ইনসাইড থট

‘রাজনৈতিকভাবে শূন্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বিএনপি’


প্রকাশ: 13/02/2024


Thumbnail

গত ১৫ বছর ধরে বিএনপির মতো রাজনৈতিক দল প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসেছে। এতে আমি একজন গণতন্ত্রের পূজারী হিসেবে নিজে খুব দুঃখ পেয়েছি। কেননা, যদি আমরা রাজনৈতিকভাবে বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করি, তাহলে দেখতে পাই, অনেক জায়গায় এক্সট্রিম রাইটিস্টরা যারা চরম দক্ষিণপন্থী, তারাই ক্ষমতায় আসছে। মধ্যমপন্থী বা বামদল আস্তে আস্তে প্রায় চলে গিয়েছে। কারণ, তারা জনসমর্থন ধরে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে। কিন্তু, মধ্যমপন্থী দলও থাকছে না। তেমন অবস্থায় যদি বিএনপি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কাদের উত্থান হবে? 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে চোখ বন্ধ করে বলা চলে, জামায়াত এবং জামায়াতের নেতৃত্বে, জামায়াত টাইপের অন্য সংগঠন মিলে একদম চরম দক্ষিণপন্থীরাই এ দেশে একটি রাজনৈতিক শক্তি হবে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে একটি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি, আরেকটা হবে জামায়াতের নেতৃত্বে চরম দক্ষিণপন্থী রাজনৈতিক শক্তি। সেখানে বিএনপি বলে কিছু থাকবে না। আর বাম দলের জনসমর্থন নেই আগেই বলেছি। এই কারণের জন্যে দেশের স্বার্থে বিএনপি যদি থাকতো তাতে আমি মনে করি, এরা ডানপন্থী হলেও এরা চরম ডানপন্থী না। এরা মাঝে মধ্যে যেটুকু চরম ডানপন্থী আচরণ করে নিজেদের ধ্বংস ডেকে আনে, এটা আমি মনে করি মূলত জামায়াতের বুদ্ধিতে। আর কিছু নিজস্ব লোকেরা বিদেশে থেকে বিদেশিদের ভুল তথ্য দিয়ে একটি ভুল মেসেজ পায়, তার ফলে এটা হয়। 

আমরা ঢালাওভাবে বলতে পারি না যে, বিদেশিরা বিএনপিকে বিভিন্ন বুদ্ধি দিয়ে শেষ করে দিচ্ছে। আজকাল ওয়েস্টার্ন ওয়ার্ল্ডে বা পশ্চিমা বিশ্বে বহু বিএনপি মাইন্ডেড গ্রুপ সেটেল। তারা যথেষ্ট চালাক এবং মোটামুটিভাবে মূলস্রোতে, সীমিত আকারে হলেও কিছু ক্ষমতা রাখে এবং তারা সেই বুদ্ধি দিয়ে এগিয়ে চলে। এখন, কেন বিএনপি এ রকম হচ্ছে? 

১৫ বছর হলো এটা আমাদের ভাবা দরকার। এটা প্রথমে চিন্তা করতে হবে যে, বিএনপির শেষ কবে কাউন্সিল মিটিং হয়েছে। হয়তো ওদেরও মনে নেই। একটি দলের সংবিধান সম্বন্ধে আলাপ-আলোচনা করা যেতে পারে যে, সংবিধান ঠিক নয়, আরও গণতান্ত্রকামী হতে হবে, সেটা পরের কথা। কিন্তু যেটুকু আছে সেটুকুতেও তো কাউন্সিল মিটিং করা দরকার। সেই কাউন্সিল মিটিং যে কি, সেটা সাধারণ সদস্যরাও বোধ হয় জানে না, দল নেতারা জানে না। অর্থাৎ কাউন্সিল মিটিং নাই। তাহলে, এখন বিএনপির প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে নিজ দলে আগে গণতন্ত্রকে সুসংহত করা। তার ফলে দলও সুসংগঠিত হবে এবং দলে গণতান্ত্রিক পরিবেশ হলে স্বাভাবিক নিয়মেই দল শক্তিশালী হবে। দল যদি শক্তিশালী হয় তাহলেই তারা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার চিন্তা করতে পারে।

সেই পুরানো গল্পের মতো, এক রাজা কখনো কাপড় পরে নাই। তাকে খুশি করার জন্য সবাই বলছে, আপনারা খুব পাতলা কাপড় পরেছেন খুব ভাল। এক ছোট্ট ছেলে বলে, এই রাজাতো ল্যাংটা। আসলে এই বিএনপি এখন ল্যাংটা অবস্থা অবস্থান করছে। তাদের কোন গণতান্ত্রিক চর্চা নাই। কোনো কাউন্সিল মিটিং নাই। কোনো কিছু না থাকার জন্যই জন্যে আগে দলটাকে তাদের সংগঠিত করা অত্যন্ত জরুরি। মাঝে মাঝে আমাদের মিডিয়ায় বক্তব্য দিল বা ছাপা হলেও কোন লাভ হবে না। লাভ যে হবে না, ১৫ বছর কি তাদের জন্য যথেষ্ট না? নাকি, তারা আরও ১৫ বছর দেখতে চায়। আর চার-পাঁচ বছর তো এমনিতেই বিএনপি থাকবে না। এটা যার সামান্য বুদ্ধি আছে সেও বুঝে। সুতরাং, আমরা চাই বিএনপি যে আগে তাদের দল সুসংগঠিত করে। নিয়মিত কাউন্সিল করে নেতৃত্ব ঠিক করে।

আর অন্য দল হলে বলতাম, এর যা দায়-দায়িত্ব আছে তাতে তারেক জিয়াকে দল থেকে ত্যাগ করতে হবে। যদিও তাতে কোন লাভ হবে না। কারণ, দলে কোন কাউন্সিল নাই, গণতন্ত্র নাই। কারণ, এই দল তারেক জিয়া বা যে-ই চালাক না কেন আমার মনে হয় না তাতে কোন উন্নতি হবে। আমার মনে হয়, এটা পরবর্তী পর্যায়ের। কারণ, এখানে যদি আরেকজন আসে এবং সেও তারেক জিয়ার মতো চালায় তাহলেও তো একই অবস্থা হবে। সুতরাং, একদম শেকড় বা শুরু থেকে আসতে হবে। তাতে তাদের স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা থাকতে হবে। 

স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা তাদের আছে যেমন মাঝে মধ্যে দুই একটা খুন খারাবি। তাও আস্তে আস্তে সরকার সেট হয়ে যাচ্ছে, ফলে এটাও তারা পারবে না। এবং তারা কোনভাবেই সুসংগঠিত হতে পারবে না, সম্ভাবনাও নাই। কেবল দল সুসংগঠিত করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে। কারণ, অ্যান্টি আওয়ামী লীগ সেন্টিমেন্টের লোকও থাকবে এবং যতদিন তারা ক্ষমতায় থাকবে এরাও সঙ্গে থাকবে। 

জিনিস দাম থেকে শুরু করে অনেকগুলো বিষয় আওয়ামী লীগের গুরুত্ব দিয়ে দেখা দরকার। এবং এটাও ঠিক যে, অনেকগুলো বিষয় খুব হুটহাট করে সমাধানও করতে পারবে না। খাদ্যদ্রব্য নিয়ে কথা বলা যেতে পারে। অনেকেই বলেন যে, আলুর দামের সঙ্গে ডলারের সম্পর্ক কি? সম্পর্ক আছে সরাসরি। কারণ, আলু উৎপাদনে যে সার লাগে তা আসতো ইউক্রেন থেকে। যুদ্ধ চলায় সেখান থেকে সার আনার খরচ অনেক বেশি। বেশি হলে কৃষকের তো বেশি দামে কিনতে হবে এবং সেও পণ্যের দাম বাড়াবে। সুতরাং, প্রত্যেক জিনিসেরই তো রুটকস্ট দেখতে হবে। 

আন্তর্জাতিক রাজনীতি যেভাবে চলছে, যুদ্ধ-বিগ্রহ হচ্ছে। এইদিক থেকে মধ্য প্রাচ্যেও যে কোন সময় যুদ্ধ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে যা কিছুতেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ইরানের পলিসি আর আমেরিকান পলিটিকাল যে পদ্ধতি তাতে পার্থক্য রয়েছে। এই কারণেই এই দুই দেশে সরাসরি যুদ্ধ হওয়ারও সম্ভাবনা অস্বাভাবিক নয়। আর এটা হলে তো, অনেকেই এর সঙ্গে যাবে, আমরাও এর ভুক্তভোগী হবো। সাধারণ জনগণ কিন্তু এসব বুঝতে পারছে না। তারা চায় জিনিসপত্রের দাম যেন নাগালের মধ্যে থাকে।

সুতরাং, অনেকগুলো সুযোগ বিএনপি পাবে। কিন্তু, অসুবিধা হচ্ছে, তাদের নিজেদেরই কোন কিছু ঠিক নাই। সেই রাজার গল্পের মতো, আগে নিজের কাপড় পড়তে হবে তারপর অন্যদের চিন্তা করতে হবে। এই কারণের জন্যে বিএনপি রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকার জন্য দলকে সুসংগঠিত করবে। এবং একই সঙ্গে জনগণের যেগুলো দাবি রাজনৈতিক দাবি বাদ দিয়ে সেগুলো সামনে আনতে হবে। 

খাবারের দাম কেন এতো বেশি? তারা (বিএনপি) সংসদে না থাকুক, বাইরে তো আছে। তাদের অনেক কিছু করার সুযোগ আছে। আর, এবার যে ৬২ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরকারের সুরে সুর মেলাবে এমন ভাবারও কোন কারণ নাই। এখানে বাইরে আন্দোলন হলে তা ভেতরেও যেতে বাধ্য। বিএনপি যদি ঠিক মতো তাদের কার্ডটা প্লে করতে পারে তাহলে এর সুফল তারা পাবেই। তাতে দেখা যাবে, সংসদেও তাদের বক্তব্য কোট করা হবে, পত্রপত্রিকায়ও লিখবে। কিন্তু, আমার মনে হচ্ছে না বিএনপি এই লাইনে যাচ্ছে। বিএনপি আসলে মুসলীম লীগের যে পরিণতি সেই দিকেই যাচ্ছে। এই জন্য আমি আগে থেকেই বিএনপিকে বলে রাখছি, তোমরা অন্তত মুসলীম লীগ হয়ে দেশের সর্বনাশ করো না। কারণ, এই ক্ষতি তো শুধু বিএনপির হবে না, হবে সমগ্র বাংলাদেশের। কেননা, দেশে বিরোধী দল দরকার। কারণ, আমি আগেই বলেছি, চরম ডানপন্থী দল আমরা চাই না। কিন্তু, ডানপন্থীদের উত্থান তো পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হচ্ছে, এখানেও হবে। সেই উত্থানটা বিএনপির মধ্যে হলে অন্তত জামায়াত থাকবে না, ভালো হবে। মন্দের ভালো যেমন, সেইটা। এই কারণে বিএনপিকে তথাকথিত বুদ্ধিজীবী বাদ দিয়ে সহজ সরল পথে যেতে হবে। আগে দল সংগঠিত করে তারপর সরকার কি কি ভুল করেছে সেগুলো তুলে ধরতে হবে। তাহলেই বিএনপি টিকে থাকবে না হলে তারেক জিয়ার চাঁদাবাজিও চলবে অথবা সে আবার নতুন কৌশল ধরবে। এভাবেই তার এবং তার ১৪ পুরুষ জীবন পার করতে পারবে। কারণ, তাদের টাকা মধ্যপ্রাচ্যসহ অনেক দেশে আছে। টাকা তাদের কোন বিষয় না। কিন্তু, বিষয় হচ্ছে- রাজনৈতিকভাবে তারা শূন্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭