ইনসাইড বাংলাদেশ

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে নিয়ম ভেঙে পদায়ন বদলির অভিযোগ


প্রকাশ: 11/02/2024


Thumbnail

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কয়েকটি বিভাগে নিয়ম ভেঙে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পদায়ন ও বদলির অভিযোগ উঠেছে। পদয়নকৃত পদগুলোয় দায়িত্ব পালনের জন্য স্বাস্থ্য বিভাগে যোগ্য ও দক্ষ কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করে এক গ্রেড নিচের কর্মকর্তাদের পদ-পদবি দেওয়া হয়েছে। প্রভাবশালীদের পছন্দ অনুযায়ী রীতিমতো প্রজ্ঞাপন দিয়ে তাদের নীতিনির্ধারণী চেয়ারে বসানো হয়। গণমাধ্যমের প্রতিবেদনসূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র বলছে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের দুটি এবং পরিচালকের দুটি পদে রদবদল করে ৭ ফেব্রুয়ারি প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের যুগ্মসচিব মো. মঞ্জুরুল হাফিজ এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে সই করেন। এতে বলা হয়, ‘পুনরাদেশ না দেওয়া পর্যন্ত বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডার বা স্বাস্থ্য সার্ভিসের বদলি ও পদায়নপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে প্রজ্ঞাপনে উল্লিখিত পদ ও কর্মস্থলে বদলিপূর্বক পদায়ন করা হলো।’ এসব পদে বদলি বা পদায়নের ক্ষেত্রে প্রচলিত পদায়ন ও পদোন্নতি নীতিমালা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। অতিরিক্ত মহাপরিচালকের পদমর্যাদা গ্রেড-২।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিদপ্তরে গ্রেড-২ (১৭তম বিসিএস ব্যাচ, স্বাস্থ্য ক্যাডার) মর্যাদার চিকিৎসক কর্মরত আছেন। এ দুটি পদে যোগ্য কর্মকর্তা থাকার পরও একজন গ্রেড-৩ ও একজন নন-ক্যাডার চিকিৎসক কর্মকর্তাকে পদায়ন করা হয়েছে, যা প্রচলিত পদায়ন ও পদোন্নতি নীতিমালা-পরিপন্থি।

প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) পদে পদায়ন করা হয়েছে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরকে। তিনি ১৯৯৯ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারের মাধ্যমে (১৮তম ব্যাচ) কর্মকর্তা হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। তিনি বর্তমানে গ্রেড-৩-এর কর্মকর্তা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীর গ্রেড-৩-এর কর্মকর্তা হয়েও এর আগে একবার অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) পদে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ওই পদ থেকে তাকে বদলি করা হয়। এ বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি।

নতুন প্রজ্ঞাপনে জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের (নিপসম) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরাকে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) হিসাবে পদায়ন করা হয়েছে। এর আগেও তিনি এ পদে কর্মরত ছিলেন।

জানা যায়, নিপসমের পরিচালক গ্রেড-২-এর পদ। ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা একজন নন-ক্যাডার কর্মকর্তা। নন ক্যাডার গ্রেড-২ পদে পদোন্নতিলাভের যোগ্য হওয়ার নিয়ম নেই। একজন বিসিএস ক্যাডারকেও গ্রেড-২ অর্জনে বেশকিছু শর্তাবলি পূরণ করতে হয়। এরপরও তাকে গ্রেড-২ পদে পদায়ন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলামকে নিপসমের পরিচালক করা হয়েছে। তিনিও বর্তমানে গ্রেড-৩-এর কর্মকর্তা। ডা. মো. শামিউল ইসলাম পাবলিক হেলথ বিশেষজ্ঞ নন, তিনি একজন প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ। অন্যদিকে নিপসম একটি ‘পাবলিক হেলথ’ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠিত এ প্রতিষ্ঠান থেকে পাবলিক হেলথ বিষয়ে এমপিএইচ এবং এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়ে থাকে। এখানকার পরিচালক থেকে শুরু করে সব শিক্ষক পাবলিক হেলথ তথা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

অধ্যাপক ডা. মো. শামিউল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে শুধু মহাপরিচালক ছাড়া ঊর্ধ্বতন চিকিৎসক কর্মকর্তাদের সবাই গ্রেড-৩-এ কর্মরত আছেন। গ্রেড-২-এর জন্য আবেদনকারীদের মধ্যে ফিডার পদে গ্রেড-২ যাওয়ার জন্য সবদিক থেকেই আমার যোগ্যতা আছে। আমি ২০১৪ সালে অধ্যাপক হয়েছি। বর্তমানে স্বাস্থ্য বিভাগে যারা কর্মরত, আমি তাদের মধ্যে সবার আগে গ্রেড-৩ পাওয়া কর্মকর্তা। তাছাড়া জনস্বাস্থ্যের একটি বড় অংশ ল্যাবরেটরি সার্ভিস। আমি ২০০৯ সাল থেকে প্রশাসনে কাজ করছি। অধিদপ্তরের আওতায় যারা কাজ করছেন, তাদের মধ্যেও সিনিয়র। আমার গ্রেড-২ পদের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে সবকিছুই সরকারের সিদ্ধান্তের ব্যাপার।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি নিজেও মহামারির সময় গ্রেড-৩-এ কর্মরত ছিলাম। দেশের ক্রান্তিকাল চলায় ওই সময় আমাকে গ্রেড-১-এ পদায়ন করা হয়েছিল। পরবর্তী সময়ে গ্রেড-১ পেয়েছি। এ পদায়নগুলো মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী, সচিব ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতামত নিয়ে করা হয়। অধিদপ্তরের এ সুযোগ নেই। যেভাবে আদেশ হয়, সেভাবেই আমাদের গ্রহণ করতে হয়। তাছাড়া অধিদপ্তরে গ্রেড-২-এর মোট পদ চারটি। গ্রেড-২-এর জন্য আমাদের (চিকৎসক) নিয়মিত কর্মকর্তা নেই। এটি অর্জনও দীর্ঘ প্রক্রিয়া। হয়তো এসব ভেবেই আপাতত মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ডা. আহমেদুল কবীর ও সেব্রিনা ফ্লোরা দুজনই আগে ওই পদে ছিলেন। এখন শুধু ইন্টারচেঞ্জ হয়েছে। গ্রেড-২ যারা পাওয়ার, তারা সময়মতো পাবেন। আমরা এজন্য কাজ করছি। তাদের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সরকার কাউকে প্রয়োজন মনে করলে দিতে পারেন। সেখানে গ্রেড-২ জনবল নেই। এত বড় প্রতিষ্ঠানে মাত্র দুটি পদ আছে। আমরা পদ তৈরির পরিকল্পনা করছি। অর্গানোগ্রাম সংগ্রহ করা হয়েছে। কাওকে পেলে সেখানে পদায়ন করা হবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭