ইনসাইড থট

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের বৈধতা দিলো যুক্তরাষ্ট্র- অতঃপর?


প্রকাশ: 10/02/2024


Thumbnail

সম্প্রতিকালে বাংলাদেশের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রর আগ্রহ বিশেষ করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সারা বিশ্বে সাড়া জাগিয়েছিল। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সংসদে দেয়া ভাষণে, যুক্তরাষ্ট্রের এম্বাসেডর মিস্টার পিটার হাস এর তৎপরতা, তাদের ভিসা নীতিমালা , ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আগ্রহ, বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি ও পুলিশ-আমলাদের ভূমিকা এবং দুর্নীতির গুজব এক নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছিল ক্ষমতাসীন সরকারের উপর।  বিভিন্ন শর্ত আরোপ করে বিরোধীদলকে চাঙ্গা করতে সমর্থ হয়েছিল ওই সব পক্ষ।  বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন সরকারের পক্ষে ভারত চীন ও রাশিয়া ছিল সতর্ক।  তাদের স্বার্থ ও যুক্ত রাষ্ট্রের স্বার্থকে সমন্বয় করে একটি কৌশল নির্মাণ ততটা সহজ ছিল না।  আন্তর্জাতিক কূটনীতি আর ভেতরের ষড়যন্ত্রর সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি- বিশেষ করে করোনা মহামারী এবং বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধ বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনে সহায়ক পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল।  সেই জায়গা থেকে যেন এবার মহান আল্লাহ রক্ষা করেছেন।

৯/১১ এর ঘটনাকে পুঁজি করে ২০০১ সালে ইসলামী চিন্তা চেতনাকে কাজে লাগিয়েই সেদিন মহাজোট ক্ষমতায় এসেছিলো। কিন্তু ক্ষমতায় এসে মহাজোট যেভাবে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির চর্চা করছিলো তা দারুণভাবে আন্তর্জাতিক মহলকে ভাবিয়ে তোলে।  তারা বাংলাদেশে পরিবর্তন চায়। সেই পরিবর্তন চিন্তা মাইনাস টু ফর্মুলাতে পরিণত হয়। কিন্তু বুদ্ধিজীবিদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় হার মানে সেই ষড়যন্ত্র। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ঐক্য রাখতে ছাত্র-বুদ্ধিজীবী ছিল খুবই সচেতন। প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেছিলেন বরেণ্য অধ্যাপক রেহমান সোবাহান। তিনি এক্সিট প্ল্যান নিয়ে কথা বলতেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়ে যায়। তারই সূত্র ধারায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের প্রতিবাদ মাইনাস টু থেকে সরে আসে সেনা শাসিত সরকার। যুগে যুগে ছাত্ররা বাংলার মানুষের মুক্তির জন্য লড়াই করেছে, জীবন দিয়েছে, এনেছে গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সেই মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে ঐতিহাসিক অবদান রেখেছে।

৩ জানুয়ারী বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ অস্ট্রেলিয়ার নেতৃবৃন্দের সঙ্গে গিয়েছিলাম জাতির পিতার মাজারে। সেখানে দেখা হয়েছিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের গ্রাজুয়েট আয়ুব বিরোধী আন্দোলনের নেতা শেখ কবির হোসেনের সঙ্গে।  তার মুখ থেকে মুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম কিভাবে গণতন্ত্রের মুক্তিতে সামরিক সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন।  ছাত্ররা আমাদের মুক্তির সৈনিক তা এবার প্রমাণ করেছে।  সকল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের জবাব দিতে সেনা-আমলা-পুলিশ নয় ছাত্রলীগ সৈনিকেরা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে এবার।

২৮ অক্টোবর ২০২৩ বদলে যায় রাজনীতির গতিধারা। ১৯৯০ সালে বিএনপি -জামাত যেভাবে সরকার পরিবর্তনের ছক এটেছিলো সেইভাবে তারা সন্ত্রাস-পোড়াও নীতি অনুসরণ করে দুটি মারাত্মক ভুল করে।  মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবন আক্রমণ ও পুলিশ পিটিয়ে হত্যা।  সেই ভুল তারা যাতে না করে সেজন্য তাদেরকে বারবার তাদের বন্ধুরা হুঁশিয়ার করে দিয়েছিলো।  কিন্তু বন্দুকের নল থেকে বেরিয়ে আসে ক্ষমতা যে আর কার্যকরী নয় সেটা তারা ভুলে গিয়েছিলো।  বাংলার মানুষ তাদেরকে বিশ্বাস করে নি। 

নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও অংশগ্রহণমূলক যাতে না হতে পারে সেজন্য আপ্রাণ চেষ্টা ছিল বিরোধী পক্ষের। সমাজ-রাজনীতি বদলে গাছে সেটা বোঝার ক্ষমতাটুকু তারা হারিয়ে ফেলেছে। 

বিএনপি সামপ্রদায়িক অবস্থান ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আত্মপ্রকাশ পায়।  সেই থেকে অবিশ্বাস।  সেই অবিশ্বাস তারা আজও দূর করতে পারেনি তারা। ফলে যা হবার তাই হয়েছে। বদলে গেছেন পিটার হাস।  বদলে গেছেন জো বাইডেন।  স্বাগত জানিয়েছেন তারা শেখ হাসিনার সরকারকে এবং গ্রহণ করেছেন নির্বাচনের ফলাফল। 

বাংলাদেশ আজ আর তলাবিহীন ঝুড়ি নয়।  ঢাকা শহরের এক বিদ্যমান অশান্তির মাঝে মেট্রো রেল শান্তির পরশ।  সব ক্ষোভ মুছে দিয়েছে বঙ্গবন্ধু টানেল, পদ্মা-মধুমতি সেতু।  আশার আলো ছড়াচ্ছে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু-বিমানবন্দর তৃতীয় টারমিনাল। 

এবারকার ইশতেহার "স্মার্ট বাংলাদেশ দৃশ্যমান, তরুণদের কর্মসংস্থান" বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখিয়ে থামেনি। তিনি বাঙালিদের দাবায় রাখা থেকে মুক্ত করেছেন।  আর তারই সুযোগ্য কন্যা ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণ করে স্বপ্নকে আরও  বিস্তৃত করে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বেন। তার প্রতিশ্রুতি সত্যি হবে সেই আস্থা জনগণ রেখেছে। তাই জো বাইডেন, পিটার হাস জনগণের পাশে আছেন সরকারকে অভিনন্দন জানিয়ে। ধন্যবাদ পিটার হাস-প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

একটি টক্ শোতে রাজনীতিবিদের উদ্দেশে বলেছিলাম, সাংসদ জনাব নজরুল ইসলাম বাবু ও বিএনপি নেত্রী শামা ওবায়েদ ছিলেন। সেদিন বিএনপি নেত্রী আমার কথায় খুশি হতে পারেননি। বিএনপি বুদ্ধিজীবি ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।  অতপর এখন আপনারা কি করবেন? আরো পাঁচ বছর - জনগণের কাছে গিয়ে তাদের ভালোবাসা অর্জন করা ছাড়া তাদের কি মুক্তির পথ আছে? নির্বাচন বয়কট করে কি পরিবর্তন আনতে পারবেন? হয়তো আপনাদের ২০৪১ সালের পরেও অপেক্ষা করতে হবে।  মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে আপনাদের মুক্তির পথ খুঁজতে হবে যে !     

লেখক: অধ্যাপক ফরিদ আহমেদ

দর্শন বিভাগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭