ইনসাইড পলিটিক্স

ফখরুল বেরোলেই তারেকের বিদায়?


প্রকাশ: 02/02/2024


Thumbnail

বিএনপিতে চলছে নানা মেরুকরণ। বিএনপির ভিতরেই চলছে নানা রকম সমীকরণ মেলানোর তৎপরতা। সবচেয়ে বড় বিষয় হল ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপির নেতারা এখন হতাশ, বিব্রত এবং অনেকেই ক্ষুব্ধ। আর এরকম অবস্থায় ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য প্রথমত নেতাকর্মীদেরকে চাঙ্গা করতে হবে। আন্তর্জাতিক বলয়ে বিএনপির প্রভাব আগের মতো আর নেই। বিশেষ করে নির্বাচনের পরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা দেশগুলো বিএনপি এখন আর তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। বরং নতুন সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বহু চেষ্টা করছে প্রায় সব দেশই। এরকম বাস্তবতায় বিএনপি কি করবে তা নিয়ে প্রশ্ন।

আন্তর্জাতিক মুরুব্বিরা বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছে তারেক জিয়ার নেতৃত্ব পরিবর্তনের জন্য। তারা মনে করছে, একজন দণ্ডিত ব্যক্তি বিদেশ থেকে দল পরিচালনা করার বিষয়টি কোনোভাবেই গণতান্ত্রিক চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এর ফলে বিএনপির নীতিনির্ধারক কোন নেতার সঙ্গে কূটনীতিকরা কথা বলতে পারছে না আনুষ্ঠানিকভাবে। তাছাড়া বিএনপির সত্যিকার অবস্থা কি বা দলটি কি করতে চায় সে সম্পর্কেও কোন সুস্পষ্ট ধারণা পাচ্ছেন না। তারেক জিয়া যেটি বলেন সেটি বিএনপির শেষ কথা। 

দেখা যাচ্ছে কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠকে কূটনীতিকরা কোন বিষয়ে প্রশ্ন করলে নেতৃবৃন্দ উত্তরের জন্য পরবর্তী বৈঠকের প্রস্তাব করছেন। এর মধ্যে লন্ডনে কথাবার্তা বলে নেতারা এসে তারেকের সিদ্ধান্ত জানাচ্ছেন। নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ন্যূনতম ক্ষমতাটুকুও বিএনপি নেতাদের নাই। এটি গত কয়েকমাসে পশ্চিমা দেশগুলো বুঝতে পেরেছেন। এই কারণেই তারা এখন বিএনপি নেতাদেরকে পরামর্শ দিচ্ছেন। তারা এমন নেতার সাথে কথা বলতে চান, যা তাৎক্ষণিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন এবং দেশে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিবেন। প্রচ্ছন্ন ভাবে তারা তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রস্তাব ছয় বছর আগে ভারতের পক্ষ থেকেও দেওয়া হয়েছিল।

ভারত সাফ জানিয়ে দিয়েছিল তারেক জিয়াকে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে না দেওয়া হলে বিএনপির সাথে তাদের কোন রকম সম্পর্ক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তারেককে নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পিছনে প্রধান যুক্তি ছিল তিনি একজন সন্ত্রাসী, জঙ্গি এবং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় দণ্ডিত। এছাড়াও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগসাজশের তথ্য ভারতের গোয়েন্দা সংস্থাদের কাছে ছিল। কিন্তু বিএনপিতে তখন তারেক জিয়ার বিপুল জনপ্রিয়তা ছিল। বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে তার অবস্থা ছিল অত্যন্ত জোরালো। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তিনি যদি বিএনপির সিনিয়র নেতাও হন তাহলে তিনি আক্রোশের শিকার হতেন। তারেক জিয়ার সমালোচনা করলে দলের পদ পদবীও হারানোর শঙ্কা ছিল। এরকম বাস্তবতায় তারেক জিয়া বিএনপির একক কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু সমস্যা দাঁড়িয়েছে অন্য জায়গায়। বিএনপি তাৎক্ষণিকভাবে কারও সাথে কোনো সিদ্ধান্ত বা কোন কমিটমেন্টে যেতে পারছিল না। এই অবস্থা চলছে।এখনও। 

এখনও বিএনপির নেতারা জানেন না আগামীকাল তারা কি করবে। এই অবস্থা একটি দলের জন্য চলতে পারে না। এই কারণেই কূটনীতিকরা এখন তারেক জিয়াকে সরিয়ে এমন একজন নেতাকে দায়িত্ব নিতে চাচ্ছেন যিনি ঢাকায় আছেন এবং সক্রিয়ভাবে কাজ করেন। এক্ষেত্রে তাদের প্রথম পছন্দ ফখরুল। অন্যদিকে দলের ভিতরেও নির্বাচনের পর তাদের অবস্থান টলটলয়মান। বারবার ভুল সিদ্ধান্ত এবং কারও সাথে কথা না বলে একক সিদ্ধান্তের কারণে দলের ভরাডুবি এমনটাই মনে করেন দলের সিংহভাগ নেতাকর্মী। এরকম বাস্তবতা তারেক জিয়া নিজেও আপাতত মূল রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে সরে দাঁড়ানোর পক্ষে ইতিবাচক ভাবে সারা দিয়েছেন। তবে বিভিন্ন সূত্র বলছে, তিনি কার কাছে দলের নেতৃত্ব ছেড়ে দেবেন- এ নিয়ে দলের মধ্যে চলছে নানা রকম আলাপ আলোচনা, গুঞ্জন। এ ক্ষেত্রে তারেকের পছন্দ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

২০১৬ সাল থেকেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তারেক জিয়ার অত্যন্ত ঘনিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। তারেক জিয়ার প্রতিটি কথা একান্ত অনুগত বাধ্যগত ভাবে মান্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এজন্য ফখরুলকে দলের দায়িত্ব দিলে তারেক জিয়ার নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি ভাবে থাকবে। শুধুমাত্র কাগজে কলমে তিনি দলের প্রধান উপদেষ্টা বা উপদেষ্টা থাকবেন। কিন্তু মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এখন জেলে। গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার মামলায় জামিন হয়নি। বিএনপির আইনজীবীরা বলছেন তারা এই জামিনের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে যাবেন। 

২৮ অক্টোবরের পর থেকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মোট ১১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টিতে তিনি জামিন পেয়েছেন। উচ্চ আদালতে জামিন পাবেন এমন আশা করছেন বিএনপির আইনজীবীরা। আর মির্জা ফখরুল বেরোলেই তারেকের অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি ঘটবে বলে ধারণা করছেন কেউ কেউ। কারণ বিএনপিতে এরকম আলোচনা এখন বেশ জোরেশোরেই চলছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭