প্রকাশ: 04/02/2024
অর্ধশত বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারতের সঙ্গে
তিস্তা নদীর পানিবণ্টন নিয়ে একটি চুক্তিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেও নানা কারণে এর পথ খুঁজে
পায়নি বাংলাদেশ। ২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরও
শেষ মুহূর্তে ওই চুক্তি হয়নি। গত ২০১৪ সাল থেকে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি প্রত্যাহার
করছে। শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে খাঁ খাঁ কিন্তু বর্ষা নামলেই উজানের পানির চাপে তিস্তা
ভয়াল রুপ ধারণ করে। আকস্মিক বন্যা, খরা, ভাঙনসহ নানাভাবে ক্ষতি হয় অন্তত ১ লাখ কোটি
টাকার সম্পদ। বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের আশায় তিস্তা মহাপরিকল্পনা
বাস্তবায়নে বহু আগেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদক্ষেপ নিলেও এটি ঝুলে আছে গত ৮ বছর
ধরে।
সম্প্রতি শেখ হাসিনার সরকার টানা চতুর্থ মেয়াদে
ক্ষমতায় আসার পর ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত প্রকল্পটির ব্যাপারে আবারো আগ্রহ প্রকাশ
করেছেন। কিন্তু চীনের এ আগ্রহে সায় দেয়ার ফলাফল কি ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্যে কাল
হয়ে দাঁড়াবে? বন্ধুদেশ ভারতের চক্ষুশূল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ?
শুরু থেকেই তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীনের আগ্রহকে
বরাবরই সন্দেহের চোখে দেখে এসেছে ভারত। ভারত মনে করে, চীন তাদের বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের
মাধ্যমে ভারতকে চারপাশ থেকে ঘিরে ফেলতে চায়। চীন চায় ভূ-কৌশলগতভাবে গুরুত্ব বহন করে
এমন সব প্রকল্প দিয়ে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে আধিপত্য বিস্তার করতে। এ কারণেই এমন
সব প্রকল্প নিয়ে চীন 'অতিরিক্ত আগ্রহ' প্রকাশ করে। এছাড়া ভারত ও চীনের মধ্যকার সীমান্ত
উত্তেজনা, দ্বন্দ্ব-মতভেদ তো আছেই।
তাছাড়াও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জন্য তিস্তা
নদীর পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা প্রকল্পের আওতায় নদী খনন করে গভীরতা বাড়ানো,
সারা বছর নৌ চলাচলের ব্যবস্থা করা, নদীর দুই তীরে স্যাটেলাইট শহর নির্মাণ…এসব করতে
গিয়ে ভারত বেশ কিছু সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে, যা তারা এড়াতে চায়। এ কারণেই এ প্রকল্পের
৮ বছর ধরে ঝুলে থাকা।
এ প্রকল্পের সাথে জড়িত হলে না চাইলেও ভারতের
এখানে বিনিয়োগ করতে হবে। মূলত এই বিনিয়োগ এড়ানো হোক অথবা তিস্তা ইস্যু সমাধান হয়ে গেলে
বাংলাদেশের ওপর যে ভারতের একরকমের একচেটিয়া আধিপত্য রয়েছে সেটি হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার
আশঙ্কা হোক, সব মিলিয়েই ভারত চায় না এ প্রকল্পের বাস্তুবায়ন। আর বর্তমানে এই প্রকল্প
নিয়ে আবারও আগ্রহ প্রকাশ করে আগুনে ঘি ঢেলে দেয়ার মত প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে চীন।
যা ভারতের কখনোই পছন্দ হবে না, যা বলাই-বাহুল্য।
এদিকে চীন বেশ জোরেশোরেই এ প্রকল্প নিয়ে তার
আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবার। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দুই সপ্তাহ আগে ঢাকায় নিযুক্ত
চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছিলেন, নির্বাচনের পর তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু হবার বিষয়ে তিনি
আশাবাদী। নির্বাচনের পরে চীনের রাষ্ট্রদূত তার সেই আগ্রহ চাপা রাখেননি।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সাথে এক
বৈঠকের পর রাষ্ট্রদূত সাংবাদিকদের বলেন, বাংলাদেশ চাইলে তিস্তা প্রকল্পের কাজ শুরু
করার বিষয়ে তৈরি আছে চীন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের দিক থেকে প্রকল্পের প্রস্তাব পেলে
চীন সহযোগিতা দেবে।
বাংলাদেশের মানুষের জন্য বহু আকাঙ্খিত এই
তিস্তা প্রকল্প বা তিস্তা মহাপরিকল্পনা। মোদ্দা কথা হচ্ছে– তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প
ভূ-রাজনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু এ প্রকল্প নিয়ে ভারত এবং
চীন এহেন পরস্পরবিরোধী অবস্থানে থাকায় চাইলেও এ নিয়ে এগোতে পারছে না বাংলাদেশ। আর কোনোভাবে
যদি নিজ দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের চরম দুর্ভোগের কথা ভেবে বাংলাদেশ এ প্রকল্প নিয়ে
এগোয় তাতে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে কি প্রভাব পড়তে পারে সেটি নিয়ে বাড়ছে ধোঁয়াশা।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭