ইনসাইড পলিটিক্স

উন্মুক্ত উপজেলা নির্বাচন: লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি?


প্রকাশ: 02/02/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগ তার কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার করা হবে না। তবে এই সিদ্ধান্তের কিছু অস্পষ্টতা ছিল। দলীয় প্রতীক ব্যবহার না করা হলেও আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে কি না বা কাউকে সমর্থন দেবে কি না—এমন বিষয়টি নিয়ে এক ধরনের অস্পষ্টতা ছিল। কিন্তু আজ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এই অস্পষ্টতা দূর করেছেন। 

তিনি জানিয়েছেন, উপজেলা নির্বাচনে দলীয় ভাবে কোন প্রার্থীকে সমর্থন দেবে না আওয়ামী লীগ। অর্থাৎ আবার উপজেলা নির্বাচন স্বতন্ত্র ভাবে চলে গেল। এর আগে যখন দলীয় প্রতীক উপজেলা নির্বাচনে ব্যবহার করা হত না তখনও আওয়ামী লীগ বিভিন্ন প্রার্থীকে সমর্থন দিত। দলগতভাবে ঠিক করে দেয়া হতো যে তাদের দলীয় প্রার্থী কি, সেই প্রার্থীর পেছনে নেতাকর্মীরা কাজ করতে এবং তাকে জেতানোর জন্য দলের কেন্দ্রীয় নেতাদেরও তৎপরতা লক্ষ্য করা যেত। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ এই নির্বাচনকে শুধু উন্মুক্ত করে দেয়নি, নির্বাচন থেকে নিজেরাই দূরে সরে এসেছে। 

এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তে লাভ বেশি হবে না ক্ষতি বেশি হবে? আওয়ামী লীগ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানত দুটি কারণে। প্রথমত, নির্বাচনে উন্মুক্ত করে বিরোধী দলকে নির্বাচনের মাঠে নিয়ে আসার জন্য। দ্বিতীয়ত, দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কমানোর জন্য। এখন দেখা যাক আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তে কি কি ধরনের লাভ হবে। 

আওয়ামী লীগের এই সিদ্ধান্তে দলটি যে ভাবে লাভবান হবে তার মধ্যে প্রথমত, বিরোধী দল আসার সুযোগ পাবে। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় সমালোচনা হচ্ছে যে নির্বাচন পানসে, একপেশে হয়ে যাচ্ছে, বিরোধীদল নির্বাচন বর্জন করছে। ফলে নির্বাচন গুরুত্ব হারাচ্ছে। এই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নয়। আওয়ামী লীগ এই কারণে উপজেলা নির্বাচনকে উন্মুক্ত করে দিয়েছে বলে অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করেন। এর ফলে যেটা হবে বিরোধী দল এমনকি জামায়াত তাদের প্রার্থীদেরকে স্বতন্ত্রভাবে দাঁড়াবে। কারণ এই নির্বাচনে যেহেতু কোনো দলীয় পরিচয় নেই, কাজেই একটি উপজেলার জনপ্রিয় ব্যক্তিরা সহজেই নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবেন এবং দলের শৃঙ্খলা এখানে কোন বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। 

দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগ মনে করছে, উপজেলা নির্বাচনে দলের প্রতীক ছাড়া দেয়া হলে জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোন্দল, হানাহানি তা বন্ধ হবে। কাউকে সমর্থন না দিলে যে যার মতো করে নির্বাচন করলে দলের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না এবং দলের ভিতর কোন রকম বিভক্তিও তৈরি হবে না। 

এই দুটি কারণেই মূলত দলীয় ভাবে উপজেলা নির্বাচন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং কোন প্রার্থীকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত দিয়েছে। 

তবে এই লাভের পাশাপাশি এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বেশ কিছু বড় ধরনের ক্ষতি হবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এই নির্বাচনের ফলে আওয়ামী লীগের যে ক্ষতিগুলো হবে;

প্রথমত, উপজেলা উপজেলা গুলো বিভক্ত হয়ে পড়বে। আওয়ামী লীগ যতই দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন না দেয়ার কথা বলুক না কেন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বিভিন্ন পক্ষরা তাদের পছন্দের প্রার্থীদের মনোনয়ন দেবেন। এমপিরা উপজেলাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য তার নিজস্ব মাই ম্যানকে মনোনয়ন দেবেন। আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের নিজস্ব ব্যক্তিকে মনোনয়ন দিবেন, যারা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করে জিতেছেন বা হেরেছেন তারা প্রার্থী দেবেন। এমনকি আওয়ামী লীগের তরুণ অংশ যারা ছাত্রলীগ, যুবলীগ ইত্যাদি করে এলাকায় জনপ্রিয় কিন্তু অপাঙ্‌ক্তেয় তারাও মনোনয়ন দেবে। ফলে এই নির্বাচন এখনটা খুনোখুনির রণক্ষেত্রে পরিণত হতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।

দ্বিতীয়ত, আওয়ামী লীগের নৈতিক পরাজয়। কারণ আওয়ামী লীগ যখন উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তখন এই সিদ্ধান্ত সামলোচিত হয়েছিল। এটি সঠিক নয় বলেও বিভিন্ন মহল থেকে বলা হয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ সেই সিদ্ধান্তে অটল ছিল। এখন আবার র্নিদলীয় ভাবে উপজেলা নির্বাচন করার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ তার অবস্থান থেকে সরে এলে। তার মানে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করার যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল তা ভুল ছিল।

তৃতীয়ত, এর মাধ্যমে আওয়ামী লীগ একটি বার্তা দিল যে, বিরোধী দলকে নির্বাচনের মাঠে আনা প্রয়োজন। অর্থাৎ মুখে আওয়ামী যতই বলুক না কেন কে নির্বাচনে আসলো না আসলো সেটি বড় কথা নয়, বাস্তবে নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা এবং সাবজনীনতা জন্য বিরোধী দলের প্রয়োজন। এখন দেখার বিষয় উপজেলা নির্বাচন যখন অনুষ্ঠিত হবে তখন আওয়ামী লীগের লাভ ক্ষতির ফলাফল কি দাঁড়ায়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭