ইনসাইড পলিটিক্স

কার ইশারায় রওশনপন্থিরা মাঠে


প্রকাশ: 03/02/2024


Thumbnail

গতকাল শুক্রবার আকস্মিকভাবে জাতীয় পার্টির রওশন এরশাদ পন্থিরা কাকরাইলে জাতীয় পার্টির অফিস দখল করে নিয়েছিল। তবে এই দখলদারিত্ব বেশিক্ষণ টেকেনি। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার জি এম কাদের পন্থিরা সেই অফিস পুনরুদ্ধার করে এবং অফিসে তালা লাগিয়ে দেয়। তবে রওশন পন্থিরা এখনও তাদের অবস্থান সংহত করার চেষ্টা করছে। বিভিন্ন জাতীয় পার্টির নিষ্ক্রিয় নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সামনের দিনগুলোতে তারা আরও বড় ধরনের শোডাউন করবে বলেও ধারণা করা হচ্ছে। 

আগামী মার্চে রওশন পন্থিরা জাতীয় সম্মেলন ডেকেছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে তারা জি এম কাদেরকে দল থেকে পুরোপুরি বাদ দেবে এমন পরিকল্পনাও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে রওশন পন্থিরা জিএম কাদের এবং জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়েছে এবং রওশন এরশাদ নিজেকে চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে। যদিও জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু রওশন এরশাদের এই সিদ্ধান্তকে হাস্যকর বলেছেন এবং এ ধরনের সিদ্ধান্ত গ্রহণের এখতিয়ার তার নাই  বলেও ঘোষণা করেছেন। কিন্তু জাতীয় পার্টির নেতারা মনে করছেন, রওশন পন্থিরা স্ব উদ্যোগে, স্ব ইচ্ছায় এ ধরনের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। তাদের পেছনে কোন শক্তি রয়েছে। সরকারের দিকে ইঙ্গিত করে তারা বলছে, জাতীয় পার্টিকে চাপে রাখার জন্যই সরকার রওশন পন্থিদের মাঠে রেখেছে। 

তবে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতারা মনে করছেন, রওশন এরশাদ আসলে দেনা পাওনার হিসেব মেটানোর জন্যই আলাদা অবস্থান গ্রহণ করেছেন। শুধু রওশন এরশাদ না, গত নির্বাচনে যারা বঞ্চিত হয়েছেন যাদের মধ্যে এবং যারা পরাজিত হয়েছেন তারা সবাই জিএম কাদেরের বিরুদ্ধে এককাট্টা হয়েছেন। এই অংশ কম নয়। ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিপর্যয় ঘটে। ২৬ টি আসনে তাদেরকে আওয়ামী লীগ ছেড়ে দিলেও তারা মাত্র ১১ টি আসনে জয় লাভ করতে সক্ষম হন। অনেকে মনে করেন, জি এম কাদের এই নির্বাচন নির্বাচন পরিচালনার নেতৃত্ব দিতে সীমাহীন ব্যর্থতা পরিচয় দিয়েছেন। 

জাতীয় পার্টির মধ্যে দু টি অংশ রয়েছে। একটি অংশ মনে করে যে, ৭ জানুয়ারি নির্বাচন জাতীয় পার্টির বর্জন করা উচিত ছিল। অন্য অংশ মনে করে নির্বাচনের জন্য যে সমস্ত অর্থ এবং অন্যান্য আনুষাঙ্গিক জিনিসপত্র পাওয়া গিয়েছিল তা জিএম কাদের এবং তার মিত্ররা তছরুপ করেছেন। ফলে প্রার্থীরা নির্বাচনের প্রচারণা নিয়ে অসহায় হয়েছেন। তারা ঠিক মতো টাকাপয়সা পাননি এবং এই কারণেই নির্বাচনে বিপর্যয় হয়েছে। যদিও জিএম কাদের নির্বাচনের পর এটিকে একটি নিয়ন্ত্রিত নির্বাচন হিসেবে বর্ণনা করেছেন। তার মতে, যেখানে সরকার চলছে সেখানে নিরপেক্ষ নির্বাচন হয়েছে, যেখানে সরকার যাকে জেতাতে চেয়েছে তাকে জিতিয়েছে। এই সমস্ত সমালোচনার পরও জি এম কাদের জাতীয় সংসদে বিরোধী দলের নেতা হিসাবে যোগ দিয়েছেন এবং সংসদ কার্যক্রমে তিনি বলেছেন, এত স্বল্প সংখ্যক সদস্য দিয়ে সত্যিকারের বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করা সম্ভব নয়। 

বিরোধী দল শূন্যতা নিয়ে তিনি তার উদ্বেগের কথাও বলেছেন। আর জি এম কাদেরের ভূমিকা রহস্যময়। জি এম কাদেরকে বিশ্বাস করা যায় না বা আস্থায় দেওয়া যায় না এরকম একটি ভাবনা থেকেই জাতীয় পার্টিতে রওশন এরশাদ পন্থীদের উত্থান বলে অনেকে মনে করছেন। তারা মনে করছেন, রওশন এরশাদ পন্থিরা সবসময় জি এম কাদেরকে চাপে রাখবে এবং এই চাপে থাকার কারণে জি এম কাদের সরকারের নাগালের বাইরে যেতে পারবেন না। তবে এই ধারণাকে উড়িয়ে দিয়েছেন অনেকে। তারা বলছেন, জি এম কাদেরের সঙ্গে সরকারের বিরোধিতা যাই থাকুক না কেন, রওশন পন্থিদেরকে ব্যবহার করে জি এম কাদেরকে চাপে রাখার কৌশল সরকার কোন ভাবে নেবে না। বরং জি এম কাদের সংসদে যাদেরকে নিয়ে আছেন, তাদের মধ্যেই অনেকে আওয়ামী লীগের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। যেমন আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বা আরও কয়েকজন এমপি আছেন, যাদের সাথে সরকারের আস্থা এবং বিশ্বাসের সম্পর্ক রয়েছে। তাহলে রওশন পন্থিদেরকে কারা মাঠে নামল? 

কেউ কেউ মনে করছেন, রওশন এরশাদ যেন সংরক্ষিত আসনে এমপি হতে পারেন তা নিশ্চিত করার জন্যই রওশন পন্থিরা মাঠে নেমেছেন। জি এম কাদেরের অংশ সংরক্ষিত আসনে যে দুইজন সংসদ সদস্য হবেন তাদের চূড়ান্ত করে ফেলেছেন। এদের মধ্যে একজন ঢাকা-১ আসন থেকে নির্বাচন করে পরাজিত সালমা ইসলাম। অন্যজন শেরীফা কাদের।  শেরীফা কাদেরও ঢাকা-১৮ থেকে নির্বাচন করে পরাজিত হয়েছেন। কাজেই এই দুজনকে সংসদ আনতে চান জি এম কাদের পন্থিরা। কিন্তু রওশন পন্থিরা এই মতের সঙ্গে একমত নন। সালমা ইসলামের ব্যাপারে তাদের আপত্তি নেই। কিন্তু শেরীফা কাদেরের বদলে রওশন এরশাদ যেন সংসদে আসেন এটিই তাদের ইচ্ছা। আর এই অভিপ্রায়ের কারণেই রওশন পন্থিরা এখন নতুন করে আন্দোলন করছে এবং শক্তি প্রদর্শন করছে। এটি আসলে জি এম কাদেরের ওপর এক ধরনের চাপ সৃষ্টি। যে চাপের ফলে তিনি রওশন এরশাদকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দিতে বাধ্য হবেন। 



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭