এডিটর’স মাইন্ড

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা আছে, কাজ নেই


প্রকাশ: 05/02/2024


Thumbnail

পুলিশ কনস্টেবল পদে চাকরির আবেদন করেছে গ্রামের এক তরুণ। কম্পিউটারের দোকানে যখন সে অনলাইনে ফরম ফিলাপ করছিল, তখন ওই দোকান থেকেই তাকে বলা হয়েছিল ঘুষ ছাড়া চাকরি হবে না। বেচারা তাই চাকরি পেতে ধরনা দেয় স্থানীয় এমপির কাছে। সংসদ সদস্য খোঁজখবর নিয়ে জানলেন, পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া একেবারে স্বচ্ছ। স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কিছু ধাপ অতিক্রম করলে চাকরি হয়। তারপরও ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্তৃপক্ষকে ছেলেটির নাম এবং আবেদনপত্রের কপি পাঠিয়ে দিলেন। অনুরোধ করলেন, দেখার জন্য। সংসদ সদস্য চাকরি প্রার্থীকে আশ্বস্ত করে বিদায় দিলেন। সংসদ সদস্যের বাড়ি থেকে বেরিয়ে তরুণ আশাহত, বিরক্ত। এমপি সাহেব এত খাতির করলেন, এসপিকে ফোন করে দিলেন, তারপরও ছেলেটি খুশি নয় কেন? জিজ্ঞেস করলেই ছেলেটি কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলল, ‘এমপি সাহেব তো টাকার কথা কইলো না। টাকা ছাড়া আবার চাকরি হয় নাকি।’ আমি স্তম্ভিত। আমার এ অভিজ্ঞতার কথা বলছিলাম, আওয়ামী লীগের নেতা, সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মির্জা আজমকে। তিনি বললেন, ‘শুধু এটুকুই নয়। এরকম চাকরি প্রার্থীরা পরে যাবে দালালের কাছে। দালালকে টাকা না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি পাবে না।’ মির্জা আজম বলছিলেন, ‘যতক্ষণ না সে কাউকে টাকা দেবে ততক্ষণ সে চাকরি পাবে এমন আশ্বাসে বিশ্বাস করবে না।’

ঘুষ বা দুর্নীতি ছাড়া চাকরি হয় এটা বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ বিশ্বাস করে না। আমরা যেমন বাতাসের মধ্যে বসবাস করি। প্রতিমুহূর্তে শ্বাস-প্রশ্বাস নেই; ঠিক তেমনি বাংলাদেশে এখন আমরা দুর্নীতির মধ্যে বসবাস করছি। নিয়মনীতির মধ্যে কিছু হয় এটা দেশের খুব কম মানুষই মনে করে। বাজারে সিন্ডিকেট দুর্নীতি। ব্যবসায়ে দুর্নীতি। হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে ঘুষ দিতে হয়। ভালো স্কুলে সন্তানকে ভর্তি করাতে পেছনের দরজা দিয়ে তদবির করতে হয়। চাকরি পেতে ঘুষ দিতে হয়। পদোন্নতি জন্য ঘুষ লাগে। ব্যাংকের ঋণ পেতে উৎকোচ লাগে। বিপদে থানায় গিয়ে সাহায্য চাইলে টাকা-কড়ি ফেলতে হয়। ইদানীং বিভিন্ন পদক পেতেও নাকি পকেটে হাত দিতে হয়। কেউ কেউ হয়তো বলবেন, রাজনীতি করাই ভালো। রাজনীতিবিদরা ক্ষমতাবান। এখানে ঘুষের বালাই নেই। রাজনীতি করলে বরং শর্টকাটে বড়লোক হওয়া যায়। কিন্তু এখন ক্ষমতাসীন বা বিরোধী দল যে দলই করুন, টাকা লাগবে, ঘুষ লাগবে। দুর্নীতি ছাড়া পদ পাবেন না। বড় বড় রাজনৈতিক দলে কমিটি বাণিজ্য এখন ওপেন সিক্রেট। মনোনয়নবাণিজ্য নিয়ে এখন কথাবার্তা বলতে কেউ শরম পান না। জন্ম থেকে মৃত্যু—দুর্নীতির আবর্তে আমরা। আপনার সন্তান জন্ম নিল। জন্মনিবন্ধন করতে যাবেন, টাকা ঢালুন দ্রুত পেয়ে যাবেন। মৃত্যু সনদ পেতেও আপনার প্রতি কেউ দয়া দেখাবে না। এজন্যও অন্য পথে যেতে হবে। ঢাকা শহরে কবরে জায়গা পেতেও অন্য পথ লাগে। সাধারণ মানুষ এখন এসব নিয়ে মাথা ঘামায় না। কাজের বিনিময়ে ঘুষ কর্মসূচি বরং অনেকের পছন্দ। একে এখন মানুষ বলে ‘স্পিড মানি’। চাকরি পেতে, টেন্ডার পেতে, ব্যাংক ঋণ পেতে, সরকারি সেবা পেতে ঘুষ লাগবে, এটাই স্বাভাবিক। যদি কেউ নিজ যোগ্যতায় কোনো ‘স্পিড মানি’ ছাড়া চাকরি পান তাহলে তা বিরাট খবর। ‘ঘুষ ছাড়াই চাকরি পেলেন...’ পত্রিকার পাতায় ফলাও করে তার হাস্যোজ্জ্বল ছবির সঙ্গে সংবাদ বের হয়। কেউ প্রশ্ন করে না এটাই তো স্বাভাবিক, এটা আবার খবর হয় কীভাবে? অবশ্য এসব স্পিড মানি বা ঘুষকে আজকাল কেউ অপরাধ মনে করেন না। ‘পরার্থপরতার অর্থনীতি’ গ্রন্থে ড. আকবর আলি খানের একটি নিবন্ধের শিরোনাম ‘শুয়োরের বাচ্চাদের’ অর্থনীতি। ওই নিবন্ধে ড. খান, অক্সফোর্ডে স্নাতক ডিগ্রি নিয়ে ভারতীয় সিভিল সার্ভিসে যোগদান করা মাইকেল ক্যারেটের স্মৃতিকথা উদ্ধৃত করেছেন। মাইকেল ক্যারেট যখন আসানসোল মহকুমা প্রশাসক ছিলেন, সে সময়ে একজন পাঞ্জাবি ঠিকাদারের সঙ্গে তার সাক্ষাৎকারের ঘটনা তার স্মৃতি কথাতে লিপিবদ্ধ করেছেন এভাবে—“হুজুর হচ্ছেন মহানুভব ব্যক্তি। এই দুর্ভাগা দেশে তিন কিসিমের লোক আছে। আছেন সজ্জন যাঁরা ঘুষ খান না, যেমন আপনি। আছে বদলোক যারা ঘুষ খায় এবং (আমার চোখের দিকে চেয়ে)। আছে ‘শুয়োরের বাচ্চারা’ যারা ঘুষ নেয় অথচ ঘুষ প্রদানকারীকে কোনো সাহায্য করে না।”

এখন এই বাংলাদেশেও অবশ্য তিন ধরনের লোক আছেন। কিন্তু যারা ঘুষ খান না, তাদের এখন আর সজ্জন মনে করা হয় না। বরং এখন মনে করা হয়, যিনি ‘ঘুষ’ নেন না তিনি অযোগ্য, অপদার্থ, কোনো কাজ করেন না। পরিবারেও ঘুষ না খাওয়া ব্যক্তিটির কোনো সম্মান নেই। পরিবারে তিনি রীতিমতো ‘বোকা’ আহম্মক। ঘুষ না খাওয়ার কারণে তার বিত্তহীনতা রীতিমতো অপরাধ। কাজেই ঘুষ না খাওয়া ব্যক্তিরা এ জামানায় রীতিমতো ‘গণশত্রু’। আর ‘শুয়োরের বাচ্চা’দের সংখ্যাও এখন বেড়েছে। সব থেকে ভালো তারাই যারা ঘুষ নেন এবং কাজ করে দেন। সমাজে এদের ব্যাপক সুনাম। এরাই এখন সজ্জন ব্যক্তি।

তবে যে কোনো সাধারণ নাগরিককে এসব দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন করলে, তারা বলবেন—‘এসব কিছুই নয়। এটা বরফ স্তূপের উপরিভাগ মাত্র।’ বড় বড় পুকুর চুরি, রাষ্ট্রীয় লুণ্ঠন বন্ধ না করলে, এসব বন্ধ হবে না। যারা দুর্নীতি করে দেশকে খোবলা বানিয়ে ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিলে এসব দুর্নীতি আপনাআপনি বন্ধ হয়ে যাবে।

ব্যাংক ঋণের নামে কারা রাষ্ট্রীয় ব্যাংকগুলো খালি করে দিয়েছে, তাদের আমরা সবাই চিনি। তাদের নাম হরহামেশাই পত্রিকার পাতায় স্বর্ণাক্ষরে ছাপা হয়। টানা চতুর্থ মেয়াদে আওয়ামী লীগ সরকার। চার মেয়াদে তিনজন অর্থমন্ত্রী পেয়েছে বাংলাদেশ। তারা প্রত্যেকেই দায়িত্ব নিয়ে খেলাপি ঋণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে শুধু কথাই হয়েছে, কাজ হয়নি। হলমার্ক কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক দুর্নীতি, বিসমিল্লাহ গ্রুপের ব্যাংক লুট নিয়ে কিছুদিন হৈচৈ হয়েছে। টাকা উদ্ধার হয়নি। রাষ্ট্রীয় ব্যাংকের টাকা লুট করে (ঋণ নিয়ে) কোনো রাজনৈতিক দলে যোগ দিন অথবা বিদেশে চলে যান। ব্যস, কেউ আপনার টিকিটি ধরতে পারবে না।

বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ অর্থ পাচার। রিজার্ভ কমে যাওয়া, ডলার নিয়ে হাহাকার। এসবের প্রধান কারণ আসলে অর্থ পাচার। দেশের অর্থ কারা বিদেশে পাচার করেছে সবাই জানে। বিদেশে কারা বিপুল বিত্তের পাহাড় গড়েছে, সরকারের অজানা নয়। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেছিলেন, ‘কানাডায় অনেক বাংলাদেশি বাড়ি কিনেছেন। আমরা মনে করলাম, রাজনীতিবিদরাই বোধহয় এসব বাড়িঘরের মালিক। কিন্তু খোঁজ নিয়ে দেখলাম, আমলাদেরই সম্পদ বেশি।’ তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের পর দেশে হৈচৈ পড়ে, বিষয়টি হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়ায়। ড. মোমেন বলেন, ‘আমরা নাম প্রকাশ করব।’ কিন্তু পাঁচ বছর পেরিয়ে গেল, এখন পর্যন্ত দেশের মানুষ জানতে পারেনি, কানাডার বেগমপাড়ায় কারা অবৈধ সম্পদের মালিক। সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের টাকার বাড়বাড়ন্তের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে আলোচিত। কিন্তু এসব চিহ্নিত অর্থ পাচারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, তাদের তালিকা প্রাপ্তির উদ্যোগও নেওয়া হয়নি। ‘ট্যাক্স হ্যাভেন’ বলেখ্যাত দেশগুলোতে কারা বিনিয়োগ করেছেন সে তথ্য আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। এসব চিহ্নিত অর্থ পাচারকারীর বিরুদ্ধে শুধু কথাই হয়েছে, ব্যবস্থা হয়নি। সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, সংযুক্ত আরব আমিরাতে গেলেই শোনা যায় বাংলাদেশিদের বিত্তবৈভবের খবর। প্রবাসী বাঙালিরা দর্শনীয় স্থান দেখানোর মতো করে দেখান কোনটা কার বাড়ি, কার শপিং মল। সরকার কেন এসব অর্থ পাচারকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারে না?

আমলাদের সম্পদ বিবরণী প্রকাশের সিদ্ধান্ত নেওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেল। আমলারা এই নির্দেশ অবলীলায় বুড়ো আঙুল দেখাচ্ছেন। আমলাদের দুর্নীতির বিচারের পথ বন্ধ করা হয়েছে, আইন করে। গত বছর ধরেই আমলাতন্ত্রের কাছে সরকার অসহায় আত্মসমর্পণ করছে কেন?

এসেনসিয়াল ড্রাগের জমি কেনা নিয়ে দুর্নীতি কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য জমি কেনায় অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে কথা হয়েছে, কাজ হয়নি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বদলে যারা দুর্নীতি চিহ্নিত করেছেন, তাদের বদলি করা হয়েছে। বর্তমান সরকারকে এ দেশের জনগণ ২০০৮ সালে বিপুল ভোটে নির্বাচিত করেছিল দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদের অংশ হিসেবে। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াতের দুর্নীতি লুটপাটে অতিষ্ঠ হয়েছিল এ দেশের মানুষ। বিএনপি ‘হাওয়া ভবন’ তৈরি করে দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিয়েছিল। সরকারের ভেতর আরেকটি সরকার তৈরি হয়েছিল সেই সময়। যার নাম ‘হাওয়া ভবন’। ২০০৮-এ আওয়ামী লীগের ভূমিধস বিজয়ের প্রধান কারণ ছিল তারেক রহমান এবং তার বন্ধুদের লুণ্ঠন। কিন্তু গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ তারেক রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুনদের দুর্নীতির বিচার কতটুকু করতে পেরেছে? বিএনপি আমলে সিএনজি কেলেঙ্কারি, খাম্বা দুর্নীতির বিচার হলো না কেন? বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে যারা হাওয়া ভবনে নিয়মিত যাতায়াত করত, দুর্নীতি ও লুটপাটের মূল হোতা ছিল, তাদের কেউ কেউ এখন এই সরকারেরও ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছে। এরাই এসব দুর্নীতির বিচারের পথে বাধা। হাওয়া ভবনের রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় দুর্নীতির বিচার না হওয়ার ফলে, আওয়ামী লীগের ভেতর সুবিধাবাদী, দুর্নীতিবাজরা উৎসাহিত হয়েছে। দুর্নীতির বিচার হয় না—এ বিশ্বাস তাদের মধ্যে প্রোথিত হয়েছে। এরা ধীরে ধীরে দুর্নীতির জাল বিস্তার করে, এখন সরকারকেই রীতিমতো জিম্মি করেছে। এ অবস্থা থেকে সরকার এবং আওয়ামী লীগকে বের হতেই হবে। ২০২৪ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা’ নীতি ঘোষণা করেছে। ইশতেহারের ৩(চ)-তে বলা হয়েছে—‘দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং জাতির নৈতিক উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হলো দুর্নীতি। দুর্নীতির কারণে দেশের সার্বিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে ঈপ্সিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হয় না। শুধু আইন প্রয়োগ ও শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন করা সম্ভব নয়, তার জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের মাধ্যমে কাজ করে যাচ্ছে। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে সমাজ তথা রাষ্ট্র থেকে দুর্নীতির মূলোৎপাটন করা হবে।”

নির্বাচনী ইশতেহারে দুর্নীতি বন্ধে আওয়ামী লীগ চারটি অঙ্গীকার করেছে। এর মধ্যে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদ অর্জন, ঘুষ, ক্ষমতার অপব্যবহার, স্বজনপ্রীতি, পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য ও দুর্বৃত্তায়ন নির্মূলে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। প্রশাসনে দুর্নীতি নিরোধের জন্য ভূমি প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, আদালত, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবাসহ সব ক্ষেত্রে সূচিত তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার সম্প্রসারণ করার অঙ্গীকার আছে নির্বাচনী ইশতেহারে।

এ অঙ্গীকার পূরণে সরকারকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। রাষ্ট্রপতি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিন ভাষণ দিয়েছেন। এই ভাষণে তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির ভাষণটি মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত। তাই এটি সুস্পষ্ট যে, দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতির এ বক্তব্য সরকারেরই অবস্থান। এখন দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সরকার যে আন্তরিক, তা কাজ দিয়ে প্রমাণ করতে হবে।

১১ জানুয়ারি নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ এবং অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। আমি মনে করি সব সমস্যার মূল উৎস দুর্নীতি। দ্রব্যমূল্য রোধ করতে গেলে দুর্নীতি কমাতেই হবে। নির্মোহ ও কঠোরভাবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান করলে বাজারে সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য কমতে বাধ্য। খেলাপি ঋণ, অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে পক্ষাপাতহীন ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই অর্থনীতিতে সুদিন ফিরিয়ে আনা যায়। গ্যাসের জন্য হাহাকার বন্ধ হবে দুর্নীতি কমালেই। অন্য কিছু করার দরকার নেই, শুধু দুর্নীতি বন্ধ করলেই দেশের বিদ্যমান সমস্যাগুলোর জট খুলবে। আবার সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। সরকারের জনপ্রিয়তা বাড়বে। যেসব দেশে একটি দল বা একজন সরকারপ্রধান দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন বা আছেন, তারা সবাই দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করেই জনআস্থা অর্জন করেছেন। মালয়েশিয়ার মাহাথির মোহাম্মদ তার বড় উদাহরণ। এ সরকারকে জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে থাকতে হলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে জয়ী হতেই হবে। গত ১৫ বছর দুর্নীতির বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হয়েছে। এবার জনগণ কাজ দেখতে চায়।

লেখক: নির্বাহী পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭