ইনসাইড থট

বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে কি বলছে বিজ্ঞান?


প্রকাশ: 14/02/2024


Thumbnail

প্রতিবছরই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ আসলে প্রেম বা ভালোবাসার বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণভাবে মানব সমাজের সামনে চলে আসে। ভালোবাসার অনুভূতি মনে করিয়ে দেয় কাঙ্ক্ষিত মানুষটির কথা। নিজের অনুভূতির সঙ্গে আপন অনুভূতিকে মুখোমুখি দাঁড় নিমিষেই করায়। পৃথিবী ব্যাপী মানুষ এটি সেভাবেই উদ্‌যাপন করে। হোক তিনি বয়সে তরুণ কিংবা জীবনের পড়ন্ত বেলার কেউ।

অনেকের কাছে এই ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ হয়ত ভালোবাসা মানুষের জীবনে সবচেয়ে সুন্দরতম অংশ। সাধারণ থেকে তারকা, সবার জীবনেই ভালোবাসার মানুষের জায়গা অপরিসীম। যৌবনে পা দিয়ে প্রেমে পড়েননি, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর! কেউ ভালোবাসায় নিজেকে সঁপে দিয়েছেন, সাক্ষী হয়েছেন অনন্তকালের। আবার কেউ বা একাধিক প্রেম করে ভালোবাসাকে করেছেন রঙিন।

এক গবেষণায় দেখা যায়, ভালবাসলে মানুষের মন ও শরীর শান্ত থাকে। বিশেষ এক ধরণের হরমোন নিঃসৃত হওয়ার কারণে মানুষের নার্ভাস সিস্টেমকে পুঃগঠিত করতে সাহায্য করে, এতে করে তৈরী হয় ব্রেনসেল। এটি মুলত মানুষের স্বৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে।

মনোবিজ্ঞানীদের মতে, প্রেমে পড়লে শরীরের অনেকাংশে পরিবর্তন ঘটে। মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পরিবর্তিত হয়ে যায়, হৃৎপিণ্ডের গতি পরিবর্তিত হয়। এছাড়াও যদি কেউ প্রেমিক-প্রেমিকা বা কাঙ্খিত মানুষটির সাথে কথা বলে তাহলে তার হার্টবিট ৩ গুন বেড়ে যায়। শরীরের নানান ব্যথা কমে যায়, মুখে স্বাদ বেশি হওয়াসহ শারীরিক পরিবর্তন ঘটে বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। নারী পুরুষ পরস্পর সংযোগ, একে অপরকে অঙ্গীকারে আবদ্ধ করার পেছনে প্রেমের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।

প্রচলিত আছে, প্রেমে পড়লে মানুষ সাহসী হয়ে যায়। দরকার পড়লে বাঘের ডেরায় গিয়ে হানা দিতে পিছপা হয় না। বলতে গেলে, ধরাকে সরা জ্ঞান করে আর কি। এর পিছনেও কিন্তু কারণ আছে।

ভালবাসা চলাকালীন সময়ে মস্তিষ্কের একটি অংশ- যার নাম ‘এমাইগডালা’ তা নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। মূলত এই অংশ মানুষকে ভয়ের ব্যাপারে সতর্ক করে তোলে বিপদজনক পরিস্থিতি থেকে, নিজেকে সুরক্ষিত রাখার বার্তা দিয়ে থাকে । যখন এটা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকে তখনি প্রেমিক বা প্রেমিকা অপ্রতিরোধ্য মননে বিশ্বাসী হয়ে উঠে।

গবেষণায় দেখা যায়, প্রেমে পড়লে মানুষের মধ্যে বেশ কিছু পরিবর্তন আসে। এ কারণে প্রেমিক কিংবা প্রেমিকার মস্তিষ্কে নাটকীয় পরিবর্তন হয়।। তারা এতোটাই আনন্দিত থাকেন যে, তাদের মস্তিষ্কে ফিনাইলিথিলামাইন (পিইএ) নামক রাসায়নিকে উৎপাদন বেড়ে যায়। এই রাসায়নিক মানুষের মধ্যে প্রেমের আসক্তি বাড়ায়। মস্তিষ্কের একই ক্ষেত্রগুলোর ওভারল্যাপিং নিউরোকেমিক্যাল প্রতিক্রিয়াগুলোও প্রেমের জন্যই দায়ী।

এছাড়াও প্রেম নিয়ে বিশ্বের একাধিক বিজ্ঞানীরা তাদের অভিমত প্রকাশ করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের কানেটিকাট কলেজের মনোবিজ্ঞানী জেফারসন সিংগার বলেন, ‘অধিকাংশ মানুষের ১৫ থেকে ২৬ বছর বয়সের মধ্যে মস্তিষ্কে ‘মেমোরি বাম্প’ বা ‘আকস্মিক স্মৃতি’র একটি বিষয় থাকে। আকস্মিক স্মৃতির বিষয়টি যাদের থাকে তারা অধিক স্মৃতিকাতর বা স্মৃতি রোমন্থন করেন। এই স্মৃতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক স্মৃতি হয়।

নর্থ কেরোলাইন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মনে করেন, এক মহা ঔষধের নাম হল ভালোবাসা। কারো প্রেমে পড়লে জন্ম নেয় "এনডোর ফিন" নামক হরমোন যা কিনা শরিরের ত্বককে নরম ও মসৃন করে। এমনকি মুখের সোন্দর্যও বাড়ায় বলে দাবি তাদের।

নিনোটচকাতে গ্রেটা গার্বো তার নায়ক মেলিভন ডগলাসকে বলছেন, ‘Love is a romantic designation for a most ordinary biological or shall we say chemical? Process alot of nonsense is talked and written about it’ অর্থাৎ, তাদের অনুভূতিতে এমন একটি শিহরণ বিচ্ছুরিত হয় যেন তারা ভেসে যাচ্ছে। তার গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে যে, চার চোখের মিলন, হাতের মৃদু পরশ অথবা শরীরের ঘ্রাণ মস্তিষ্কে সৃষ্ট করে বন্যার স্রোতধারা। এই স্রোতধারা রক্তপ্রবাহের সঙ্গে মিশে শিরা-উপশিরার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সারা দেহে। সৃষ্টি হয় এক অদম্য অনুভূতি ও শিহরণের। এরপর শারীরিকভাবে যা ঘটে তার কিছু হয় দৃশ্যমান। আর কিছু থাকে অদৃশ্য।

গবেষকরা বলছেন, এ ক্ষেত্রে দেহে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় রক্ত চলাচল করে যা স্বাস্থের জন্য ভালো। প্রেমিক যুগল যারা পাশাপাশি বসে সময় কাটায়, নিঃস্বার্থভাবে একে অপরকে ভালোবাসে তাদের দুঃচিন্তা কমে যায়, হতাসা দূর হয়,মানসিক স্বাস্থের উন্নতি ঘটে । যাদের মনে ভালোবাসা নেই তারা একাকিত্বে ভোগে যা অকাল মৃত্যুর কারন ৫ গুন বাড়িয়ে দেয় । ভালো না বাসলে মনে ক্রোধ জন্মে যা স্বাস্থের জন্যও খতিকর।

এমনকি ভালোবাসার অমর কৃর্তিও রয়েছে বিশ্বখ্যাত কবি শেক্সপিয়ার, হোয়াট্ ওয়ার্ড, রবিন্দনাথ ও নজরুল এর কবিতায় ।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭