প্রকাশ: 11/02/2024
'নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ' আয়োজিত সংহতি সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রত্যক্ষ মদদে শিক্ষাঙ্গনে মাদক এবং ধর্ষণের নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী।
তিনি বলেন, ‘৭ তারিখে সিন্ডিকেটে আমরা দাবি জানিয়েছিলাম নিপীড়ক শিক্ষককে শাস্তি দিতে হবে। ভিসি বলেছিলেন স্ট্রাকচারাল কমিটির তদন্ত শেষ হয়নি, পরবর্তী সিন্ডিকেটে করতে হবে। একজন নিপীড়ক শিক্ষককে বাঁচিয়ে রাখবার যে পায়তারা চলছে, আমরা তা রুখে দাঁড়িয়েছি-তাকে বাঁচানো যাবে না। প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ৪২ তম ব্যাচকে বগলদাবা করে ৪৫, ৪৬, ৪৭ ব্যাচকে বের করে দেয়ার এই নাটক কি আমরা বুঝি না? আমাদের উদ্দেশ্য পরিষ্কার-এই ক্যাম্পাসকে আমরা অবৈধ ছাত্রমুক্ত, ধর্ষক মুক্ত ও মাদক মুক্ত করতে চাই।
শনিবার (১০ ফেব্রুয়ারী) বিকেল সাড়ে ৪টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ট্রান্সপোর্ট চত্বরে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের আয়োজনে সংহতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশ থেকে রোববার সন্ধ্যায় মশাল মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
সমাবেশে অংশগ্রহণকারীরা ৫ দফা দাবি জানান।
দাবিগুলো হলো….
১. ধর্ষক ও তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
২. মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং র্যাগিং সংস্কৃতির সাথে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৩. নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনিসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।
৪. নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর ও মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রভোস্টের অপরাধ তদন্ত করতে হবে এবং সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তদন্ত চলাকালে প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করতে হবে।
৫. মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্চিত ঘোষণাপূর্বক তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগী সামিয়ার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন একই বিভাগের শিক্ষার্থী কনোজ কান্তি রায়। গণরুম সংস্কৃতি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ছাত্রলীগের অবৈধ সঙ্গমের ফসল উল্লেখ করে তিনি তার বক্তব্যে বলেন, এই প্রশাসনের যে বিকৃত মস্তিষ্ক সেই মস্তিষ্ক থেকে তারা চায় প্রতিবার শিক্ষার্থীরা গণরুমে থাকুক, মাদকাশক্ত হোক, একধরনে অনৈতিক চর্চা এবং অধিকার আদায়ের সংগ্রাম থেকে দূরে থাকুক।
আমাদের যে গণরুমে সংস্কৃতি, ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য এবং প্রশাসনের যে অবহেলা সবমিলিয়ে শিক্ষার্থীরা একটা পঙ্গু এবং বিকৃত মস্তিষ্ক নিয়ে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের প্রথম বর্ষ গণরুমে অন্ধকারে কাটে। দ্বিতীয় বর্ষ কাটে মিনিগণরুমে এবং তৃতীয় বর্ষ কাটে এক ধরনের মাদকাসক্তির মধ্যে দিয়ে। যখন এসব শিক্ষার্থীদের হুশ হয় তখন তাদের পায়ের নিচে মাটি থাকে না।
তিনি আরও বলেন, প্রশাসনের নাকের ডগায় যখন ছাত্রলীগের ইচ্ছায় গণরুম টিকে আছে তখন আমরা বলতে বাধ্য হই, এই প্রশাসন একটি অকর্ম এবং অযোগ্য প্রশাসন। এই প্রশাসন যে গাদ্দারি করছে, বিশ্বাসঘাতকতা করছে আমরা সেই প্রশাসনকে ধিক্কার জানয়ে প্রশাসনের সামনে একটা আয়না দেখাবো সে আয়নায় এ প্রশাসন তাদের মুখটা দেখবে এবং আজীবন বমি করতে থাকবে।
পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দিন বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণ কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা না। এটা আমাদের সিস্টেমের সমস্যা। এই ধর্ষণ একটি প্রভাব মাত্র। মাদক ব্যবসা, বিভিন্ন অপকর্মের একটি চক্র এই সিস্টেমের সঙ্গে কাজ করছে।
দূর্ভাগ্যের কথা হলো, এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সেই সিস্টেমের একটি অংশ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। আবসিক হলের গণরুমগুলো শিক্ষার্থীদের শুধুমাত্র শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করেনি, পাশাপাশি কিভাবে শিক্ষার্থীদের বিকৃত মানসিকতা তৈরি হবে তার উৎপাদনক্ষেত্রে হিসেবে ব্যবহৃত হয়।’
তিনি আরও বলেন, এত সব ঘটনার পরও প্রশাসন কতটা নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। এখনো বিভিন্ন হলে যাদের ছাত্রত্ব অনেক আগেই সম্পূর্ণ হয়েছে তারা বহাল তবিয়তে আছেন । যারা নন এলোটেড কিংবা যারা রাজনীতিক ভাবে সম্পৃক্ত নয় যাদের খুঁটির জোর কম তাদেরই কেবল মাত্র হল-ছাড়া করার মাধ্যমে আই ওয়াশ করছে। আমরা এই আন্দোলনের মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগর যে মাদক আর নিপীড়কের জায়গা নয় সেটা পূর্বের ন্যায় আবারও প্রমাণ করবো।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী বলেন, ‘ আমরা পত্রিকার শিরোনামে ছাত্রলীগ কতৃক নারী নিপীড়নের খবর আগেও দেখেছি আর এখনও দেখছি। সময় পাল্টেছে কিন্তু শিরোনাম পাল্টায়নি। যারা ধর্ষণ ও নিপীড়নের ঘটনা ঘটায় তাদের চরিত্র পাল্টায়নি।
এ যাবতকালে ধর্ষক মানিক থেকে মোস্তাফিজ পর্যন্ত-সব জায়গায় ছাত্রলীগের নাম এসেছে। যতই বলেন মোস্তাফিজ আমাদের দলের কেউ না, তাতে ছাত্রলীগ এই ধর্ষণের দায় এড়াতে পারে না’।
তিনি আরও বলেন, যারা ছাত্রজীবনে নিপীড়নের সাথে যুক্ত ছিলেন তারাই হলগুলোতে প্রভোস্টের দায়িত্ব পাচ্ছেন। তারা কিভাবে হলের নির্যাতন বন্ধ করবেন?
অছাত্রদের হল থেকে বের করার নামে তারা সাধারণ শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছেন। একজন শিক্ষার্থীকে যখন গণরুমে র্যাগ দেওয়া হয় তখন বড় ভাই , শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস চলে যায়, আত্মসম্মান চলে যায়, বিশ্বাস চলে যায়। ফলে একদিন সে ধর্ষক মোস্তাফিজুর হয়ে ওঠে।’
যৌন নিপীড়ন ও মাদককাণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন উদাসীন উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্য ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন বলেন, যৌন নিপীড়নের ঘটনার কিছুদিন আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীন ৫২তম ব্যাচ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করেছে।
দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্বিবদ্যালয় হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাঁদেরকে স্বশরীরে ক্লাস থেকে বঞ্চিত করেছে, তাদেরকে হলে আসন দেয়নি। এ থেকে প্রমানিত হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা করে না।
সমাবেশে অন্যান্যদের মাঝে আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তজার্তিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল ও আব্দুল্লাহ আল নোমান,জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাথী মজুমদার, জাহাঙ্গীরনগর জোটের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সামি আল জাহিদ, প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ, সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, ফার্মেসী বিভাগের অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তার প্রমুখ।
প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান
বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭