ইনসাইড পলিটিক্স

সংরক্ষিত আসনে জন প্রত্যাখ্যাতদের মনোনয়ন কতটা যুক্তি সঙ্গত?


প্রকাশ: 15/02/2024


Thumbnail

জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের ৪৮ টির মনোনয়ন ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ। গতকাল সংরক্ষিত আসনে যারা সংসদে যাচ্ছেন, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে আওয়ামী লীগের সংসদীয় বোর্ডের সভার পর। সংসদীয় গণতন্ত্রের মূল চেতনা হল জনগণের শাসন, জনগণ প্রজাতন্ত্রের মালিক। এই পদ্ধতিতে জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই জাতীয় সংসদে আসেন এবং জাতীয় সংসদ হয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রবিন্দু। আর এই কারণেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গুরুত্ব এই সরকার ব্যবস্থায় অত্যন্ত বেশি। জনগণের ভোটে যারা নির্বাচিত হন না, তাদের মন্ত্রী করার রেওয়াজও সংসদীয় গণতন্ত্রে খুব একটা দেখা যায় না। যদিও সংবিধান অনুযায়ী মন্ত্রিসভায় এক দশমাংশ অনির্বাচিত প্রতিনিধি রাখা যায়, কিন্তু তারপরও যারা নির্বাচনে পরাজিত হন, তাদেরকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত রাখার নীতি সংসদীয় গণতন্ত্র চর্চা করে না। 

১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়। কিন্তু ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট নেতা আমির হোসেন আমু পরাজিত হয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সেই সময় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেতা হওয়ার পরও তিনি প্রথমে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেননি। তবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও রয়েছে। এবার যে ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে তাদের কেউ কেউ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং প্রতিপক্ষের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন। অর্থাৎ জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এদের মধ্যে অন্তত দুইজন আছেন যারা নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করে ধরাশায়ী হয়েছিলেন। 

ঢাকা-৪ থেকে সংসদীয় আসনের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন সানজিদা খানম। তিনি ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছিলেন। এই পরাজয়ের মানে হলো জনগণ তাকে সংসদ সদস্য হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি এবার সংরক্ষিত কোটায় আবার এমপি হতে যাচ্ছেন। একই ঘটনা ঘটেছে মেহের আফরোজ চুমকির ক্ষেত্রেও। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পরও তিনি সংসদে যাচ্ছেন। 

প্রশ্ন হলো যে যারা নির্বাচনে পরাজিত হয়েছিলেন তাদেরকে জনগণ পছন্দ করেননি। অর্থাৎ তারা জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রত্যাখ্যাত হয়েছেন। তারপরও তাদেরকে জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে চাপিয়ে দেওয়াটা কি সংসদীয় গণতন্ত্রের চেতনার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ—এই প্রশ্নটি এখন বিভিন্ন মহলে আলোচিত হচ্ছে। 

আওয়ামী লীগের একজন নেতা অবশ্য বলেছেন, বিষয়টি সাংগঠনিক। যে দুজনের কথা বলা হচ্ছে, সেই দুজনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেছেন এবং হেরে গেছেন। কাজেই সাংগঠনিক ভাবে দলকে শক্তিশালী রাখার জন্যই এই দুই প্রার্থীকে সংসদে আনা হয়েছে। কিন্তু সংগঠন শক্তিশালী করার জন্য সংসদ সদস্য হতে হবে এমন যুক্তি খুব একটা ধোপে টেকে না। 

এছাড়াও বরিশাল থেকে শাম্মী আহমেদকে সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। নাগরিকত্ব বিতর্কে তিনি মনোনয়ন থেকে বাদ পড়েছিলেন। নাগরিকত্ব বিতর্ক তার চলে গেছে কি না সেই বিষয়টি নিয়েও এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি।আওয়ামী লীগের মনোনয়ন যেখানে ১৫৪৯ জন প্রার্থী সেখানে বিতর্কিত থাকা অবস্থায় একজনকে মনোনয়ন দেওয়ার যৌক্তিকতা কি সেটি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। খুলনার একটি আসনে সংরক্ষিত কোটায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সাবেক মন্ত্রী মুন্নুজান সুফিয়ানকে।

আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে একাধিক জরিপ করেছিল এবং এই জরিপের ফলাফলের ভিত্তিতেই এবার মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। সে কারণেই মুন্নজান সুফিয়ান বাদ পড়েছেন। স্পষ্টত এলাকায় তার জনপ্রিয়তা নাই তা আওয়ামী লীগই নির্ধারণ করেছে। তাকেই আবার সংরক্ষিত আসনে নিয়ে আসা হয়েছে। এটাও সংসদীয় গণতন্ত্রের চেতনার সাথে কতটুকু খাপ খায় তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটানোটা সংসদীয় গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান রীতি। কিন্তু জনগণ যাদেরকে নাকচ করে দিয়েছে তাদেরকে আবার জনপ্রতিনিধি বানানো সংসদীয় গণতন্ত্রের চেতনার সাথে যায় কি না সেটি ভেবে দেখা দরকার বলে মনে করছেন অনেকে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭