ইনসাইড পলিটিক্স

যুক্তরাষ্ট্র-বিএনপির সম্পর্ক: যে ভাবে সৃষ্টি হল দূরত্ব


প্রকাশ: 14/02/2024


Thumbnail

দু বছর আগেও বিএনপির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক ছিল অত্যন্ত মধুর। মূলত যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে ছিল বিএনপি। যুক্তরাষ্ট্র অবাধ, সুষ্ঠু এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে বর্তমান সরকারকে স্বীকৃতি দেবে না, নানা রকম ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে- এ সমস্ত আশ্বাসে বিশ্বাস রেখেছিল দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। আর সে কারণেই বিএনপি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে অটল ছিল।

তারা মনে করেছিল যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সরকারের একটা দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া ইউনূস ইস্যু, সুশীল সমাজের মার্কিন বন্ধুদের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েনের সম্পর্ক ইত্যাদি সব কিছু নিয়েই এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছিল আওয়ামী লীগ-মার্কিন সম্পর্কে। আর এটি ছিল বিএনপির চাঙ্গা হওয়ার প্রধান কারণ। কিন্তু ২৮ অক্টোবরের পর থেকে আস্তে আস্তে বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। নির্বাচনের পর এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর বিএনপিকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছে না। এমনকি নির্বাচনের পর শুধুমাত্র মঈন খান মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পেরেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে সমস্ত লবিস্ট ফার্মগুলো সরকারের বিরুদ্ধে প্রচারণার জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার পেয়েছিল বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের কাছ থেকে, তারাও এখন খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না। 

কেন এই পরিস্থিতি, এর কারণ কী? কেন বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের। এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে কূটনেতিক বিশ্লেষকরা অনেক রকম কারণ খুঁজে পেয়েছেন। তার প্রধান কারণ হচ্ছে 

১. বিএনপির নেতৃত্বের শূন্যতা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক কুটনীতিক মনে করেন, বিএনপিতে এরকম একজন নেতা নেই, যিনি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন বা পুরো দেশে তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। আর এ কারণেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মনে করে যে, আওয়ামী লীগের বিকল্প বিএনপি নয়।

২. দ্বিতীয় সুশীল সমাজের অনাগ্রহ: সুশীল সমাজ ক্ষমতা নিতে চাইলেও একটি অনির্বাচিত সরকারে আসতে চায়। সেখানেও একটি শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল। বিশেষ করে এরকম একটি অনির্বাচিত সরকারের প্রধান কে হবেন তা নিয়ে সুশীলরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি। অন্যভাবে বলা যায় যে, সুশীলের মধ্যে থেকে এমন কোন ব্যক্তি পাওয়া যায়নি, যিনি সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য আস্থাভাজন এবং জনপ্রিয়ও বটে। এটি একটি বড় কারণ যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের মূল পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে এবং বিএনপির সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করছে। 

৩. সরকারের আশ্বাস: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে শেষ দিকে সরকার বেশ ভালোভাবেই কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে এবং বিভিন্ন পর্যায়ে তৎপরতা চালায়। এমনকী মার্কিন নীতিনির্ধারকদের কাছেও সুস্পষ্ট বার্তা পৌঁছে দেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ওপর আস্থা রাখে।

৪. ভারতের ভূমিকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বিএনপির দূরত্ব তৈরি হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হিসেবে বিবেচনা করা হয় ভারতের ভূমিকা। কারণ ভারত বুঝাতে পেরেছে যে, বিএনপি সাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করে। জঙ্গিবাদের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক রয়েছে। তাছাড়া এই দলটি ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেয়। মূলত ভারতের কারণেই শেষ পর্যন্ত বিএনপি প্রীতি থেকে সরে আসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আর এ সমস্ত কারণেই এখন বিএনপির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আনুষ্ঠানিকতার। মদ্দা কথা হলো বিএনপিকে এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের বিকল্প ভাবতে পারছে না।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭