ক্লাব ইনসাইড

সন্ত্রাস ও মাদক কারবারের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে : জাবি ছাত্র ইউনিয়ন


প্রকাশ: 13/02/2024


Thumbnail

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) দফা দাবিতে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের ব্যানারে অবরোধ কর্মসূচিতে 'সন্ত্রাস মাদক কারবারের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়' বলে মন্তব্য করেছেন ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ।

মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৯টায় দ্বিতীয় দিনের মতো প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের প্রতিকী অবরোধ কর্মসূচি পালনকালে এসব বলেন তিনি।

অবরোধ কর্মসূচিতে হাসিব জামানের সঞ্চালনায় ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের (একাংশ) আহ্বায়ক আলিফ মাহমুদ আরও বলেন, আমাদের যে দাবি তা যৌক্তিক। অছাত্রদের বের না করে বরং প্রশাসন নিয়মিত শিক্ষার্থীদের হয়রানি করছে।

নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিশ্চিত সহ তাকে সহায়তাকারী, বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের ঘটনার দায়ে প্রক্টরের পদত্যাগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনের সহায়তায় ২০১৭ সাল থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয় মাদকের রাজ্যে পরিণত হয়েছে। আমাদের দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনে যাবো। প্রশাসন দায় এড়িয়ে যেতে পারবেনা।

গত ১৫ বছরে প্রতিটা হল টর্চার সেলে পরিণত হয়েছ, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যে বিচারহীনতা চলছে তার প্রভাব এখানে পড়েছে' বলে মন্তব্য করে সরকার রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামছুল আলম লেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে মাদকমুক্ত করতে হবে আর অছাত্রদের সরিয়ে দিতে হবে। প্রশাসন আমাদেরকে বলেছিল, পাঁচ কর্মদিবসে অছাত্রদের বের করে দিবে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে ঢাকায় দ্বারে দ্বারে ঘুরছে।

তিনি আরও বলেন, সোমবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রশাসন দেখা করেছে। এখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কী করবেন? তার কাছে গিয়েছিলেন নিশ্চয় ক্যাম্পাসে পুলিশের সহায়তা নিয়ে তল্লাশি করার জন্য। কিন্তু পুলিশ এখানে কী সহায়তা করবে, তারা কি বহিরাগত অছাত্রদের চেনে? এখানে হল প্রশাসন যদি কাজ করে তাহলে কিন্তু সমাধান হয়। কিন্তু তারা কেউ কাজ করছেন না।

'এই প্রশাসন যে তাদের ব্যর্থতার দায় এড়াতে পারে না এটাই তারা উপলব্ধি করতে পারছে না' মন্তব্য করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি প্রাণ রসায়ন অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, এক পৈশাচিক ঘটনা জাবির অনেকগুলো ব্যাধিকে দায়িত্বশীল সামনে তুলে ধরেছে। এই সংক্রামক ব্যাধিগুলো দূর করা যাবে না এটা এমনও না। এটা অবশ্যই দূর করার মত। কিন্তু এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনকে যে দায়িত্বশীল হতে হবে সেই দায়িত্বশীলতা আমরা দেখিনি।এ নিয়ে  বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের কোনো তৎপরতাও আমরা দেখতে পাচ্ছি না।

তিনি আরও বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদক কীভাবে ছড়িয়ে গেছে, মাদক ব্যবসা, চোরা চালান, মাদক সেবন সামনে এসেছে। ্যাবের ব্রিফিং থেকে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে দিনের পর দিন যে পাশবিক ঘটনাগুলো ঘটছিল তা এই অছাত্ররা করছিল। 

এসময় সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী, সাংবাদিকতা গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমেনা ইসলাম, প্রাণরসায়ন অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক বোরহান উদ্দিন, ভূগোল পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ।

এর আগে গতকাল সোমবার ( ১২ ফেব্রুয়ারি) দফা দাবিতে সকাল পৌনে ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত নতুন প্রশাসনিক ভবনে প্রতীকী অবরোধ করেছিলনিপীড়ন বিরোধী মঞ্চ'

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত প্ল্যাটফর্মনিপীড়নবিরোধী মঞ্চেরউত্থাপিত পাঁচ দফা দাবিগুলো হল- ধর্ষক তার সহায়তাকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা; মেয়াদোত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের করে গণরুম বিলুপ্তপূর্বক নিয়মিত শিক্ষার্থীদের আবাসন নিশ্চিত ্যাগিং সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়ক শিক্ষক মাহমুদুর রহমান জনির বিচার নিষ্পত্তি করাসহ ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে নানাবিধ অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের আওতায় আনা; নিপীড়কদের সহায়তাকারী প্রক্টর মীর মশাররফ হোসেন হলের প্রাধ্যক্ষের অপরাধ তদন্ত সুষ্ঠু হওয়ার স্বার্থে তদন্ত চলাকালে তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া; মাদকের সিন্ডিকেট চিহ্নিত করে জড়িতদের ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া।

প্রসঙ্গত, এদিকে চলমান আন্দোলনের পঞ্চম দিন রবিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) আন্দোলনকারীদের মুখোমুখি হন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গ। আন্দোলনরত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবি মানার বিষয়ে আশ্বস্ত করলে সিন্ডিকেটের বেধে দেওয়া পাঁচদিনের সময়ের মধ্যে আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করতে না পারা সহ গনরুম বিলুপ্ত করে মিনি-গনরুম চালু রাখায় এক পর্যায়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন।

ছাড়া আন্দোলনকারীরা আবাসিক হলে অবস্থান করা অছাত্রদের তালিকার বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্যসহ উপস্থিত প্রশাসনিক শিক্ষকরা তা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন এবং আরও দুই-তিন দিন সময় চান।

এক পর্যায়ে প্রশাসনের অক্ষমতার বিষয়টি তুলে ধরে নিপীড়ন বিরোধী মঞ্চের সংগঠকদের পক্ষে পারভীন জলি আগামী দুই দিন প্রতিকী অবরোধ কর্মসূচির ঘোষনা দেন। ছাড়া প্রশাসন দাবি না মানলে ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রশাসনের ব্যার্থতার প্রতিবাদে এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন তিনি।

এদিকে আন্দোলন শেষে বেলা ১১টার দিকে আগামীকাল বুধবার পুনরায় প্রতীকী অবরোধের ঘোষণা দিয়ে আজকের অবরোধ তুলে নেন তারা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭