ইনসাইড বাংলাদেশ

গৃহকর্মী প্রীতির মৃত্যু: সিসি ক্যামেরার ফুটেজ উদ্ধারের চেষ্টায় পুলিশ


প্রকাশ: 13/02/2024


Thumbnail

গৃহকর্মী প্রীতির মৃত্যুর ঘটনায় ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদকের ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামেরার গায়েব হওয়া ফুটেজ উদ্ধারে নেমেছে পুলিশ। ঘটনার পর রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ওই ফ্ল্যাটে তদন্তে গিয়ে ক্যামেরার কোনো রেকর্ড না পেয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা হতভম্ব হয়ে যান বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় রহস্য আরো ঘনীভূত হচ্ছে।

তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ওই ফ্ল্যাটে আগে থেকে ক্যামেরা থাকলেও ঘটনার দিনের কোনো ফুটেজ পাওয়া যায়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত কারাবন্দি আসামিদের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। মামলায় আসামি ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন আদালত। গতকাল সোমবার তানিয়া খন্দকারকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ সময় তার কাছে প্রীতি সম্পর্কে বিভিন্ন বিষয়ে জানতে চাওয়া হয়।

তদন্ত সূত্র জানায়, একই বাসায় বারবার কেন গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে এবং এর নেপথ্যে কী, তা বের করার জন্যই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। মারা যাওয়া কিশোরী গৃহকর্মীকে কেন গত দুই বছরেও বাড়ি যেতে দেওয়া হয়নি, এ বিষয়েও তানিয়ার কাছে জানতে চাওয়া হয়।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক বলেন, গৃহকর্মীর মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদে আদালত অনুমতি দিয়েছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে জেলগেটে পাঠিয়েছি। তিনি এখনো কাশিমপুরে অবস্থান করছেন।

তিনি বলেন, ‘মামলার যারা আসামি, তাদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ রয়েছে, তদন্ত কর্মকর্তা তা খতিয়ে দেখছেন। তদন্ত শেষে যা পাওয়া যাবে, তার ওপর ভিত্তি করে আমরা অতি দ্রুত আদালতে পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল করব।’

এদিকে সৈয়দ আশফাকুল হকের ফ্ল্যাটের সিসিটিভি ফুটেজ গায়েব হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। শাহজাহান রোডের ২/৭ নম্বর বাড়ির ৮/সি নম্বর ফ্ল্যাটের সিসি ক্যামরায় মেমোরি কার্ডটি পাওয়া যায়নি। তদন্তসংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তদন্তে নেমে আমরা প্রথমেই ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহের চেষ্টা করি। কিন্তু সৈয়দ আশফাকুলের বাসায় সিসি ক্যামেরা থাকলেও সেখানে কোনো মেমোরি কার্ড আমরা পাইনি।’

এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক গণমাধ্যমে বলেন, ‘আমরা মেমোরি কার্ড উদ্ধারের চেষ্টা করছি।’

বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি

এ হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচারের দাবিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন ওরাং ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষা কমিটির নেতারা। কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে স্মারকলিপিটি দেওয়া হয়।

এতে বলা হয়, ঘটনাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে বিচার করে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। একই ফ্ল্যাটে পর পর দুটি ঘটনা ঘটায় দ্রুত সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে বিচারের ব্যবস্থা করা হোক।

এদিকে প্রীতি ওরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি)। এ ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত এবং বিচারের জোরালো দাবি জানিয়েছে তারা। একই সঙ্গে প্রীতির পরিবারের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবিও তুলেছে সংগঠনটি।

জানা গেছে, চা শ্রমিক লুকেশ ওরাংয়ের মেয়ে প্রীতির বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিতিঙ্গা চা-বাগানে। ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের ঢাকার মোহাম্মদপুরের বাসায় প্রায় দুই বছর ধরে কাজ করছিল প্রীতি। গত ৬ ফেব্রুয়ারি প্রীতিকে ভবনের নিচতলা থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই তার মৃত্যু হয় বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন। 

এ ঘটনায় করা মামলায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তাঁর স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। এর আগে গত বছরের ৪ আগস্ট একই বাসা থেকে শিশু গৃহকর্মী ফেরদৌসী লাফিয়ে পড়ে গুরুতর আহত হয়।

এইচআরএফবির পক্ষ থেকে এ ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার জোরালো দাবি জানানো হয় বিবৃতিতে। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ এবং গৃহকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য ফোরাম কিছু দাবি জানায়।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭