ক্লাব ইনসাইড

জাবিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি মুছে গ্রাফিতি, শাস্তির দাবিতে ছাত্রলীগ নেতার অনশন


প্রকাশ: 16/02/2024


Thumbnail

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের প্রতিবাদে জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন এক ছাত্রলীগ নেতা।

অনশনরত ছাত্রলীগ নেতার নাম এনামুল হক এনাম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ এন্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৩ ব্যাচের শিক্ষার্থী এবং শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি।

বৃহস্পতিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের বেদিতে আমরণ অনশন শুরু করেন তিনি।

অনশনরত এই ছাত্রলীগ নেতা দফা দাবি উত্থাপন করেন, দাবিগুলো হলো- বঙ্গবন্ধু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননাকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয় জাতীয় আইনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, দিন পার হলেও জড়িতদের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা তদন্ত করতে হবে।

এসময় ছাত্রলীগ নেতা এনামুল হক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন নামে একটি সংগঠন বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে জাতির জনকের ছবি মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছে। এঘটনার আট দিনের বেশী সময় পেরিয়ে গেছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা প্রথম দিন থেকেই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে এসেছে।

অথচ এখন পর্যন্ত জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাস্তিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। এরা আসলেই জাতির পিতার আদর্শকে মনে প্রাণে ধারণ করে কিনা তা নিয়ে আমার সন্দেহ হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে জাতির পিতাকে এভাবে অবমাননা করা অত্যন্ত হীনতা, লজ্জার গুরুতর অপরাধ।

ঘটনার বিচারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের বিরুদ্ধে উদাসীনতার অভিযোগ এনে এই নেতা বলেন, ‘উপাচার্যের কাছে আমাদের দাবি ছিলো অনতিবিলম্বে এটি মুছতে হবে। আমরা দাবি করার পরেও কোনো স্টেপ নেননি। প্রায় সাতদিনের মাথায় অনেক চাপাচাপির পর একটি লোক দেখানো কমিটি গঠন করেন।

যারা ব্যঙ্গচিত্রটি এঁকেছে তারা ইতোমধ্যে সেটি স্বীকার করে তাদের ফেসবুক পেজে আপলোড দিয়েছে। এখানে তো কে অভিযুক্ত সেটা প্রমাণিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তো যেকোনো সমস্যা হলে জরুরি সিন্ডিকেট মিটিং ডেকে ব্যবস্থা নেন। তাহলে এই ঘটনায় কেন ব্যবস্থা না নিয়ে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন?

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনে বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের বিষয়ে জানতে উপাচার্যের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তার একান্ত সচিব জানায় তিনি একটি মিটিংয়ে আছেন।

এছাড়াও এঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘যেদিন এই ঘটনা ঘটে সেদিনই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতিকে অবগত করেছি। তিনি প্রথম থেকেই কেন যেন এই ব্যাপারে উদাসীন ভাব দেখিয়েছেন।

তার পদক্ষেপগুলো ছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে তাল মিলিয়ে। এতোদিন হয়ে গেলেও শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেননি এবং প্রশাসনের থেকে ব্যাপারে বিচার আদায় করে নিতে পারেননি।

অবহেলার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল বলেন, ‘ছাত্রলীগ একক ব্যক্তির সংগঠন নয়। আমাদের যেকোনো কাজ বা সিদ্ধান্ত নিতে হলে আলোচনা করতে হয়। আমরা ঘটনার পর স্মারকলিপি দিয়েছি, বিক্ষোভ মিছিল করেছি।

এছাড়া সর্বশেষ গণজমায়েত গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করেছি। এর প্রেক্ষিতে উক্ত গ্রাফিতিটি মুছে দেয়া হয়েছে। তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে এবং বঙ্গবন্ধুর নতুন প্রতিকৃতি আঁকার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে জায়গাটি প্রস্তুত করা হচ্ছে।

এদিকে, ঘটনায় চার সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আদেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া মঙ্গলবার রাতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র ইউনিয়নের আঁকা চিত্রটি মুছে দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তদন্ত কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফী, সদস্য হিসেবে বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার শামীম আহমেদ চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন এবং সদস্য-সচিব হিসেবে রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-) বি এম আজিজুর রহমান।

প্রসঙ্গত, বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা মানবিকী অনুষদের নতুন ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি প্রতিকৃতি আঁকা ছিল। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগত নারী ধর্ষণের ঘটনার পর সেই স্থানে গত ০৭ ফেব্রুয়ারি রাতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিটি মুছে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়নের একাংশের নেতাকর্মীরা। এই অংশের নেতৃত্বে রয়েছে ৪৭ ব্যাচের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অমর্ত্য রায় ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলী।

বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন নেতারা এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনকে সমর্থন যোগাতে এবং নিপীড়কদের হুঁশিয়ার করতে নতুন গ্রাফিতিটি আঁকা হয়েছে। প্রায় তিন বছর পার হওয়ায় পূর্বের ছবি ক্ষয়ে গিয়ে অস্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এছাড়া পাশের দেয়ালে শেখ মুজিবুর রহমানের একটি বিশাল, স্পষ্ট এবং নান্দনিক গ্রাফিতি দৃশ্যমান রয়েছে। চলমান ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের প্রাসঙ্গিকতার ভিত্তিতে গ্রাফিতি অঙ্গন করেছে ছাত্র ইউনিয়ন।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭