ইনসাইড বাংলাদেশ

চুক্তির মিছিলে তারা


প্রকাশ: 13/02/2024


Thumbnail

সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের চাকরির বয়স শেষ হয় ৫৯ বছরে। ৫৯ বছর হলে তিনি পিএলআর বা অবসরোত্তর ছুটিতে যান। এক বছর পিএলআর ভোগ করার পর তার অবসর চূড়ান্ত হয়ে যায়। কিন্তু বাংলাদেশে আমলাদের অবসরের সময়সীমা কখন তা নির্ভর করে তিনি কতটুকু সরকার সরকারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ চাটুকারিতায় তিনি কতটুকু উত্তীর্ণ হতে পারলেন, তার ওপর। তার যোগ্যতা, মেধা ইত্যাদি অনেক ঐচ্ছিক বিষয়। তবে তিনি যদি ঘনিষ্ঠ হতে পারেন বা চাটুকারিতায় করতে পারদর্শী হতে পারেন তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ অনিবার্য। বাংলাদেশ এরকম বহু পদ আছে যেখানে বছরের পর বছর একজন সরকারি কর্মকর্তা চুক্তিতে থাকছেন এবং সময় অতিবাহিত করছেন। 

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকজন সরকারি সচিবের অবসরে যাওয়ার কথা এবং অবসরে যাওয়ার আগে তারা চুক্তি প্রাপ্তির জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। আর যারা চুক্তিতে আছেন এদের কারও কারও চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে তারাও আবার যেন চুক্তিবদ্ধ হতে পারেন সে চেষ্টা করছেন। প্রশাসনের অন্দরমহলে চাকরির শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের চুক্তি প্রাপ্তির জন্য তৎপরতার খবর পাওয়া গেছে। 

বর্তমানে রেলওয়ে সচিব ড. মোঃ হুমায়ুন কবীরের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন বা তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের চেষ্টা তদবির চলছে এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এছাড়া  কৃষি সচিব ওয়াহিদা আক্তারের চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ১২ মার্চ। তারও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের প্রাপ্তির গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে তৎপরতার কথাও শোনা যাচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। 

বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ ইতোমধ্যেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন, তার ১৮ মে বর্তমান চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। এক বছরের জন্য চুক্তিতে থাকা এই সিনিয়র সচিব আবার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। তার প্রভাব রয়েছে এবং এই প্রভাবের জন্য তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেতে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছে। তবে একটি সূত্র বলছে, শেষ পর্যন্ত যেহেতু তিনি এক বছরের জন্য চুক্তিতে নিয়োগ আছেন, সে জন্য তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নাও হতে পারে। 

প্রশাসনে আরেক জন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকা কর্মকর্তা কাজী ওয়াছি উদ্দিন আগামী ১০ মার্চ অবসরে যাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তার অবসরের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছিল। তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। এই নিয়োগের মেয়াদ ১০ মার্চ শেষ হয়ে যাচ্ছে। তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে থাকতে পারেন এমন গুঞ্জন রয়েছে। এর আগে যিনি গৃহায়ন পূর্ত সচিব ছিলেন, তিনি রেকর্ড সংখ্যক চারবার চুক্তি নবায়ন করেছিলেন। এখন দেখার বিষয় কাজী ওয়াছি উদ্দিনের ক্ষেত্রে কতবার চুক্তির নবায়ন ঘটে। এছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং বিভাগের সচিব শেখ মোহাম্মদ সলীম উল্লাহ চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ২০ মে। তিনিও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের জন্য এখন থেকেই তৎপরতা করছেন বলে একাধিক সূত্র মনে করছে। 

সাধারণত একজন সচিবের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ হয় তার যোগ্যতা এবং ওই মন্ত্রণালয়ে শূন্যতার প্রেক্ষাপটে। যদি কোন কারণে সরকার মনে করে যে, ওই সচিব বা ওই ব্যক্তিকে পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হলে একটি শূন্যতা সৃষ্টি হবে বা চলমান কোন প্রকল্প বাধা প্রাপ্ত হতে পারে সেক্ষেত্রে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হতে পারে। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ রীতিমতো একটি মহামারি চলছে। এই মুহূর্তে বাংলাদেশে ১২ জন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি চুক্তিভিত্তিক আছে। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মাহবুব হোসেন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্যসচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। প্রতিরক্ষা সচিব গোলাম মোঃ হাসিবুল আলম চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে আছেন। বেসামরিক বিমান চলাচল সচিব মোঃ মোকাম্মেল হোসেন আছেন চুক্তিতে। আর এই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কারণে প্রশাসনে চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়ছে বলেও কোন কোন মহল মনে করছেন। আর তাই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের অবসানের কথা বলছেন অনেকে। 


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭