ইনসাইড বাংলাদেশ

গ্রামীণ কল্যাণ কি ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান?


প্রকাশ: 15/02/2024


Thumbnail

ড. মুহাম্মদ ইউনূস আজ সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছেন যে, সরকার গ্রামীণ কল্যাণ দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিচ্ছু করছে না। গ্রামীণ কল্যাণ ভবন দখলের চেষ্টার অভিযোগ করে ড. ইউনূসের দাবি কতটুকু গ্রহণযোগ্য তা অনুসন্ধানের দাবি রাখে। গ্রামীণ কল্যাণে অনেকগুলো গ্রামীণ নামের প্রতিষ্ঠান রয়েছে। গ্রামীণ কল্যাণ কি সরকারি প্রতিষ্ঠান নাকি ড. ইউনূসের প্রতিষ্ঠান এই বিষয়টি নিয়ে একটি আলোচনা হতেই পারে। 

বাংলা ইনসাইডারের নিজস্ব অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, গ্রামীণ কল্যাণ গ্রামীণ ব্যাংকের একটি প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ ব্যাংকের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতা এবং গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ২৫ এপ্রিল ১৯৯৬ সালে গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় গ্রামীণ কল্যাণ গঠনের প্রস্তাব আনা হয়। ওই প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, গ্রামীণ ব্যাংকের সদস্য ও কর্মীদের কল্যাণে কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর আওতায় গ্রামীণ কল্যাণ নামে একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করা হবে। গ্রামীণ ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেন। তাই আইন অনুযায়ী এটি গ্রামীণ ব্যাংকের একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। গ্রামীণ কল্যাণ নামে যে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখা প্রতিষ্ঠান তা স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, এর মূলধন গঠন প্রক্রিয়ায়। গ্রামীণ কল্যাণে গ্রামীণ ব্যাংকের সোশ্যাল অ্যাডভান্সমেন্ট ফান্ড থেকে ৭০ কোটি টাকা প্রদান করা হয়। গ্রামীণ কল্যাণে মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেলেও গ্রামীণ ব্যাংকের সঙ্গে এর সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ মেলে। 


মেমোরেন্ডাম এবং আর্টিকেল অনুযায়ী গ্রামীণ কল্যাণের নয় সদস্যের পরিচালনা পরিষদের দুইজন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। এ ছাড়াও গ্রামীণ কল্যাণে চেয়ারম্যান হবে গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি। গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত প্রতিনিধি হিসাবে গ্রামীণ কল্যাণের চেয়ারম্যান হন ড. ইউনূস। এরপর গ্রামীণ কল্যাণের হয়ে ওঠে ড. ইউনূসের একক প্রতিষ্ঠান। অথচ আইনগতভাবে এটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, যার মালিক গ্রামীণ ব্যাংক। 

গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে ড. ইউনূস ১৩ টি প্রতিষ্ঠান গঠন করেছেন, যে প্রতিষ্ঠানগুলো এখন গ্রামীণ কল্যাণ ভবনে অবস্থিত। এর মধ্যে রয়েছে গ্রামীণ টেলিকম, গ্রামীণ ডিস্ট্রিবিউশন লিমিটেড, গ্রামীণ শিক্ষা, গ্রামীণ নেটওয়ার্ক লিমিটেড, গ্রামীণ ব্যবস্থা বিকাশ, গ্রামীণ আইটি পার্ক, গ্রামীণ ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট, গ্রামীণ সলিউশন লিমিটেড, গ্রামীন ডাউন ফুডস লিমিটেড, গ্রামীণ হেলথকেয়ার সার্ভিসেস লিমিটেড, গ্রামীণ স্টার এডুকেশন লিমিটেড, গ্রামীণ ফেব্রিক্স অ্যান্ড ফ্যাশন লিমিটেড এবং গ্রামীণ কৃষি ফাউন্ডেশন। 


গ্রামীণ ব্যাংকের অর্থে এবং বোর্ড সভার সিদ্ধান্তের মাধ্যমে যে গ্রামীণ কল্যাণ গঠিত হয় সেই গ্রামীণ কল্যাণের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলো গঠিত হয়েছে। তাই অনিবার্য ভাবেই এই প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকানাও সরকারের এবং গ্রামীণ ব্যাংকের। কিন্তু ২০২০ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ কল্যাণের পরিচালনা পরিষদে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি থাকলে ২০২১ সাল থেকে এই প্রতিষ্ঠান দুটিতে গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিনিধি নেই। গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দুটি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান হবেন গ্রামীণ ব্যাংকের মনোনীত ব্যক্তি। কিন্তু ড. ইউনূস এখন পর্যন্ত গ্রামীণ কল্যাণে এবং গ্রামীণ ফান্ডে চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছেন।


প্রশ্ন হলো কোন কর্তৃত্ব বলে তিনি এই পদে আছেন। অথচ এখন গ্রামীণ কল্যাণ দখল করা হচ্ছে বলে নাটক করছেন। এটিই হলো ড. ইউনূস। তিনি সরকারি অর্থ আত্স করেন। তিনি রাষ্ট্রের সম্পদ কুক্ষিগত করেন। রাষ্ট্রের সম্পত্তিকে নিজের সম্পত্তি হিসেবে দখল করে আবার তার বিরুদ্ধে যখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় তখন তিনি তার সম্পত্তি দখল করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ করেন। ড. ইউনূসের এই প্রতারণা এবং জালিয়াতির বিরুদ্ধে সরকারের স্পষ্ট এবং সরাসরি অবস্থান দরকার। গ্রামীণ কল্যাণের কাঠামো, গঠন এবং মেমোরেন্ডাম জনসম্মুখে উন্মুক্ত করা দরকার। কিন্তু দুর্ভাগ্য হলেও সত্য সরকার এখন পর্যন্ত এই সব বিষয় নিয়ে নীরবতা পালন করছে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭