ইনসাইড ইনভেস্টিগেশন

বারবার গৃহকর্মী নির্যাতনের কারণ জানতে চেয়েছে পুলিশ


প্রকাশ: 11/02/2024


Thumbnail

গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের (১৫) নবম তলা থেকে পড়ে মৃত্যুর ঘটনায় কারাগারে থাকা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে বারবার গৃহকর্মী নির্যাতনের কারণ জানতে চেয়েছে পুলিশ।

বিশেষত নবম তলায় গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের ঝুলে থাকার পর মৃত্যুর কারণ জিজ্ঞাসা করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, এ মৃত্যুর ছয় মাস আগে সাত বছর বয়সী ফেরদৌসী নামে আরেক গৃহকর্মী একইভাবে আট তলা থেকে পড়ে যাওয়ার রহস্য উদ্ঘাটন করতে চেয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে আটক করা হয়। পরদিন আদালতে সোপর্দ করলে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

তদন্তসূত্র জানান, ৮ ও ৯ ফেব্রুয়ারি কেরানীগঞ্জ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দ আশফাকুল হক ও তানিয়া খন্দকারকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। একই বাসায় বারবার কেন গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং এর নেপথ্যে কী কারণ তা বের করার জন্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মারা যাওয়া কিশোরী গৃহকর্মীকে কেন হাত বেঁধে বাসায় আটকে রাখা হয়েছিল তারও ব্যাখ্যা জানতে চাওয়া হয়েছে আশফাক ও তানিয়ার কাছে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির কারণে অবহেলাজনিত মৃত্যু ঘটানোর ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে। তারা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছেন। তদন্তে সরাসরি হত্যার প্রমাণ বা অন্য কিছু পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী আইনি প্রক্রিয়া চালানো হবে। কারণ বারবার একই ধরনের ঘটনা ঘটার কথা নয়। বাসা থেকে কেউ ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছে কি না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

৬ ফেব্রুয়ারি সকাল ৮টায় মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডের জেনেভা ক্যাম্প সংলগ্ন একটি ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে মারা যায় গৃহকর্মী প্রীতি উরাং (১৫)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পড়ে যাওয়ার আগে বেশ কিছুক্ষণ জানালার গ্রিল ধরে ঝুলে ছিল প্রীতি। এরপর ওই ভবন থেকে নিচে পড়ে যায়। মেয়েটা পড়ার পর অনেক লোক ভিড় করেছে। দ্রুত ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের বিষয়টি জানানো হলেও তারা প্রথমে দরজা খুলতে চাননি। যখন ওপর থেকে মেয়েটা পড়ে যায়, পাশের ভবনের নিরাপত্তাকর্মী আনাসসহ আরও কয়েকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।

খবর পেয়ে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মেয়েটির লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। এ সময় স্থানীয়রা ওই বাড়ির ফটকে জড়ো হয়ে মেয়েটিকে হত্যা করা হয়েছে অভিযোগ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। পরে পুলিশ আশফাক, তানিয়াসহ তাদের পরিবারের ছয়জনকে থানায় নিয়ে যায়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে দুজনকে রেখে বাকিদের ছেড়ে দেওয়া হয়। পরদিন মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেন প্রীতির বাবা লোকেশ উরাং।

আলোচিত এ ঘটনায় প্রীতির সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছেন মোহাম্মদপুর থানার এসআই সাদিয়া। সুরতহাল প্রতিবেদনে প্রীতির শরীরে নতুন ও পুরান কিছু দাগের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তার প্রশ্ন- ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক আশফাকুল হকের বাসার ভিতরে কী এমন ঘটনার অবতারণা হয় যে শিশু গৃহকর্মীরা নবম তলা থেকে পড়ে যায়? বাসায় কি তাদের শারীরিক, মানসিক কিংবা যৌন নির্যাতন করা হয়? নাকি শিশুদের ফেলে দেওয়া হচ্ছে?

প্রীতির বাবার অভিযোগ, অভাবের কারণে দুই বছর আগে মিন্টু নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির মাধ্যমে সাংবাদিক আশফাকুল হকের বাসায় ছোট মেয়েকে গৃহকর্মীর কাজে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু আশফাকুল হকের পরিবার দুই বছরেও মেয়েকে তাদের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। মাসে দু-এক বার গৃহকর্তার মোবাইলে যোগাযোগ করে কথা বলিয়ে দিতেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছয় মাস আগে একই বাসা থেকে ফেরদৌসি পড়ে আহত হওয়ার ঘটনায় শিশুটির মা জোছনা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলায়ও সৈয়দ আশফাকুল হক, তানিয়া খন্দকার ও আসমা আক্তার শিল্পী নামে এক নারীকে আসামি করা হয়েছিল। পরে মামলার আসামিরা বাদীর সঙ্গে আদালতে আপস করেছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা সেই আপসনামার ভিত্তিতে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭