ইনসাইড বাংলাদেশ

বাংলাদেশে চীন-ভারত লড়াইয়ের মহড়া চলছে?


প্রকাশ: 14/02/2024


Thumbnail

বাংলাদেশের রাজনীতি অন্যান্য দেশের চেয়ে একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপট রচনা করতে পেরেছে। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগই একমাত্র ক্ষমতাসীন দল যাদের সাথে একাধারে ভারত এবং চীনের অত্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। চীন যেমন বর্তমান সরকারকে সমর্থন করেন করে, বর্তমান সরকারের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায় ঠিক তেমনি ভারতও বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ককে বড় গুরুত্ব দেয় এবং বর্তমানে এই সার্ক অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক তীব্র। কিন্তু বাংলাদেশকে ঘিরে ভারত এবং চীনের আলাদা আলাদা কৌশল রয়েছে, আলাদা আলাদা লক্ষ্য রয়েছে। আর এই লক্ষ্যগুলো যখন সাংঘর্ষিক হবে তখন ভারত এবং চীন বাংলাদেশ ইস্যুতে বিভক্ত হয়ে পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাছাড়া সামনের দিনগুলোতে যেভাবে পরিস্থিতি এগোচ্ছে তাতে নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ইস্যুতে ভারত এবং চীনের একটি প্রকাশ্য লড়াই সৃষ্টি হতে পারে। এই লড়াইয়ের একটি মহড়া সাম্প্রতিক কালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি জটিল এবং এক্ষেত্রে কূটনৈতিক দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। 

বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক এবং ভূ রাজনৈতিক দুটি বিষয়ে ভারত এবং চীনের আলাদা আলাদা স্বার্থ রয়েছে, আলাদা আলাদা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এখন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সঙ্কটে ঝুঁকছে আছে এবং অর্থমন্ত্রী নিজে সংসদে স্বীকার করেছেন যে, অর্থনীতি খারাপ, তবে সেটা ভালোর দিকে যাচ্ছে। তবে যতই ভাল হোক না কেন, অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জনে এবং অর্থনীতিকে গতিতে ফিরতে সময় লাগবে এবং এই সময়ে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বৈদেশিক মুদ্রা। আর এই বৈদেশিক মুদ্রার যে উৎস সেগুলো আস্তে আস্তে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া বৈদেশিক মুদ্রায় দেনা শোধেরও দায় আছে। এরকম পরিস্থিতিতে ভঙ্গুর অর্থনীতি নিয়ে ঝুঁকছে থাকা দেশগুলো সহজেই চীনের বশ্যতা স্বীকার করেছে। কাজেই বাংলাদেশেও চীনের প্রভাব সামনের দিনগুলোতে বৃদ্ধির শঙ্কা রয়েছে এবং এ রকম প্রভাব বৃদ্ধির ফলে চীন তার রাজনৈতিক স্বার্থে কাজে লাগে বা তার রাজনৈতিক প্রয়োজনে যে প্রকল্পগুলো আছে সেই প্রকল্পগুলোকে গুরুত্ব দিবে। এর ফলে সেই প্রকল্পগুলো সরকারের ইচ্ছায় হোক, অনিচ্ছায় হোক গ্রহণ করতে হবে। আর এ ধরনের যে প্রকল্পগুলো চীন নেবে সেই প্রকল্পগুলোর অধিকাংশই ভারতের স্বার্থের পরিপন্থী। এই অঞ্চলে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের জন্য চীন কৌশলগত ভাবে এই ধরনের প্রকল্পগুলো নেবে। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ কী করবে সেটি একটি বিবেচনার বিষয়। 

নির্বাচনের পরপরই চীনের তৎপরতায় সুস্পষ্ট হয়েছে যে চীন এ রকম কিছু প্রকল্পের টোপ সরকারকে দিতে চায়। অন্যদিকে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কটি রাজনৈতিক, প্রতিবেশীসুলভ এবং অর্থনৈতিকও বটে। ভারত বাংলাদেশের ওপর অনেকখানি নির্ভরশীল। বিশেষ করে বাংলাদেশের ভূখণ্ড যেন ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কাজে ব্যবহৃত না হয়, সে জন্য ভারত সবসময় সচেতন। আর এটির কারণেই ভারত বাংলাদেশকে এবং বর্তমান সরকারকে সমর্থন দিচ্ছে। এর ফলে একটি বিষয় সুস্পষ্ট ভাবে সামনে এসেছে যে, বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত খুব বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে না। চীনের যে সমস্ত প্রকল্পগুলোতে ভারতের ভূমিকা নেই সে সমস্ত প্রকল্পগুলোতে ভারত হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু প্রশ্ন হলো যে, ভারত কখনোই চায় না যে, চীন বাংলাদেশকে মালদ্বীপ বা শ্রীলঙ্কার মতো অবস্থায় নিয়ে যাক। সে কারণেই চীনকে থামাতে ভারত নিশ্চিয় বাংলাদেশকে ঘিরে কোন সুনিদিষ্ট পরিকল্পনা গ্রহণ করবে। আর এর ফলে বাংলাদেশে চীন-ভারতের লড়াইয়ের একটা ক্ষেত্র তৈরি হবে বলে মনে করছেন কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭