ইনসাইড পলিটিক্স

পাকিস্তান এবং ইমরান খানের কাছ থেকে বিএনপি যা শিখতে পারে


প্রকাশ: 10/02/2024


Thumbnail

গত ৮ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। কারচুপি সহিংসতাপূর্ণ এবং পক্ষপাতদুষ্ট এই নির্বাচনের মাধ্যমে একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে তা হল জনগণ ইমরানের পক্ষে। ইমরান খান নিজে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি জেলে ছিলেন, তার দল প্রতীক পায়নি, তাদের দলীয় প্রতীক বাতিল করা হয়েছে কিন্তু তারপরও নির্বাচনে জনগণ ইমরানের পক্ষে নিরঙ্কুশ ভাবে রায় দিয়েছে। ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচন হলেও এতে ইমরান খানের দল পিটিআই বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া কোন বিষয়ই ছিল না। 

এখন প্রশ্ন হল যে বাংলাদেশে যারা কথায় কথায় অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলে, নির্বাচন কারচুপি করা হয়েছে বলে, বিরোধীদের ওপর নিপীড়ন নির্যাতন করা হয়েছে বলে তারা পাকিস্তানের নির্বাচন এবং ইমরান খানের কাছ থেকে কি শিখবে? 

বিএনপি সবসময় বলে যে তাদের নেতাদের নিপীড়ন করা হচ্ছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হবে না। এ কারণে তারা নির্বাচন থেকে তাদেরকে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছে। আর অন্যদিকে তারা আন্দোলন করতে পারছে না। এর পিছনে যুক্তি হিসেবে দেখাচ্ছেন তাদের নেতাকর্মীরা গ্রেপ্তার। কিন্তু পাকিস্তানের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী বিএনপির জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে। এমনিতেই পাকিস্তানের সমর্থক আইএসআরতার পৃষ্ঠপোষকতা বেড়ে উঠা দীর্ঘ ১৬ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি পাকিস্তান এবং ইমরান খানের কাছ থেকে পাঁচটি শিক্ষা নিতে পারে। 

প্রথমত, জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা থাকলে তাকে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারে না। পাকিস্তানে ইমরান খানকে ঠেকানোর জন্য সব ব্যবস্থাই করা হয়েছিল। কিন্তু শেষপর্যন্ত বিপুল জনসমর্থন ইমরান খানকে আবার পাদপ্রদীপে নিয়ে এসেছে। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপি সেটি পারেনি। কারণ তার প্রধান কারণ হল বিএনপির কোনো জনপ্রিয় নেতাই নাই। ইমরান খান সততার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের যে হৃদয় জয় করেছিলেন তা বিএনপি নেতারা কেউই পারেনি। এমনকি বিএনপি ২০১৮’র নির্বাচনেও ইমরান খানের ধারে কাছেও ছিল না। আর এ কারণে বিএনপি ইমরান খানের কাছ থেকে শিখতে পারে যে নেতৃত্বের জনপ্রিয়তাটা আসল বিষয়। কথায় কথায় অভিযোগ কোন অজুহাত হতে পারে না। 

দ্বিতীয়ত, নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল তত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই নির্বাচনে সেটি হয়েছে যেটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে এবং সেনাবাহিনী বাস্তবায়ন করেছে। আর এই কারণে এটা সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা কোন কারণেই গণতন্ত্রের জন্য ইতিবাচক নয়। বরং এই ধরনের সরকারব্যবস্থা গণতন্ত্রকে বাধাগ্রস্ত করে। 

তৃতীয়ত, গ্রেপ্তার, হয়রানি কোন অজুহাত হতে পারে না। ইমরান খানের পিটিআই এর সহস্রাধিক নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। অনেকে নির্বাচন করতে পারেনি, চাপের মুখে অনেকে দলত্যাগ করেছিল। কিন্তু তারপরও ইমরান খান তার লক্ষ্যে অটল ছিলেন এবং জনগণের সমর্থন নিয়ে তিনি চমক দেখিয়েছেন। আর এখন বিএনপির নেতারা যে কথায় কথায় তাদের নেতাদের গ্রেপ্তার হয়রানির কথা বলেন, তারা কি পাকিস্তানের দিকে একবার তাকিয়ে দেখবেন? পাকিস্তানে পিটিআই এর ওপর যে পরিমাণ নিপীড়নের হচ্ছে তার একশ ভাগের এক ভাগও বিএনপির ওপর হয়নি। তাহলে বিএনপি কেন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারল না? বিএনপি কি এই আত্ম উপলব্ধির সুযোগ নেবে—পাকিস্তানের নির্বাচন থেকে।

চতুর্থত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা শেষ কথা না। পাকিস্তানে যেমন দুর্নীতিবাজ নওয়াজ শরিফ এবং দুর্নীতিবাজ আসিফ আলী জারদারি যারা দুজনই মি. ট্রেন পার্সেন্ট হিসেবে চিহ্নিত ছিল তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইঙ্গিতে সেনাবাহিনীর সমর্থন নিয়ে পাকিস্তানে আসে এবং নির্বাচন করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে—এমন আলোচনা পুরো পাকিস্তান জুড়ে ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যা চেয়েছে তা পাকিস্তানে হয়নি। বরং জনগণ যা চেয়েছে সেটিই হয়েছে। কাজেই পশ্চিমা দেশ বা বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীল থেকে যে কোন কিছু অর্জন করা যায় না সেটি পাকিস্তানের নির্বাচনে প্রমাণিত হয়েছে। এটি বিএনপির জন্য একটি বড় শিক্ষা।

পঞ্চমত, দুর্নীতিবাজদের জনগণ প্রত্যাখান করে। নওয়াজ শরিফ এবং আসিফ আলী জারজারি দুজনই দুটি রাজনৈতিক দলের নেতা। নওয়াজ শরিফ পাকিস্তান মুসলিম লীগ আর অন্যদিকে আসিফ আলী জারদরি পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা। কিন্তু তারা দুজনই সাধারণ মানুষের কাছে দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত। যে রকম দুর্নীতিবাজ হিসেবে পরিচিত লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া। তারেক জিয়া যেমন বিপুল পরিমাণ অর্থ নিয়ে লন্ডনে আরাম আয়েশে জীবনযাপন করছেন, নওয়াজ শরিফও ঠিক একই কায়দায় বিদেশে আরাম আয়েশে জীবন যাপন করছিলেন। কিন্তু মানুষ এ সমস্ত দুর্নীতিবাজদের যে পছন্দ করে না এটা পাকিস্তানের নির্বাচনে আরেকবার প্রমাণিত হলো। পাকিস্তান পন্থি বিএনপি এ থেকে নিশ্চিয় অনেকে কিছু শিখতে পারবে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭