ইনসাইড বাংলাদেশ

জয়নাল-জাফর-কাঞ্চন-দিপালীর রক্ত মাখা সেইদিন


প্রকাশ: 14/02/2024


Thumbnail

১৯৮৩ সাল ১৪ ফেব্রুয়ারি। স্বৈরাচারী এরশাদ সরকার ক্ষমতা দখল করেছে। ক্ষমতা দখল করার পর বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানানোর অসমাপ্ত মিশন সমাপ্ত করার কাজ তিনি দ্রুত এগিয়ে নিতে চাইলেন। আর এজন্যই ড. মজিদ খানকে দিয়ে এক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করলেন। যে শিক্ষানীতি বাঙালি সংস্কৃতি, বাঙালি ঐতিহ্যকে ধ্বংসের আরেক নীল নকশা। আর এর প্রতিবাদে ক্ষোভে ফেটে পড়লো ছাত্র সমাজ। ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংগঠনগুলো আন্দোলনের কর্মসূচি শুরু করে।

১৪ই ফেব্রুয়ারি ছিলো শিক্ষা ভবন ঘেরাও কর্মসূচি। আর সেই কর্মসূচি পালন উপলক্ষে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সচিবালয়-শিক্ষা ভবন অভিমুখে শান্তিপূর্ণ এক পদযাত্রা শুরু করে। কিন্তু কার্জন হলের সামনে স্বৈরাচারী এরশাদের পেটোয়াবাহিনী নির্মমভাবে চড়াও হয় এই নিরস্ত্র ছাত্রদের মিছিলের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রচিত হয় আরেকটি রক্তাক্ত অধ্যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তাণ্ডবে মুহূর্তের মধ্যেই এক রক্তাক্ত অধ্যায় রচিত হয় কার্জন হল সংলগ্ন এলাকায়। এরপর পুলিশ নির্বিচারে গুলি শুরু করে। আর পুলিশের গুলিতে মারা যায় জয়নাল, জাফর, কাঞ্চন, দিপালীসহ আরো অনেক নাম না জানা শহীদ। এই রক্তের ওপর দিয়েই গড়ে ওঠে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এবং এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়।

এই ঘটনার পরপরই আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসভবনের জরুরি বৈঠকে মিলিত হন। তিনি এই হত্যাকাণ্ড এবং স্বৈরাচারের নির্মমতার তীব্র প্রতিবাদ করেন। আর আওয়ামী লীগের এই বৈঠক থেকে গ্রেপ্তার করা হয় শেখ হাসিনা, বেগম সাজেদা চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদেরকে। শেখ হাসিনাকে ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় এবং পরবর্তীতে তাকে গৃহবন্দি করা হয়। ১৯৮৩ সালের এই দিনটি গণতন্ত্রের জন্য এক রক্তাক্ত স্মৃতি। এই দিনে জাফর, জয়নাল, মোজাম্মেল, কাঞ্চন, দিপালী সাহার রক্তে রঞ্জিত হয়ে আমাদের গণতন্ত্রের সংগ্রামের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে এই আন্দোলন ক্রমশ স্বৈরাচার পতনের আন্দোলনে রূপ গ্রহণ করে এবং দীর্ঘ আন্দোলনের পর ১৯৯০ সালের ৬ ডিসেম্বর এরশাদের পতন হয়।

১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি যেমন বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সূতিকাগার, ঠিক তেমনি ১৯৮৩ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের প্রথম সূচনাকেন্দ্র। এই আন্দোলন আস্তে আস্তে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে, নানা চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়ে গেছে এবং একটা সময় স্বৈরাচারকে পদানত করতে হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে সূতিকাগার এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল এই দিনে। ভালোবাসা দিবসের আড়ালে যেন এই শহীদদের স্মৃতি আমরা ভুলে না যাই, সেই ব্যাপারে আমাদের সকলের সচেতনতা দরকার।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭