ইনসাইড বাংলাদেশ

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষের উকিলরা এখন কি বলবেন?


প্রকাশ: 10/02/2024


Thumbnail

গত বৃহস্পতিবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পাকিস্তানে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এক উত্তপ্ত, উত্তেজনাপূর্ণ এবং পক্ষপাতপূর্ণ এই নির্বাচনের নেপথ্যে ছিল পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। ইমরান খানকে প্রতিহত করার জন্যই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাজানো হয়েছিল। সে কারণেই একের পর এক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল যেন ইমরান খান কিছুতেই দৃশ্যপটে থাকতে না পারেন। কিন্তু পাকিস্তানের জনগণ রায় দিয়েছে উল্টা। এটি অন্য প্রসঙ্গ। তবে পাকিস্তানের এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কখনওই একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের গ্যারান্টি দেয় না। বরং এই ব্যবস্থা কিছু সুবিধাভোগীকে ক্ষমতার কলকাঠি নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ দেয়। যে সুযোগ পাকিস্তানে নেওয়া হয়েছিল।

পাকিস্তান তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করেছিল মার্কিন পরামর্শে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন সবসময় ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন নিজের কাছে সেকারণেই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছিল। বাংলাদেশের পরে তারাই এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালু করে। যেখানে নির্বাচনের সময় তারা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবে, নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করবে এটি তাদের কাজ। কিন্তু এবারের পাকিস্তানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সকলে সেনাবাহিনীর অনুগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবেই বিবেচনা করেছে। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব এসে একের পর এক ইমরান খানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, তাকে দণ্ডিত দণ্ডিত করেছে। এবং এমন সব মামলা দেওয়া হয়েছে, যা হাস্যকর। তিনি যেন নির্বাচন করতে না পারেন, সেই আয়োজনে সেনাবাহিনী যা বলেছে সেটাই করা হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকার। 

দ্বিতীয়ত, তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচন কমিশনকেও ব্যবহার করেছে ইমরান খান নিধনের কাজে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার এবং সেনাবাহিনীর নির্দেশে নির্বাচন কমিশন ইমরান খানের নির্বাচনী প্রতীক বাতিল করে দেন। ব্যাট প্রতীক নিয়ে এর আগে নির্বাচন করতেন ইমরান খানের দল পিটিআই। এবার এই প্রতীককেই নিষিদ্ধ করা হয়। ফলে ইমরান খানের সমর্থক বা পিটিআই প্রার্থীরা সবাই স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করছে। কিন্তু স্বতন্ত্র হিসেবে নির্বাচন করেও তারা বাজিমাত করেছে।

তৃতীয়ত, নির্বাচনের পর ১৪ ঘণ্টা বিলম্ব করে ফল ঘোষণা করা হয়েছে। চেষ্টা করা হয়েছিল কোনভাবে কারচুপির মাধ্যমে ইমরান খানকে ঠেকানো। কিন্তু কারচুপি করার পরও ইমরান খানের দলকে নির্বাচনের মাঠে পরাজিত করা সম্ভব হয়নি। পিটিআই এর পক্ষ থেকে এবং নিরপেক্ষ বিশ্লেষকরা বলছে, নির্বাচন যদি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হত তাহলে ইমরানের দল পিটিআই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেত। ইমরানকে ক্ষমতায় আসতে না দেওয়ার জন্য নির্বাচন ফলাফল ঘোষণায় নজিরবিহীন কারচুপি করা হয়েছে। 

এখন আসা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশের কিছু সুশীল বুদ্ধিজীবী গত কিছুদিন ধরেই বলার চেষ্টা করছেন যে, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের একমাত্র গ্যারান্টি। শুধু তাই নয়, এ নিয়ে তারা বিভিন্ন রকম যুক্তি তর্ক উপস্থাপন করেন। বিভিন্ন ফোরামে বদিউল আলম মজুমদার, শাহদীন মালিক কিংবা আসিফ নজরুলের মতো বিএনপির অনুগত বুদ্ধিজীবীরা বিভিন্ন সময় বলতে চেয়েছেন যে, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হলে কোনদিনই একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। পাকিস্তানের নির্বাচনের পর তারা কি বলবেন সেটা একটা বড় প্রশ্ন। কারণ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার সবচেয়ে বড় ত্রুটি হলো যেকোনো তৃতীয় শক্তি নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে পারে, তাদের মতো করে নির্বাচনে জনগণের মতামতকে উপেক্ষা করতে পারে যেটা আমরা দেখলাম পাকিস্তানে। পাকিস্তানের গত ৮ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়ে গেল যে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ত্রুটিপূর্ণ, পক্ষপাতপূর্ণ এবং একটি বিশেষ দলকে জেতানোর জন্য একটি বিশেষ গোষ্ঠীর একটি অব্যর্থ অস্ত্র। বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিদাররা এরপরও কি এই দাবি নিয়ে মাঠে নামবেন? 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭