ইনসাইড পলিটিক্স

পাঁচ সংকটে ধুঁকছে আওয়ামী লীগ


প্রকাশ: 16/02/2024


Thumbnail

টানা চতুর্থবারের মতো ক্ষমতায় এসেছে আওয়ামী লীগ। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। স্বাভাবিক ভাবে মনে হতে পারে, সাংগঠনিকভাবে শক্তিশালী না হলে একটি রাজনৈতিক দল ২০ বছর ক্ষমতায় থাকতে পারে না। কিন্তু আওয়ামী লীগের অন্দরমহলের খবর যারা জানেন, তারা নিশ্চিত করে বলতে পারেন যে, টানা চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসা বা একটানা ক্ষমতায় থাকার কোন কৃতিত্ব সংগঠনের না। বরং সবকিছুর একক কৃতিত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। সংগঠন এখানে খুব একটা বেশি কিছু করেছে বলে মনে করার কোন কারণ নেই। আর এই বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা এখন সবচেয়ে জনপ্রিয় নামই শুধু নন, তার ওপরই পুরো দল নির্ভরশীল। শেখ হাসিনা না থাকলে আওয়ামী লীগ থাকবে কি না সেই প্রশ্ন এখন অনেকের কাছে বড় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন আওয়ামী লীগের আড্ডায় এই প্রশ্নটি সামনে চলে আসে। শেখ হাসিনা না থাকলে আওয়ামী লীগের কী হবে? 

চতুর্থ মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পরও আওয়ামী লীগ স্বস্তিতে নেই। বরং আওয়ামী লীগ ধুঁকছে নানা রকম বাস্তবতার কারণে। পাঁচ সংকটে আওয়ামী লীগ এখন জর্জরিত। এই সঙ্কট গুলোর মধ্যে রয়েছে;

১. ছাত্রলীগ: আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হল ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগকে যেন কিছুতেই থামাতে পারছে না আওয়ামী লীগ। একদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানির ঘটনা। অন্যদিকে, চট্টগ্রামে দুই গ্রুপের মারামারি, সারাদেশে ছাত্রলীগের নানা রকম অপকর্মের ফিরিস্তি এবং এই দুর্বৃত্তায়নের তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। ছাত্রলীগ এখন আওয়ামী লীগের জন্য সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছাত্রলীগ যেন অভিভাবকহীন, তাদের লাগাম টেনে ধরার কেউ নেই। 

২. মাঠে বিশৃঙ্খলা: নির্বাচনের আগে থেকেই আওয়ামী লীগের তৃণমূলে বিভক্তি এবং বিশৃঙ্খলা চরম আকার ধারণ করেছিল। সেই বিভক্তি এবং বিশৃঙ্খলা এখনও কমেনি। মাঠে আওয়ামী লীগ বিশৃঙ্খল কোন্দলে জর্জরিত এবং একে অন্যের মুখোমুখি। প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি একাধিকবার এই কোন্দল বন্ধের জন্য তাগিদ দিয়েছেন। সর্বশেষ দলের বর্ধিত সভায় তিনি কোন্দল বন্ধের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। কিন্তু তার পরও এই কোন্দল কমছে না। সামনে উপজেলা নির্বাচনকে ঘিরে এই কোন্দল বড় আকার ধারণ করতে পারে বলে অনেকেই মনে করছেন।

৩. নিষ্ক্রিয় অঙ্গ সংগঠন: আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো নিষ্ক্রিয়। তারা ব্যস্ত এখন মনোনয়ন নিয়ে এবং নানারকম পদ-পদবি এবং সুবিধা আদায়ের জন্য সারাক্ষণ ছোটাছুটি করছে। অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোতে নেতৃত্বের সংকট চরম আকার ধারণ করেছে এবং সাংগঠনিক তৎপরতা নেই বললেই চলে। এ রকম পরিস্থিতিতে এই অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলো আওয়ামী লীগের জন্য একটি মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন। 

৪. মাঠের নেতাদের হতাশা: আওয়ামী লীগের যারা রাজপথে নেতা, যারা মাঠে কাজ করেন তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। নির্বাচনের পর নতুন মন্ত্রিসভা গঠন প্রক্রিয়ায় মাঠের নেতারা গুরুত্ব পাননি—এমন অভিযোগ কান পাতলেই শোনা যায়। আবার অনেক মাঠের নেতা মনোনয়ন পর্যন্ত পাননি। ফলে মাঠের নেতাদের মধ্যে এক ধরনের গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

৫. ১৪ দলের সংকট: আওয়ামী লীগের আরেকটি বড় সংকটের জায়গা হলো ১৪ দল। ১৪ দলকে আওয়ামী লীগ কি অস্বীকার করছে নাকি ১৪ দলকে রাখতে চায় না—সেটি এখন একটি বড় প্রশ্ন। নারী সংসদ সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ১৪ দলের শরিকদের কাউকেই রাখেনি। নির্বাচনের পর থেকেই ১৪ দল আছে কি নেই তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। আর এই সমস্ত সংকট মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার কতটুকু স্বস্তির সময় পার করবে সেটিই দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭