ইনসাইড পলিটিক্স

মির্জা ফখরুল কি বিএনপির একক নেতা হবেন?


প্রকাশ: 15/02/2024


Thumbnail

অবশেষে দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন মাস কারাভোগের পর মুক্তি পেলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। গত ২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির তাণ্ডবের প্রেক্ষাপটে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। মির্জা ফখরুল আটক থাকা অবস্থায় দেশে ৭ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং একটি নতুন সরকার গঠিত হয়েছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গ্রেপ্তারের পর পরই আস্তে আস্তে বিএনপির আন্দোলনে ভাটার টান আসে। বিএনপির আরও বেশ কিছু শীর্ষ নেতা গ্রেপ্তারের পর বিএনপির আন্দোলন হয়ে পড়ে নামসর্বস্ব। এই সময়ে বিএনপি নির্বাচন প্রতিহত করতে পারেনি, কোনরকম জনসম্পৃক্ততাও সৃষ্টি করতে পারেনি। 

নির্বাচনের পর বিএনপির মধ্যে নানা রকম মেরুকরণ চলছে। নানা রকম কথাবার্তা চলছে। অনেকেই বিএনপির নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি করছেন। এমনকি লন্ডনে পলাতক বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়াও দলের স্বার্থে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। এ রকম প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তি রাজনীতিতে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। 

বিএনপির মধ্যে কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, সরকারের সাথে সমঝোতা করে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেয়েছেন। বিশেষ করে এর আগে যখন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভি দাবি করেছিলেন যে, সরকারের সঙ্গে আপস সমঝোতায় রাজি না হওয়ার জন্যই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে আটকে রাখা হয়েছে, তখন স্বাভাবিক ভাবেই এর মধ্যেই প্রশ্ন তুলছেন যে, এখন কি তাহলে সরকারের সাথে সমঝোতা হলো? এই জন্যই কি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মুক্তি পেলেন? 

একাধিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এই মুক্তিকে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে দেখছেন। কোন কোন বিশ্লেষক মনে করছেন যে, স্বাভাবিক আইনি প্রক্রিয়ায় তিনি মুক্তি পেয়েছেন। তার সর্বশেষ যে মামলাটি ছিল তা হলো প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা। প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলার বিষয়টি স্পর্শকাতর ছিল জন্যেই মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জামিন প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে—এমনটি বলেছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। 

আবার রাজনৈতিক সমঝোতার একটি প্রসঙ্গ সামনে এসেছে। অনেকে মনে করেন যে, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের শেষ পর্যন্ত একটি রাজনৈতিক সমঝোতা হয়েছে এবং সেই প্রেক্ষাপটে তিনি মুক্তি পেতে যাচ্ছেন। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য গিয়ে অস্বীকার করা হয়েছে। সরকার বলেছে যে, আইন তার নিজস্ব গতিতে চলছে। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গ্রেপ্তার বা তার মুক্তির সাথে সরকারের কোন সম্পর্ক নেই।

তবে বিএনপির অনেক নেতাই সন্দেহ করছেন যে, শেষ পর্যন্ত মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে সরকারের একটি আপোসরফা হয়েছে। বিএনপিতে যখন টানাপোড়েন, মতপার্থক্য, নেতৃত্বের কোন্দল এবং নেতৃত্ব শূন্যতার বিষয়টি জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক ভাবে আলোচিত হচ্ছে, তখন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের মুক্তির প্রেক্ষাপটে প্রধান যে প্রশ্নটি সামনে এসে দাঁড়িয়েছে তা হলো মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কি বিএনপির একক নেতা হবেন?

৭ জানুয়ারির নির্বাচন এবং বিএনপির আন্দোলনের ব্যর্থতার পর বিএনপিতে নেতৃত্ব পরিবর্তনের দাবি এখন জোরালো।তৃণমূল পর্যন্ত মনে করছে যে, যোগ্য এবং মাঠের নেতৃত্বকে সামনে আনতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে বিএনপিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, বিদেশে অবস্থানকারী বা দণ্ডিত কোন নেতা নয়, বরং দেশে থাকা বিএনপির নেতৃত্বকে সামনে আনতে হবে এবং যিনি সিদ্ধান্ত নিতে পারেন তাকেই নেতৃত্বে আনতে হবে। সেই বিবেচনায় তারেক জিয়ার পরিবর্তে নেতা হওয়ার দৌড়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অনেকে এগিয়ে। তিনি একক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো জিয়া পরিবারের বাইরে কাউকে নেতৃত্ব দিতে তারেক জিয়া রাজি হবেন কিনা। দ্বিতীয়ত, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্ব দলের অন্য নেতারা কিভােবে নেবেন। এ সমস্ত জটিল সমীকরণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একক নেতৃত্ব দাঁড়িয়ে আছে। শেষ পর্যন্ত যদি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর একক নেতৃত্ব পান বিএনপিতে তাহলে ধরে নিতে হবে আন্তর্জাতিক মুরব্বীদের পরামর্শেই এটা করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে বিএনপি হয়তো তার অস্তিত্ব রক্ষার শেষ লাড়াইয়ে কিছুটা সময় পাবে।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭