ইনসাইড বাংলাদেশ

যুক্তরাষ্ট্র ড. ইউনূসের জন্য আগের মতো মরিয়া নয় কেন?


প্রকাশ: 09/02/2024


Thumbnail

ড. মুহম্মদ ইউনূসের ব্যাপারে নির্বাচনের পর সরকার আরও সক্রিয় হয়েছে। ইতোমধ্যে ড. মুহাম্মদ ইউনূস শ্রম আইনের একটি মামলায় ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। এই কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করলে ১৪ মার্চ পর্যন্ত তার জামিন মঞ্জুর হয়েছে। এর মধ্যে মামলা উচ্চ আদালতে নিষ্পত্তিরও নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। স্পষ্টতই যে, এই মামলাটি সরকার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে চায় এবং এর আইনগত অবস্থানের ফয়সালা চূড়ান্ত করতে চায়। এছাড়াও ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশন চার্জশিট প্রদান করেছে এবং আদালত সেই চার্জশিট গ্রহণ করেছে।অর্থপাচার এবং গ্রামীণ টেলিকম থেকে অর্থ আত্মসাতের মামলার বিচার প্রক্রিয়াও দ্রুত শুরু হবে। 

নিজেকে বাঁচার জন্য ড. ইউনূস যথারীতি এবারও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শরণাপন্ন হয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনুসের বিরুদ্ধে যখন শ্রম আদালতে মামলা করা হয়েছিল তখনও তিনি হিলারি ক্লিনটন, বারাক ওবামা সহ শতাধিক ব্যক্তিদের দিয়ে ওয়াশিংটন পোস্টে একটি বিবৃতি ছাপিয়েছিলেন বিজ্ঞাপন আকারে। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন যখন তার বিরুদ্ধে চার্জশিট প্রদান করেন তখন তিনি এর বিরুদ্ধেও একটি বিবৃতি খরচ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পত্রিকায় প্রকাশ করেন। কিন্তু ওই বিবৃতি পর্যন্ত সার। অন্য সময় দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেমন ড. ইউনূসকে বাঁচাতে মরিয়া হয়ে ওঠে, এখন সেই উদ্যোগে অনেকটাই ভাটার টান। বিশেষ করে যখন ড. ইউনূসকে যখন গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিষয়টিকে ভীষণ গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছিল। তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলছিল এবং এ নিয়ে সম্পর্কের অবনতিরও আশঙ্কা করা হয়েছিল। 

তবে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিচক্ষণতায় ওই পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যায়। এছাড়াও ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদ থেকে বাদ দেওয়ার জন্য হিলারি ক্লিনটন বিশ্ব ব্যাংকের প্রেসিডেন্টের কাছে চিঠি লিখেছিলেন যেন বাংলাদেশের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করা হয় এবং এই চিঠি দেওয়ার পিছনে ড. ইউনূসের হাত ছিল বলে আওয়ামী লীগ প্রকাশ্যে দাবি করে। ড. ইউনূসের ব্যাপারে সেই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতই মরিয়া ছিল যে, তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদ হারানোর পর তাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ সম্মানসূচক পদক প্রদান করেছিল। কিন্তু এবার পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।

ড. ইউনূস একটি মামলায় ইতোমধ্যেই দণ্ডিত হয়েছেন। আরেকটি মামলার বিচারে যাচ্ছেন ড. ইউনুস এবং তার মত ঘনিষ্ঠরা ঢাকায় উদ্বিগ্ন। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন কথা বলছে না। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসকেও এ নিয়ে তৎপর লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তাহলে কি ইউনূসের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে? 

বিভিন্ন সূত্র বলছে, ড. ইউনূসের বিষয়ের চেয়েও অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন হাবুডুবু খাচ্ছে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্য ইস্যু, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন এবং সবচেয়ে বড় বিষয় হল যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচন সবকিছু মিলিয়ে তারা নিজেদের বৃত্তে আটকা পড়ে আছে। এসময় ড. ইউনূসকে নিয়ে তারা বড় কিছু করতে আগ্রহী নয়। দ্বিতীয়ত, নিজস্ব উৎস থেকে ড. ইউনূসের ব্যাপারে তারা যে সমস্ত তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করেছে তাতে বিচারিক প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করার মতো কিছু না করাই উচিত বলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকরা মনে করছেন। কারণ আইনি প্রক্রিয়ায় যদি বাধা দেয়া হয় সেটি খারাপ উদাহরণ হতে পারে। এ জন্য তারা বিচার প্রক্রিয়া কি ভাবে হয় সেটি বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রাখছে। বিশেষ করে দণ্ডিত হবার পরও ইউনূসের জেলে না যাওয়া, তাকে জামিন দেওয়ার বিষয়গুলোকে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা দেখছে। এ কারণেই ড. ইউনূসের ব্যাপারে তাদের আগের মতো আগ্রহ নেই। তাছাড়া সবচেয়ে বড় কথা হলো ড. ইউনূসের সঙ্গে ঘনিষ্ট সম্পর্ক ক্লিনটন পরিবারের। ক্লিনটন পরিবারের প্রভাব মার্কিন রাজনীতিতে অনেকে কমে গেছে। আর এ কারণেই হয়তো ড. ইউনূসকে নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগের মতো আর আগ্রহ নেই।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭