ইনসাইড বাংলাদেশ

সরকারি সম্পত্তির মালিক হলেও মামলার আসামী নন সালাম মুর্শেদী


প্রকাশ: 07/02/2024


Thumbnail

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্টকে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক দুই চেয়ারম্যানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তবে এই মামলায় নেই বাড়ির মালিক খুলনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদীর নাম।

মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) এই মামলা করা হয়েছে জানিয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমের কাছে দাবি করেন, বাড়ির মালিক বনে গেলেও মামলার আসামি হননি সালাম মুর্শেদী! কারণ, জাল নথিপত্র তৈরির বিষয়টি তিনি জানতেন না— এমন অদ্ভুত যুক্তি দেখিয়ে তাকে আসামি করা হয়নি। ওই কর্মকর্তার আরও দাবি, মামলার আসামি না হলেও বাড়ি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছেন সংসদ সদস্য সালাম মুর্শেদী। দুদকের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে তার বিরুদ্ধে সরাসরি কোনো মন্তব্য না করা হলেও বাড়িটি উদ্ধারের জন্য ইতোমধ্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দুদক সচিবের দপ্তর থেকে মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। সংস্থাটির সচিব মো. মাহবুব হোসেনের সই করা চিঠির সূত্রে এমন তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, সম্পত্তির মালিকানা জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে বলে অনুসন্ধানকালে প্রমাণিত হয়েছে। জাল কাগজ তৈরি করে জালিয়াতির মাধ্যমে পরিত্যক্ত সম্পত্তির মালিকানা পরিবর্তন করে ব্যক্তিমালিকানায় হস্তান্তর করা হয়েছে বিধায় আব্দুস সালাম মুর্শেদীর বাড়ি (বাড়ি নং-২৭/বি, রোড নং-১০৪, গুলশান-২) সংক্রান্ত বিষয়টি আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তা উদ্ধারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণের জন্য কমিশন থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই সিদ্ধান্তের আলোকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে চিঠিতে।

এ বিষয়ে দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে গণমাধ্যমকে বলেন, অভিযোগ অনুসন্ধানকালে রেকর্ডপত্র দ্বারা সমর্থিত না হওয়ায় জাল-জালিয়াতির সঙ্গে আব্দুস সালাম মুর্শেদী ও অপর মালিক মোহাম্মদ আব্দুল মঈনের সম্পৃক্ততার প্রাথমিক প্রমাণ পাওয়া যায়নি। মামলার তদন্তকালে বিষয়গুলো আরও খতিয়ে দেখতে হবে। তবে, সম্পত্তির মালিকানা জাল কাগজের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে, এটা প্রমাণিত।

মঙ্গলবার বিকেলে সরকারি সম্পত্তি আত্মসাতের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে সংস্থাটির উপ-পরিচালক ইয়াছির আরাফাত বাদী হয়ে এ সংক্রান্ত মামলা দায়ের করেন। মামলার বিষয়টি দুদক সচিব মো. মাহবুব হোসেন নিশ্চিত করেছেন।

মামলার ১১ আসামি হলেন– রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান হুমায়ুন খাদেম ও প্রকৌশলী এম আজিজুল হক, সাবেক সদস্য (এস্টেট) লে. কর্নেল (অব.) এম নুরুল হক, সাবেক পরিচালক আবদুর রহমান ভূঁঞা, সাবেক উপ-পরিচালক (এস্টেট) মো. আজহারুল ইসলাম, রাজউকের সহকারী পরিচালক (নিরীক্ষা ও বাজেট) শাহ মো. সদরুল আলম ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক মো. হাবিব উল্লাহ। এ ছাড়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সাবেক সহকারী সচিব আবদুস সোবহান, সাবেক শাখা সহকারী মো. মাহবুবুল হক এবং কক্সবাজারের রামুর বাসিন্দা মীর মোহাম্মদ হাসান ও তার ভাই মীর মো. নুরুল আফছারকে আসামি করা হয়েছে।

জানা যায়, নথি জালিয়াতির মাধ্যমে সালাম মুর্শেদীকে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মালিকানাধীন বাড়ি বরাদ্দ দেওয়া হয়— এমন অভিযোগ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ২০২২ সালের ১১ আগস্ট দুদকে আবেদন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। দুদক আবেদন আমলে না নেওয়ায় একই বছরের ৩০ অক্টোবর হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন তিনি।

রিট আবেদনে বলা হয়, রাজধানীর গুলশান-২ এর ১০৪ নম্বর সড়কের ২৭/বি নম্বর বাড়িটি ১৯৮৬ সালের অতিরিক্ত গেজেটে ‘খ’ তালিকায় পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে তালিকাভুক্ত। কিন্তু আব্দুস সালাম মুর্শেদী সেটি দখল করে বসবাস করছেন। রিটে ২০১৫ সালের ১৩ এপ্রিল, ২০১৬ সালের ২০ জানুয়ারি এবং চলতি বছরের ৪ জুলাই রাজউক চেয়ারম্যানকে দেওয়া গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের তিনটি চিঠি যুক্ত করা হয়। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে দেওয়া চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে বাড়িটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও আব্দুস সালাম মুর্শেদী কীভাবে সেটি দখল করে আছেন— রাজউক চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাখ্যা চেয়েছিল গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সেই চিঠি আমলে না নেওয়ায় চলতি বছরের ৪ জুলাই আবারও চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে পরিত্যক্ত বাড়ির তালিকা থেকে ভবনটি অবমুক্ত না হওয়ার পরও কীভাবে রাজউক চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে সেটির নামজারি ও দলিল করার অনুমতি দেওয়া হলো— সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে অনুরোধ করা হয়। কিন্তু রাজউক চেয়ারম্যান সেই ব্যাখ্যা দিতেও অনীহা প্রকাশ করেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭