও স্রোতজ বা গড়ান জলাভূমি। দখল ও দূষণের কারণে পানির আধার ধ্বংস হয়ে পানি সঙ্কট বৃদ্ধি পাচ্ছে। জলাভূমি কমে যাওয়ায় ভূগর্ভের পানির স্তর ক্রমেই নিচে চলে যাচ্ছে। পানির স্তর ভয়াবহ পরিমানে নেমে শুকনো মেসুমে আমাদের দেশের সেচের জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া যায় না। পানির অভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। খাদ্যনিরাপত্তার জন্য এ জলাভূমির ভূমিকা অনস্বীকার্য। বাংলাদেশে উৎপাদিত মোট ধানের এক-পঞ্চমাংশ আসে হাওরা অঞ্চল থেকে।


জলাভূমি বাস্তুতন্ত্র, জীব‣বচিত্র্য, স্থানীয় ও আ লিক তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, মিঠাপানির আধার, ভূগর্ভস্থ পানি পুনর্ভরাট, কার্বন আধার, জলবায়ুর অভিঘাত প্রশমন ও অভিযোজন, জীবিকার উৎস, অর্থনীতি ইত্যাদিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। বাংলাদেশের জলাভূমিকে প্রধানত চার ভাগে ভাগ করা যায়। যথা প্লাবন ভূমি সংশ্লিষ্ট জলাভূমি, ভ’গাঠনিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্ট জলাভূমি, উপক’লীয় এলাকার জলাভূমি এবং মানবসৃষ্ট জলাভূমি। আমাদের বিভিন্ন কর্মকান্ড যেমন- পানি উত্তোলন, নদী শাসন ও বন্যা নিয়ন্ত্রণে বাঁধ নির্মাণ, ভূমি ব্যবহারে পরিবর্তন, কৃষি সম্প্রসারণ, বন নিধন, অনিয়ন্ত্রিত পাথর ও বালু উত্তোলন, মাটি ও পানি দূষণ ইত্যাদি কারণে জলাভূমির পরিবর্তন হয়েছে এবং পরিবর্তন প্রক্রিয়া চলমান। জলাভূমি এলাকায় বিগত কয়েক দশকে অবকাঠামোগত উন্নয়নের ফলে গড়ে উঠেছে মানব বসতি, পর্যটন শিল্প। এতে ধানের উৎপাদন, মাছ চাষ, সড়ক যোগাযোগের উন্নতিতে আর্থসামাজিক উন্নতির পাশাপাশি জলাভ’মির পরিমাণ কমেছে, পরিবেশ ও প্রতিবেশের ক্ষতি হয়েছে, জীব‣বচিত্র্য বিলুপ্তি বা হ্রাস বা হুমকিতে পড়েছে, কোথাও কোথাও জীবন-জীবিকায় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। সুন্দরবন সংকুচিত

হওয়া, টাঙ্গুয়ার হাওর ও সেন্টমার্টিন দ্বীপে বর্ধিত হারে পর্যটকের আগমন এবং তাদের অনেকের অবিবেচনাসুলভ কর্মকান্ডের ফলে মাটি ও পানি দূষিত এবং জীব‣বচিত্র্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তন অতি দ্রুত গতিতে জলাভ’মিগুলোয় পরিবর্তন আনছে। যা মানুষের জীবন-জীবিকা ও জীব‣বচিত্র্যের উপর বড় মাত্রায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জলাভূমি আমাদের পানি সম্পদ বিশুদ্ধ ও ভূগর্ভস্থ জলাধার পুনর্ভরাট করে এবং কোটি কোটি মানুষের মাছ ও ভাতের যোগান দেয়।


খাদ্য উৎপাদন, সেচ, পর্যটন, বিনোদন, কর্মসংস্থান ও জীবিকা, পানি নিরাপত্তার জন্য জলাভূমি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জলাভূমি মানুষ তথা জীবজগৎ ও প্রকৃতির জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি বাস্তুতন্ত্র। নদীনালা, খালবিল, হাওর, বাওড়সহ বহু জলাভূমি এ দেশকে জালের মতো ঘিরে রেখেছে। দেশের মোট আয়তনের প্রায় ৫০ ভাগ কোনো না কোনোভাবে জলাভূমির অন্তর্ভুক্ত। জলাভূমি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা, জীব‣বচিত্র্য, খাদ্য, কৃষি, মৎস্য, পানি দূষণরোধ, পশু খাদ্য, ঔষধি গাছ, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সাইক্লোন থেকে রক্ষা, পলি ধারণ, নৌচলাচল ও যোগাযোগ, পর্যটন ও বিনোদন, প্রতিবেশ, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে অপরিসীম গুরুত্ব বহন করে। কাজেই আমাদের অস্তিত্বের সাথে জলাভূমি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। এ দেশের প্রাকৃতিক স্বাদু মাছের প্রধান উৎস হলো হাওর অঞ্চল। জীব‣বচিত্র্যের ক্ষেত্রে এ দেশে সবচেয়ে সমৃদ্ধ হলো হাওর অঞ্চল ও সুন্দরবন। এছাড়া বিভিন্ন বিল বিশেষ করে আড়িয়ল বিল ও চলন বিল এ দেশের গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি। সুন্দরবন শুধুমাত্র জীব‣বচিত্র্যেই সমৃদ্ধ নয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বিশেষ করে ঝড়, জলোচ্ছাস, সাইক্লোনের হাত থেকে এ দেশকে বাঁচানোর এক অতন্দ্রপ্রহরী। ১৯৯২ সালে সুন্দরবনকে প্রথম রামসার সাইট (রামসার কনভেনশন কর্তৃক আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত জলাভূমি) এবং ২০০০ সালে টাঙ্গুয়ার হাওরকে দ্বিতীয় রামসার সাইট হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্তু সম্পদের অতিরিক্ত আহরণ, পরিবেশ দূষণ, জনসংখ্যার চাপ, অপরিকল্পিত উন্নয়ন, জলাভ’মির গুরুত্বকে খাটো করে দেখা ও অনুধাবনে ব্যর্থতাসহ নানা কারণে এ দেশের জলাভ’মিগুলোর প্রায় প্রতিটিই কমবেশি বিপদের সম্মুখীন। হারিয়ে গেছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ নানা উদ্ভিদ ও প্রাণী। 


সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নদী-নালা-খাল-বিল-হাওর-বাঁওড়-জলাশয়গুলো বাংলাদেশের অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। জলবায়ু পরিবর্তনের করাল গ্রাস থেকে প্রাকৃতিক রক্ষাকবচ। জলাভূমির বিপন্নতার জন্য বিশেষজ্ঞরা যে তিনটি বিষয়কে মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছেন-সেগুলো হলো- জলবায়ু পরিবর্তন, দখল-দূষণ ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন প্রচেষ্টা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের ঘাটতি, বিদ্যমান প্রাতিষ্ঠানিক দূর্বলতা, ব্যবসায়ী-বিনিয়োগকারীদের প্রভাবনির্ভর সিদ্ধান্ত, দূর্বল তদারকি, অনিয়ম এবং রাজ‣নতিক পৃষ্ঠপোষকতার কারণে বাংলাদেশে জলাভূমি দখল বেড়েছে, জলনির্ভর জীব‣বচিত্র্য ব্যাপক ঝুঁকির কবলে পড়েছে। ইতোমধ্যে জলাভূমি সমৃদ্ধ ১৩টি এলাকাকে সরকার প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসাবে ঘোষণা করেছে। ২০১১ সালে সংবিধানে ১৮ ক অনুচ্ছেদ সংযোজনের মাধ্যমে জলাভূমি সংরক্ষণে রাষ্ট্রের দায়িত্ব হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব‣বচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণীর সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে। আমাদের জীবন

জীবিকার প্রয়োজনেই জলাভ’মির পরিবেশ ও জীব‣বচিত্র্য সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। 


পরিবেশ অধিদপ্তর ১৩টি এলাকাকে পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ অনুযায়ী এসব এলাকায় মাটি,পানি ও বায়ু দূষণকারী শিল্প স্থাপন, মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর ক্ষতিকারক যে কোন প্রকার কার্যাবলী, ভূমি ও পানির প্রাকৃতিক ‣বশিষ্ট্য নষ্ট/ পরিবর্তন করতে পারে এমন সকল কাজ নিষিদ্ধ। কিন্তু বাস্তবে আইন অনুযায়ী পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা সংরক্ষণে তেমন কোনো কার্যক্রম দৃশ্যমান নেই। জীববেচিত্র্য সংরক্ষণসহ হাওরা লের উন্নয়নে সরকার ২০ বছর (২০১২-২০৩২ সাল) মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ণ করেছে। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যানের বাস্তবায়ন

অত্যন্ত ধীর গতিতে চলছে। যার গতি বাড়ানো খুবই জরুরী। জীব‣বচিত্র্যসহ কৃষি, মৎস্য, পর্যটনের জন্য টেকসই জলাভূমি ব্যবস্থাপনার কেনো বিকল্প নেই। ভূপ্রাকৃতিক ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে জলাভূমির অবক্ষয় বা হ্রাস বা বিলুপ্তি আমাদের দেশের আয়ত্তে নেই বললেই চলে। সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিত কর্মকান্ড পরিচালনার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব সহনীয় পর্যায়ে রেখে জলাভ’মির টেকসই উন্নয়ন সম্ভব। জলাভ’মির গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তার নিরিখে পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং আন্তরিকতার সাথে তা বাস্তবায়ন করতে হবে। 


জলাভূমি ভরাটসহ নানাভাবে জলাশয় দূষণের মাধ্যমে প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট করে নিজেদের ভবিষ্যৎ বিপন্ন করে তুলছি। জলাভূমি না বাঁচলে, পরিবেশপ্রতিবেশ ভারসাম্য বিপন্ন হলে আমরা ভাল থাকবো না। নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই জলাভূমি রক্ষা করতে হবে। সুরক্ষিত রাখতে হবে পরিবশগত ভারসাম্য। সরকারের ভূমিকা মুখ্য হলেও সর্বস্তরের জনগণের সক্রিয় সর্মথন ও স্বতঃপ্রণোদিত ভূমিকা ছাড়া এ কাজে সফল হওয়া প্রায় অসম্ভব। শুধু আইন প্রয়োগের মাধ্যমে জলাভূমি রক্ষা করা সম্ভব নয়। এ জন্য জলাভূমিকেন্দ্রিক এমন কিছু প্রকল্প নেওয়া দরকার, যাতে সেগুলো থেকে স্থানীয় জনগণ সরাসরি লাভবান হতে পারে। তাহলে নিজ স্বার্থেই তারা জলাভূমি রক্ষায় উদ্যোগী হবে।

জলাভূমি সংরক্ষণ ও দেখাশোনার জন্য ভিন্ন ভিন্ন কর্তৃপক্ষের ওপর দায়িত্ব অর্পিত হয়েছে। এসব কর্তৃপক্ষের দায়সারা দায়িত্ব পালনের কারণে গ্রাম ও শহরের বিদ্যমান জলাভ’মি প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। উন্মুক্ত প্রাকৃতিক জলাশয়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ বাঁধ দেওয়ায় সেগুলো ডোবা ও নালায় পরিণত হচ্ছে। ফলে মৎস্য ও জলজ প্রাণীর বিচরণ ও প্রজনন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়ে পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। জলাভ’মি রক্ষায় স্থানীয়, আ লিক ও জাতীয় পর্যায়ে জলাভূমি চিহ্নিত করা, নির্বাচিত জলাভ’মি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের ব্যবস্থা করা, জলাভ’মি ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষেণে র্সবস্তরে টেকসই ব্যবস্থা চালু করতে হবে, বাড়াতে হবে গণসচেতনতা। জলাভ’মি উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অর্পিত দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া জলাভ’মি রক্ষার জন্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সমন্বয় অত্যাবশ্যক।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭