ইনসাইড পলিটিক্স

শোবিজের তারকাদের বিরুদ্ধে ফুঁসছে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 09/02/2024


Thumbnail

২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, বৃহস্পতিবার বিকেলের ঘটনা। সংরক্ষিত আসনের জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা দেওয়ার সময় শেষ হয়ে গেছে। এরকম সময় ফরম জমা দেওয়া আওয়ামী লীগের একজন নারী নেতা, তিনি ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আহত হয়েছিলেন, এখনো শরীরে স্প্লিন্টার নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তিনি বলছিলেন, নায়িকারা সব এমপি হতে চায় কেন? তার এই প্রশ্নটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার এই প্রশ্নের সঙ্গে সঙ্গে দেখা গেল, আওয়ামী লীগের উপস্থিত নেতাকর্মীদের মধ্যে হাততালি এবং উচ্ছ্বাস। 

শোবিজের তারকাদের এমপি হওয়ার দৌড়ঝাঁপ এবং সংরক্ষিত আসনের জন্য রেকর্ড পরিমান শোবিজের তারকাদের মনোনয়ন ফরম কেনা আওয়ামী লীগের অনেকের কাছেই হতাশাজনক, দুর্ভাগ্যজনক মনে হয়েছে। আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতারা মনে করছেন, এরা অতিথি পাখি। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে, এজন্য এরা এসে ভীড় করেছে। এরা আগে কোথায় ছিল? এই প্রশ্ন উঠেছে।

গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শোবিজের তারকাদের বিভিন্ন জনসভায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল। সেই সিদ্ধান্তের অংশ হিসেবে ইদানিং আওয়ামী লীগে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠা এক কর্মহীন শোবিজ তারকা কয়েকটি জেলায় বক্তৃতা দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের একই শোবিজ তারকার বিভিন্ন স্থানে দেওয়া বক্তৃতার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, একই মুখ কেন বার বার দেখানো হচ্ছে এবং তারা আওয়ামী লীগের নেতাদের ভাষায় কথা বলছেন। শোবিজের তারকাদেরকে নির্বাচনী প্রচারণায় অন্তুর্ভূক্ত হয়েছিল যে তারা ভিন্ন মাত্রা আনবেন, ভিন্ন আঙ্গিকে কথা বলবেন যেন সাধারণ মানুষ যারা আওয়ামী লীগ করেন না তারা উদ্বুদ্ধ হবেন। কিন্তু, তারা আওয়ামী লীগ নেতাদের ভাষায়ই বক্তব্য রেখেছেন। তারপর ওই অভিনেত্রীকে আর জনসভাগুলোতে নেওয়া হয়নি। এ নিয়ে অভিনেত্রীর ক্ষোভ।

সরকারের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ে ঘনিষ্ট যোগাযোগ থাকা এই অভিনেত্রী এবার আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলছেন যে, ১৯৯১ সালে এরা কোথায় ছিল? ২০০১ সালে যখন বিএনপি-জামায়াত জোট সারা দেশে সন্ত্রাস, লুটপাট এবং নিপীড়ন শুরু করেছিল, তখন শোবিজের তারকারা কেন প্রতিবাদ করেনি? ২০০৭ সালে এক এগারোর সময় এদের ভূমিকাই বা কি ছিল? 

আওয়ামী লীগের আরেকজন শীর্ষ নারী নেতা বলছেন যে, শোবিজের তারকারা হলো অতিথি পাখি। এখন আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় আছে। আওয়ামী লীগের পরিচয় ব্যবহার করলে, আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকলে নানা রকম সুযোগ-সুবিধা পাওয়া যায়। এ কারণেই হয়তো তারা আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে চান। 

শোবিজের একজন তারকা যিনি পর পর দুইবার মূল নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি মনোনয়ন পাননি। মনোনয়ন না পেয়ে গত নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিব্দন্দ্বিতা করে পরাজিত হন। এবার আবার তিনি সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী হওয়ার জন্য আগ্রহ ব্যক্ত করেছেন। যে কোন বিবেচনায় এটাকে বাড়াবাড়ি মনে করছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কিছু নেতার সঙ্গে এ নিয়ে আলাপ করে দেখা গেছে, তারাও বিষয়টি ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। একটি রাজনৈতিক দলে শোবিজের তারকারা অবশ্যই সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। তারা রাজনৈতিক দলের সমর্থক হতে পারেন। রাজনৈতিক দলের সাংস্কৃতিক শাখায় তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং অবদানও রাখতে পারেন। কিন্তু, একেবারে নেতৃত্ব দখল, সংরক্ষিত আসনের মনোনয়ন লাভ, সংসদে সদস্য পদের জন্য দৌড়ঝাঁপ করা বা অন্যান্য বিষয় নিয়ে দেনদরবার করাটাকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন না। এই সমস্ত সুবিধাবাদীদের কারণে আওয়ামী লীগের যোগ্য, পরীক্ষিত, ত্যাগীরা যেন বঞ্চিত না হন সে বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীরা।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭