ইনসাইড বাংলাদেশ

কারাবন্দি শেখ মুজিবের ভাষা আন্দোলন


প্রকাশ: 16/02/2024


Thumbnail

বাঙালির হাজার বছরের রাজনীতির আকাশে সবচেয়ে উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। চিরকালের উপেক্ষিত বাঙালি তাঁর নেতৃত্বেই ইস্পাতকঠিন ঐক্যে সংঘবদ্ধ হয়েছে এবং লাভ করেছে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম মানচিত্র ও গৌরবদীপ্ত পতাকা।

ভাষা-আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ ও অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন বাংলা মায়ের তেজোদীপ্ত সন্তান শেখ মুজিবুর রহমান। এরপর ৫৪-র নির্বাচন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, ৬৬-এর ৬ দফা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ৭০-এর নির্বাচন এবং সর্বোপরি ৭১-এর মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদান করে তিনি হয়ে ওঠেন এ ভূখণ্ডের মুক্তিকামী মানুষের  অবিসংবাদিত নেতা।

বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের সময় শেখ মুজিব কারাগারে বন্দি ছিলেন। ‘বঙ্গবন্ধু ১৯৫০ সালে গ্রেপ্তার হন। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকার রাজপথে গুলি হয়। সালাম, বরকত, জব্বারসহ অনেক শহীদ রক্ত দেয়। বঙ্গবন্ধু তখনও বন্দি। বন্দি থাকা অবস্থায়ও ছাত্রদের সাথে সবসময় তার যোগাযোগ ছিল। তিনি যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য ছাত্রসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতেন।’ বস্তুত, ‘জেল থেকেই তিনি তার অনুসারী ছাত্র নেতাদের গোপনে দিক-নির্দেশনা দিতেন।’ শুধু তাই নয়, তিনি ‘জেল থেকেই রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম কমিটির সাথে যোগাযোগ রাখতেন এবং তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে নির্দেশনা দিতেন।’ 

কারাবন্দি অবস্থায় বাংলা ভাষার দাবিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব অনশন শুরু করেছিলেন ১৮ ফেব্রুয়ারি ১৯৫২ সালে ফরিদপুর জেলের ভেতর। তার সঙ্গী ছিলেন পরবর্তীতে ন্যাপে যোগদানকারী নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের আরেকজন সহরাজবন্দী মহিউদ্দিন আহমেদ। তাদের অনশনের মূল দুটি দাবি ছিল ‘রাজবন্দিদের মুক্তি’ এবং ‘রাষ্ট্রভাষা হিসাবে বাংলার প্রতিষ্ঠা’। বঙ্গবন্ধু অনশন ভঙ্গ করেন প্রায় এক সপ্তাহ পর অর্থাৎ ১৯৫২ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। তাকে মুক্তি দেওয়া হয় তার দুদিন পর অর্থাৎ ২৭ ফেব্রুয়ারি। ভাষা আন্দোলনের একটি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর অন্যতম দায়িত্ব ছিল রাজবন্দীদের মুক্ত করা এবং বাংলা ভাষাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসাবে প্রতিষ্ঠার দাবি তার দল আওয়ামী লীগে, বিশেষত সোহরাওয়ার্দী সাহেবের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলা। 

বিভিন্ন সূত্র থেকে (গোয়েন্দা রিপোর্ট এবং শেখ মুজিবকে লেখা সোহরাওয়ার্দীর চিঠি) জানা গেছে, ভাষা প্রশ্নে সোহরাওয়ার্দীর অভিমত ছিল ‘বাংলা’ হবে পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক ভাষা, অন্যতম রাষ্ট্রভাষা নয়। এ প্রশ্নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সঙ্গে সোহরাওয়ার্দীর মতের মিল হয়নি। তবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব এক্ষেত্রে তার প্রিয় নেতার বিরোধিতা করতেও কার্পণ্য করেননি। 

তৎকালীন পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার গোপন নথিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘Sk Mujibur Rahman disapproved the suggestions of Mr. Suhrawardy to give regional status of Bengali. Sk. Mujibur Rahman received the suggestions of Mr. Suhrawardy through a letter. Other workers also did not agree with Surawardy. Their main demand was to make Bengali as one of the state languages of Pakistan’. 

পাকিস্তান গোয়েন্দা সংস্থার গোপন প্রতিবেদনে ভাষা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব সম্পর্কে এমন অসংখ্য গোয়েন্দা প্রতিবেদন গোপন নথিতে উল্লেখ রয়েছে। গোপন প্রতিবেদনে ১৯৪৯ সালের ৯ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর খুলনা সফরের বিষয়ে বলা হয়, ‘Addenda to the brief history of Sheikh Mujibur Rahman, sent from SP, DIB Khulna to IBEB, Dacca, where a number of political activites of Sheikh Mujibur Rahman were mentioned. It was also reported that he delivered speeches demanding to adopt Bengal as court language... ’ (Secret Documents of Intelligence Branch (IB) on Father of the Nation Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, V-1, page-66).

মূলত, ভাষা-আন্দোলনের মাধ্যমেই ঢাকার রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রত্যক্ষ সংযোগ স্থাপিত হয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে জাগ্রত জাতীয়তাবাদী চেতনা লালন এবং বাস্তবায়নে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন। ১৯৪৮ থেকে শুরু করে স্বাধিকার ও মুক্তিসংগ্রামের দিনগুলোতে এবং স্বাধীন বাংলাদেশ ও জাতিসংঘে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় বঙ্গবন্ধু যে অবদান রেখেছেন, তার ফলে  ইতিহাস তাকে স্মরণীয় করে রাখবে।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭