ইনসাইড আর্টিকেল

হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতিবিজড়িত ‘নুহাশ পল্লী’

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: 06/04/2018


Thumbnail

নন্দিত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে গড়ে তুলেছিলেন এক প্রাকৃতিক নৈসর্গ `নুহাশ পল্লী`। শাল বনের মাঝে চারিদিকে সবুজে মোরা এই বিনোদন কেন্দ্রটি বর্তমানে পিকনিক ও শুটিংস্পট হিসেবে বেশ পরিচিত।

হুমায়ূন আহমেদ ১৯৯৭ সালে গাজীপুর সদর থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরের পিরুজালী গ্রামে ৪০ বিঘা জমির ওপর তার ছেলে নুহাশের নামে এই ‘নুহাশ পল্লী’ তৈরি করেন।

নুহাশ পল্লীতে প্রবেশ করতে হলে আপনাকে দুইশ টাকা গুনতে হবে। টাকার অংকটা একটু বেশি মনে হতে পারে আপনার কাছে। তবে যখন জানবেন যে টিকিটের এই দুইশ টাকা ব্যয় করা হবে, লেখকের গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনার শহীদ স্মৃতি বিদ্যাপীঠ স্কুলের বাচ্চাদের লেখা পড়ার জন্য, তখন অবশ্যই শান্তি লাগবে মনে।  

নুহাশ পল্লীর গেট পার হলেই আপনাকে স্বাগত জানাবে ‘মায়ের হাত ধরে শিশু দাঁড়িয়ে’ একটি ভাস্কর্য। আরেকটু সামনে হাঁটলেই মানুষের মাথার খুলি দেখতে পাবেন সুইমিং পুলের সাথেই। হুমায়ুন আহমেদ নামটিও রেখেছেন মজার ‘খুলি পল্লল’। এই সুইমিং পুলেই হুমায়ূনের আহমেদের সাথে জলকেলিতে মেতেছিলেন ওপার বাংলার আরেক বিখ্যাত কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। দুজনের কেউ আর নেই।

সুইমিং পুলের পাশে আছে  হুমায়ূন আহমেদের থাকার জন্য ঘর। ঘরটির চারপাশে ঘিরে আছে বিভিন্ন লতা-পাতা গাছপালা। সবসময় তালাবদ্ধই থাকে এই ঘরটি। হুমায়ূন আহমেদের আত্মীয়স্বজনরা নুহাশ পল্লীতে বেড়াতে এলে এখানেই থাকেন।

ঘর পেড়িয়ে সামনে এগুলেই বাগান। বাগানে চেয়ার-টেবিল পাতা আছে। এখানে বসে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে আড্ডা দিতেন আড্ডাপ্রিয় হুমায়ূন আহমেদ। চেয়ারের পাশে ফল হাতে দাঁড়িয়ে আছে এক রমনীর ভাস্কর্য। নুহাশ পল্লীতে এরকম অনেক ভাস্কর্য রয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। ‘লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ ভাস্কর্যের সামনে একটি ছোট্ট জলাধার যার নাম ফিশ ট্যাংক।

নুহাশ পল্লীর মাঝখানে ঘাসের বিশাল চত্বর। সবুজের ঘাসের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে জাপানি বট গাছ। চারপাশে পাকা বসার জায়গা। নুহাশ পল্লীর আরেক আকর্ষণ লিচু গাছের ওপর ‘ট্রি হাউস’। ‘শ্রাবণ মেঘের দিনে’ সিনেমার কয়েকটি দৃশ্যে এই ঘরটি দেখা যায়। আপনি চাইলে সিড়ি দিয়ে ‘ট্রি হাউস’ উঠতে পারবেন।  

  

ঘাসের চত্ত্বরেই রয়েছে দাবার বড়সড় একটি ঘর এবং অনেক  বড় বড় দাবার গুটি। শিশুদের খেলার জন্য এই ঘরটি তৈরি করেছিলেন হুমায়ুন আহমেদ। মাঠ ধরে সামনে হাটলেইশেফালি গাছের ছায়ায় নামাজের স্থান।

ডান পাশেই দেখতে পাওয়া যায় ‘বৃষ্টিবিলাস’ নামের একটি ঘর। হুমায়ূন আহমেদের ‘আমার আছে জল’ ও ‘নয় নম্বর বিপদ সংকেত’ সিনেমার অনেক দৃশ্যে আমরা এই ‘বৃষ্টিবিলাস’ ঘরটাই দেখেছি।  

নুহাশ পল্লীতে আরও আছে ‘পদ্মপুকুর’। যদিও পদ্মপুকুরে আর পদ্ম ফুল নেই। পদ্মপুকুরের মাঝখানে ‘জলপরী’ দাঁড়িয়ে আছে । জলপরীর সামনেই বিশাল এক দানব দুই হাত প্রসারিত করে সদা প্রস্তুত। এখানে আছে জুরাসিক পার্ক, ডাইনোসরও আছে এখানে তবে আসল নয়। নুহাশ পল্লীতে বেশ কিছু দোলনা আছে। এছাড়া রয়েছে গোয়ালঘর, হাঁস-মুরগির ঘর, কবুতরের খাঁচা।

হুমায়ূন-শাওন দম্পতির প্রথম সন্তান লীলাবতী। আট মাস বয়সে মায়ের গর্ভেই মারা যায় লীলাবতী। লীলাবতীকে মনে রাখতেই নুহাশ পল্লীর উত্তরে হুমায়ূন আহমেদ খনন করেন একটি দিঘি নাম রাখেন ‘লীলাবতী’। এই দিঘির মাঝখান দিয়ে আছে কাঠের একটি সেতু। সেতু দিয়ে কৃত্রিম দ্বীপ ‘দ্বীপ বিলাস’ এ যাওয়ার পথ। লীলাবতীর দিঘির পাড়েই ভূত দেখার জন্য হুমায়ুন আহমেদ তৈরী করেছিলেন ‘ভূতবিলাস’ নামের ছোট একটি ঘর।  

নুহাশ পল্লীতে আছে অনেক প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ-পালা। পাশাপাশি রয়েছে অনেক বিরল ঔষধি গাছ। হুমায়ুন আহমেদ যখন যেখানে দেশে-বিদেশে ঘুরতে গেছেন, সঙ্গে করে এনেছেন অনেক গাছ। আর সেই গাছের ঠিকানা হয়েছে তাঁর প্রিয় নুহাশ পল্লীতে।

শেফালি তলার পাশেই তিনটি পুরনো লিচুগাছ নিয়ে লিচুবাগান। লিচু তলাতেই হুমায়ূনের আহমেদের শেষ শয্যা এখন। নুহাশ পল্লীর সবুজের মাঝে সাদা শ্বেত পাথরের সমাধি। হুমায়ূনের আহমেদের সমাধি সবার জন্য সবসময় উন্মুক্ত। কেউ নুহাশ পল্লীতে না ঢুকেও বাইরে দিয়ে প্রিয় লেখকের সমাধি যেন দেখতে পান সেই জন্যেই এই ব্যাবস্থা। তবে সমাধির ওই গেটটি এখন বন্ধ থাকে সবসময়।

বছরের পর বছর একটু একটু করে হুমায়ূন আহমেদ সন্তানের মতো তিল তিল করে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এই নুহাশ পল্লী। এখানকার প্রতিটা গাছ-পালা, পুকুর, ইট, কাঠের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হুমায়ূন আহমেদের স্মৃতি। এখানে বেড়াতে এলে মনে হবে প্রিয় লেখক হুমায়ূন আহমেদ আশেপাশে আপনার সঙ্গেই আছে।

বাংলা ইনসাইডার/জেডএ



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭