এডিটর’স মাইন্ড

রাজনীতির মাঠে আবার ‘ভারত কার্ড’


প্রকাশ: 02/02/2024


Thumbnail

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি মেরুকরণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিএনপির নেতৃত্বে নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলো ভারত বিরোধিতায় মুখর হয়েছে। বিএনপির শীর্ষ নেতারা প্রায় সবাই ভারতের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে কথা বলছেন। ‘ভারতের আর্শীবাদে’ এই সরকার টিকে আছে এমন বক্তব্য দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. মঈন খান। রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, এই সরকার জনগণের নয়, ভারত-রাশিয়া-চীনের সরকার।’ বিএনপির চেয়ে একধাপ এগিয়ে তার মিত্র রাজনৈতিক দল গুলো। গণঅধিকার পরিষদের নেতা নুর ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বান জানিয়েছেন এক অনুষ্ঠানে। আর জুনায়েদ সাকী তো রীতিমতো ভারতকে হুমকি দিয়েছেন। 

দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি ভারত বিরোধী আবহ তৈরীর চেষ্টা চলছে। নির্বাচন এবং নতুন সরকার গঠিত হবার পর কিছু কিছু ঘটনা সাধারণ মানুষের নজর এড়ায়নি। যশোরের বেনাপোল সীমান্তে বিএসএফের গুলীতে প্রাণ হারিয়েছেন বিজেপির সিপাহী মোহাম্মদ রইশুদ্দিন। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, এই সুযোগে পেঁয়াজের দাম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ে সাধারণ মানুষের যখন নাভিশ্বাস অবস্থা তখন ভারতের বিভিন্ন পন্যের রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে আরো নাজুক করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এর ফলে ভারত সম্পর্কে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। এই সুযোগটাই কাজে লাগাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত। দীর্ঘ দুই দশক পর আবার বাংলাদেশে ভারত বিরোধি রাজনৈতিক আবহ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘ভারত বিরোধিতা’ এক জনপ্রিয় কৌশল। ৭৫ এর পর ভারত বিরোধিতার আড়ালে আসলে সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মান্ধতাকে উস্কে দেয়ার এক হিংস্র প্রবণতা শুরু হয়। মূলত: মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি পরিকল্পিত ভাবে সাধারন জনগণকে ভারত বিরোধিতায় উস্কে দেয়। এর পেছনে শুধু যে পাকিস্তানপন্থি রাজাকার এবং যুদ্ধাপরাধীরা ছিলো তা নয়, বাংলাদেশে ভারত বিদ্ধেষ ছড়াতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বিপুল অর্থ ব্যয় করে। রাজনীতিতে ভারত বিরোধিতার আরেক উদ্দেশ্য ছিলো আওয়ামী লীগকে ঠেকানো। ৭৫ এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে নির্মমভাবে স্বপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল আসলে বাংলাদেশকে আবার পাকিস্তান বানানোর ষড়যন্ত্র থেকেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও আওয়ামী লীগকে নি:শেষ করা যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরতরে ধ্বংস করা যায়নি। এর প্রধান এবং একমাত্র কারণ শেখ হাসিনা। ১৯৮১ সালের ১৭ মে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিতে তিনি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। এসময় শেখ হাসিনাকে ঠেকাতে ভারত বিরোধিতার নতুন রূপ আত্মপ্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ এবং শেখ হাসিনাকে ‘ভারতের দালাল’ হিসেবে চিত্রিত করে স্বাধীনতা বিরোধি শক্তি রাজনীতির মাঠে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তিকে কোণঠাসা করার কৌশল গ্রহণ করে। 

৭৫ এর পরে বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি সমান্তরাল ধারা সৃষ্টি হয়। একটি মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে, স্বাধীনতার পক্ষে। এই ধারার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ। অন্যটি স্বাধীনতা বিরোধি ধারা, যার নেতৃত্বে বিএনপি। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে মানেই ‘ভারতের দালাল’ এরকম একটি পরিকল্পিত অপপ্রচার চালানো হয় খুব কৌশলে। জামায়াত সহ স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি এই অপপ্রচারে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিজয়, বাংলাদেশের অভ্যুদয়কেই প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে। যেমনটি জামায়াত এবং যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠী ৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় করেছিল। জামায়াত ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে ভারতীয় আগ্রাসণ এবং আধিপত্যবাদ হিসেবে প্রচার করেছিল। ৭৫ এর পর ভারত বিরোধিতার আড়ালে ছিলো মুক্তিযুদ্ধ এবং বাংলাদেশের অভ্যুদ্বয়কে অস্বীকার করার চেষ্টা। বিএনপি সহ মুক্তিযুদ্ধে বিরোধী এই সব রাজনৈতিক দলগুলোর ভারত বিরোধি এজেন্ডা বাস্তবায়নের পেছনে মদদ দাতা ছিলো পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। তারা ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের প্রশিক্ষণের ঘাটি বানায় বাংলাদেশে। বাংলাদেশকে ব্যবহার করে ভারতকে অস্থির করে তোলার চেষ্টা চলে।

৮১ সালের পর থেকে আওয়ামী লীগ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন নতুন করে শুরু করে। ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে জিয়ার নিহত হবার পর মঞ্চে আসেন এরশাদ। ততদিনে বাংলাদেশে ভারত বিরোধী একটি আবহ তৈরী হয়ে গেছে। ভারত নিয়ে এরশাদ দ্বিমূখী অবস্থান নেন। মুখে ভারত বিরোধিতা আর গোপনে ভারতের অনুগ্রহ লাভ এটাই ছিলো এরশাদের নীতি। এরশাদের ক্ষমতা দখলের পরপরই আওয়ামী লীগ অবৈধ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন শুরু করে। এই আন্দোলনের মাধ্যমেই আওয়ামী লীগের পূণ:জাগরণ ঘটে। কিন্তু এসময়ে আওয়ামী লীগের কিছু নেতার মধ্যে আদর্শিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। অনেক নেতাই অসাম্প্রদায়িক চেতনার বদলে নিজেদের কট্টর মুসলমান প্রমানের চেষ্টা করেন। অনেক নেতাই টিকে থাকার জন্য প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতা নীতি গ্রহণ করেন। আওয়ামী লীগ মানেই ভারতের অন্ধ সমর্থক এই ভাবনা ভুল প্রমাণের চেষ্টা দেখা যায় আওয়ামী লীগের অনেক নেতার মধ্যে। ৮২ থেকে ৯০ দীর্ঘ- ৯ বছরে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে আবারও ঘুরে দাঁড়ায় আওয়ামী লীগ। ‘কিন্তু আওয়ামী লীগ ভারতীয় অনুগত’ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশ ভারতের দখলে চলে যাবে’-এরকম সমালোচনা এবং অপপ্রচারের হাত থেকে আওয়ামী লীগ মুক্তি পায়নি। বরং ৯১ এর নির্বাচনে বিএনপি এবং জামায়াতের প্রধান হাতিয়ার ছিলো এসব বক্তব্য। বেগম জিয়া ঐ নির্বাচনে প্রায় সব জনসভায় বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলে দেশ ভারতের দখলে চলে যাবে। ফেনী পর্যন্ত ভারত দখল করবে।’ এসব গোয়েবলীয় মিথ্যাচার অনেক মানুষ বিশ্বাস করেছে। ৯১ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পরাজয়ের যে সব কারণ ছিলো তার মধ্যে নি:সন্দেহে ‘ভারত কার্ড’ অন্যতম। জিয়া-এরশাদের অনুসরনে বেগম জিয়াও মুখে ভারত বিরোধিতা আর গোপনে ভারতের কাছে নি:শর্ত আপোষের নীতি অনুসরন করেন।

তবে ৯০ এর দশকে এসে বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ভারত বিরোধিতার উত্তাপ কমতে শুরু করে। এর পেছনে বৈশ্বিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক ইস্যু জড়িত ছিলো। বিশ্বের দরজা খুলে যায়। তরুণরা বুঝতে পারে ভারত বিরোধিতা অর্থহীন। রাষ্ট্র হিসেবে পাকিস্তানের ব্যর্থতা আর ভারতের গণতান্ত্রিক বিকাশ মানুষের ভুল ভাঙ্গতে সাহায্য করে। স্যাটেলাইট যুগে ভারতীয় চলচ্চিত্র, গান বাংলাদেশে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে। অবাধ বাণিজ্যের যুগে আস্তে আস্তে আমরা ভারত নির্ভর হতে থাকি। ঘুম থেকে উঠে ভারতীয় কোলগেটে দাঁত ব্রাশ থেকে রাতে ভারতীয় গান শুনে ঘুমানোর মাধ্যমে আমাদের চৈতন্যে ভারত বাসা বাঁধে। চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া, উচ্চশিক্ষায় ভারত মুখী হবার প্রবণতা বাড়তে থাকে। এসবই জনগণকে ভারত বিদ্ধেষ থেকে বের করে আনে। এসময় ভারতও বাংলাদেশ নিয়ে আরও মনোযোগী হয়। ভারত বিরোধীতা বন্ধ, বাংলাদেশে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা দমনের জন্য প্রতিবেশী দেশটি বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল গুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উদ্যোগ নেয়। শুধু আওয়ামী লীগ নির্ভরতা থেকে সরে আসার ফলে রাজনীতির মাঠে ভারত বিরোধী আওয়াজ কমে যায়। আস্তে আস্তে ভারতীয় দূতাবাসের আড্ডায় জামায়াতের নেতাদেরও সরব উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ৭১ এর পরীক্ষিত বন্ধু ভারত এসব করে তেমন লাভবান হয়নি। মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো প্রকাশ্যে ভারত বিরোধিতা বন্ধ করলেও, গোপনে পাকিস্তানের স্বার্থ রক্ষার কাজটিই করে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সীমান্ত অঞ্চল গুলো ভারতীয় বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অভায়ারন্যে পরিণত হয়। এমনকি ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তৎপরতা অব্যাহত থাকে। এই বাস্তবতায় ভারত বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে আরও মনোযোগী হয়। 

২০০১ এর নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটকে ক্ষমতায় আনতে ভারতের ভূমিকা ছিলো ওপেন সিক্রেট। এসময় বাংলাদেশে ভারতীয় কূটনীতির মূল প্রতিপাদ্য ছিলো-ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী, বিশেষ কোন দলের সঙ্গে নয়। ২০০১ সালে বাংলাদেশে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এবং পাকিস্তানের আইএসআই এক সাথে মিলে বিএনপিকে ক্ষমতায় আনে। কিন্তু এটা যে ভারতের ভুল কূটনীতিত ছিলো এটা বুঝতে তাদের বেশী সময় লাগেনি। মুখে ভারত বন্দনা করলেও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে পাকিস্তানি এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু করে। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র এবং অর্থ সরবরাহের প্রধান রূটে পরিণত হয় বাংলাদেশ। ১০ ট্রাক অস্ত্রের ঘটনা তার বড় প্রমাণ। এরকম পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ বিরাজনীতিকরণের পক্ষে অবস্থান নেয় ভারত। আওয়ামী লীগ-বিএনপিকে বাদ দিয়ে সুশীলদের প্রতি হাত বাড়ায় বিশ্ব ক্রমশ: প্রভাবশালী হয়ে ওঠা দেশটি। যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে সঙ্গে নিয়ে ২০০৭ সালে অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে এক-এগারো ঘটানোর ক্ষেত্রে ভারত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী, বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশটি বুঝতে পারে এধরনের অনির্বাচিত সরকার জনগণের আস্থা অর্জনে অক্ষম। 

২০০৮ সাল থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের ভূমিকা এবং প্রভাব প্রকাশ্য। যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নও আঞ্চলিক স্থিতিশীলততার স্বার্থে এই অঞ্চলের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব ভারতের ওপর অর্পণ করে। এই সময় বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বেশ কিছু ঘটনা এঅঞ্চলে ভারতের প্রভাব বাড়িয়ে দেয়। প্রথমত; অর্থনীতিতে ভারতের বড় সাফল্য আসে। বিশ্বে প্রভাবশালী ও ক্ষমতাধর দেশ হিসেবে হিসেবে সামনে দাঁড়ায় দেশটি। দ্বিতীয়ত, ভারতের প্রধান শত্রু পাকিস্তান ক্রমশ একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হতে থাকে। দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতা এবং লণ্ঠনতন্ত্র পাকিস্তানকে দেউলিয়া রাষ্ট্রের দ্বার প্রান্তে নিয়ে যায়। দেশটি শীর্ষ পর্যায়ের অসততা এবং মিথ্যাচার আন্তর্জাতিক বিশ্বাসযোগ্যতা ও গ্রহণযোগ্যতাও নষ্ট করে দেয়। ভারতের চেয়ে যোজন যোজন দুর পিছিয়ে যাওয়া পাকিস্তান প্রতিযোগিতা করার সামর্থ্য টুকুও হারায়। তৃতীয়ত, চীনকে ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভারত নির্ভরতা বাড়ে। সব কিছু মিলিয়ে বিশ্বে অন্যতম প্রভাবশালী এবং ক্ষমতাধর রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের উত্থান ঘটে। এর ফলে বাংলাদেশে ভারতের প্রভাব বাড়ে। অন্যদিকে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে আওয়ামী লীগ ভারতের সাথে আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক স্থাপনে উদ্যোগী হয়। ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ বলে দেন বাংলাদেশের মাটি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের, সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। এটাই দুদেশের সম্পর্কের টার্নিং পয়েন্ট। দুই দেশ অমীমাংশিত সমস্যা গুলো সমাধানের উদ্যোগ নেয়। আস্থা আর বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরী করে। এ অবস্থায় ভারত যেমন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতার নামে আওয়ামী লীগকেই ক্ষমতায় দেখতে চায়। তেমনি আওয়ামী লীগেরও ভারত নির্ভরতা বাড়ে। এবারের নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ মনোযোগ ছিলো। আওয়ামী লীগের ব্যাপারে তাদের নেতিবাচক অবস্থান ছিলো খোলামেলা। মার্কিন ভূমিকাকে নিস্ক্রিয় করতে ভারত প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছিল। এনিয়ে তারা কোন লুকোচুরি করেনি। ৭ জানুয়ারির নির্বাচন করার ক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা কোন গোপন বিষয় নয়। ভারতের এই অবস্থান প্রমাণ করে যে, বাংলাদেশ নিয়ে তারা আর কোন এক্সপেরিমেন্টে যেতে চায় না। ভারতের জন্যই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ।

কিন্তু ভারতকেও বুঝতে হবে, বাংলাদেশের জনগণ স্বাধীনতা প্রিয়। রক্ত দিয়ে তারা এই দেশ স্বাধীন করেছে। ভারতের সঙ্গে এদেশের জনগণ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক চায়। জনগণ ভারতের ৭১ এর ভূমিকার জন্য স্মরণ করে। বাংলাদেশের উন্নয়নে ভারতের অবদানকে স্বীকার করে। কিন্তু ভারতকে ‘বিগ ব্রাদার’ হিসেবে দেখতে চায় না। ভারতের কর্তৃত্ব পছন্দ করে না। সীমান্ত হত্যা, হুটহাট পেঁয়াজ, চিনি রপ্তানির নিষেধাজ্ঞার মতো স্পর্শকাতর ভারতীয় সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের জনগণের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। জনগণের মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করে। ভারতকে মনে রাখতে হবে, জনগণের সঙ্গে সম্পর্কটাই আসল। মালদ্বীপ, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার জনগণ কেন ভারত বিরোধী হয়ে উঠলো, তার কারণ নিশ্চয়ই ভারতের থিঙ্ক ট্যাঙ্করা গবেষণা করেছেন। বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে যেন এরকম মনোভাব তৈরী না হয় সেজন্য ভারতকে সচেতন থাকতে হবে। বাংলাদেশের জনগণকে আবার ভারত বিদ্বেষী করার চেষ্টা চলছে। ২০০৯ থেকে এপর্যন্ত সীমান্তে ৩০০ জনের বেশী বাংলাদেশী মারা গেছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধের জন্য কম কথা হয়নি। আশ্বাসও অনেক দেয়া হয়েছে। তারপরও কেন এসব হচ্ছে। ফেলানী কিংবা রইশুদ্দিনের মৃত্যু সারাদেশের মানুষকে ক্ষুদ্ধ করে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সব সময় বলেন ‘প্রতিবেশী প্রথম।’ সব কিছু বদলে ফেলা যায়, কিন্তু প্রতিবেশী বদলানো যায় না। প্রতিবেশী যদি প্রথম হবে তাহলে সংকটে কেন প্রতিবেশী পাশে দাঁড়াবে না। বাংলাদেশ রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার আওতায় না এলে ভারতের কি ক্ষতি? বাংলাদেশীরা কেন ই-ভিসা পাবে না? সীমান্ত হত্যা কেন বন্ধ হবে না এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে ভারতকেই। ভারত আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু। কিন্তু বিশ্বের এই ক্ষমতাধর দেশকে বাংলাদেশের জনগণের হৃদয় জয় করতে হবে বন্ধুত্ব দিয়েই, ‘দাদাগিরি’ করে নয়।

সৈয়দ বোরহান কবীর, নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত
ই-মেইল: poriprekkhit@yahoo.com


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭