ইনসাইড বাংলাদেশ

ভয়ঙ্কর হচ্ছে অর্থনৈতিক সংকট: সরকারের ৫ উদ্যোগ


প্রকাশ: 02/02/2024


Thumbnail

অর্থনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ তীব্র থেকে তীব্র হচ্ছে। গতকাল যখন প্রবাসী আয় রেকর্ড পরিমাণ দুইশ কোটি ডলার এসেছে, ঠিক সেদিনই বাংলাদেশের রিজার্ভ প্রথমবারের মতো ২০ বিলিয়ন ডলারের নীচে নামল। ডলার সংকটের কারণে অনেক এলসি খোলা যাচ্ছে না। এর প্রভাব পড়ছে রপ্তানি বাণিজ্যে। এক দিকে গ্যাসের সঙ্কট অন্যদিকে ডলার সঙ্কটের কারণে অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়ার মতো অবস্থায় চলে গেছে বলেই মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি আর ঋণ নির্ভর অর্থনীতি সামনের দিনগুলোতে বড় সঙ্কটের আশঙ্কাকে উন্মোচন করেছে। এরকম পরিস্থিতিতে সরকার কি করবে—এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে বিভিন্ন পর্যায়ে। নতুন অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এক দিকে যেমন তিনি বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ আহরণের বিষয়টি চিন্তা করছেন, তেমনি অর্থনীতিতে একটি বড় ধরনের সংস্কার আনার জন্য অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে ওঠার জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়েছেন। ইতোমধ্যে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। নতুন মন্ত্রিসভার মধ্যে তিনিই প্রথম মন্ত্রী, যিনি তার মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এ থেকে বোঝা যায়, অর্থনৈতিক সঙ্কটটি তীব্র হয়েছে এবং সরকারও এই সঙ্কটকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।

অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলার জন্য সরকার ৫টি উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এ উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে;

১. দুর্নীতি বিরোধী অভিযান জোরদার:  সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা ঘোষণা করেছিল তার নির্বাচনী ইস্তেহারে। এবার কাগজে কলমে নয়, বাস্তবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি শক্ত অবস্থান গ্রহণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সরকার। সেই উদ্যোগের কিছু কিছু বিষয় ইতোমধ্যে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল মনে করেন, দুর্নীতি কমাতে পারলে অর্থনৈতিক সঙ্কটের লাগাম টেনে ধরা সম্ভব হবে।

২. অর্থ পাচারকারীদের চিহ্নিত করা: গত এক যুগে বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে। যারা অর্থ পাচারকারী তাদেরকে চিহ্নিত করার কাজ আগে থেকেই শুরু হয়েছিল। এই কাজ এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। এই অর্থ পাচারকারীদেরকে চাপ প্রয়োগ করা হবে এবং আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। তারা যেন এই অর্থ ফিরিয়ে আনতে বাধ্য হয়—এরকম একটি পরিস্থিতি তৈরি করা হবে বলে জানা গেছে। সরকারের নীতি নির্ধারক মহল এই কৌশল চূড়ান্ত করার কাজ করছে।

৩. ঋণ খেলাপিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা: সরকার ইতোমধ্যে ইচ্ছাকৃত ঋণ খেলাপি কারা তাদের চিহ্নিত করেছে। তাদেরকে আর কোন ছাড় দেওয়া হবে না বলে অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকার একাধিক পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে এবং চলতি মাসের মধ্যেই এই পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হবে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে এ ব্যাপারে কয়েক দফা নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।

৪. ব্যয় সংকোচ ও অপচয় রোধ: নতুন সরকার ব্যয় সংকোচের ব্যাপারে কড়াকড়ি নির্দেশ দিচ্ছেন। শুধু নির্দেশ না, ব্যয় সংকোচ যেন প্রকৃত অর্থে হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য মনিটারিং ব্যবস্থাও চালু করেছে। একই সাথে অপচয় বন্ধের জন্য প্রধানমন্ত্রী নিজে নির্দেশনা দিয়েছেন এবং বিভিন্ন মন্ত্রণালয়গুলোতে এখন এই অপচয় যেন রোধ হয় সে ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাবনা এবং নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।

৫. রাজস্ব আয় বৃদ্ধি: অর্থনৈতিক সঙ্কট কাটানোর জন্য রাজস্ব আয় বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এনবিআর এখন পর্যন্ত কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। রাজস্ব আয় কিভাবে বাড়ানো যায় এবং কাঙ্খিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া যায় সে ব্যাপারে সরকার আলাপ আলোচনা করছে। অর্থ মন্ত্রণালয় এই বিষয়টির ব্যাপারে খুব শীঘ্রই সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দিবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 

আগামী দুই তিনটি মাস খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই দুই তিন মাসের মধ্যে অর্থনৈতিক সঙ্কটের লাগাম টেনে ধরতেই হবে। অর্থনীতির যে নিম্নমুখী প্রবণতা সেটাকে থামাতে হবে। না হলে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক গভীর সঙ্কটে নিমজ্জিত হবে বলে মনে করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭