ইনসাইড পলিটিক্স

‘ভারত কৌশল’ বিএনপিতে নানা মত


প্রকাশ: 16/02/2024


Thumbnail

প্রতিটি বড় রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট পররাষ্ট্রনীতি থাকে। প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্কের কৌশল থাকে। ভারতের কথাই ধরা যাক, সেখানে বিজেপি, কংগ্রেস সহ প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের সুনির্দিষ্ট বৈদেশিক নীতি আছে। প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের ব্যাপারেও তাদের সুস্পষ্ট কিছু রূপরেখা রয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, ভারতের রাজনীতি বিভক্ত এবং আক্রমণাত্মক হলেও পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে ভারত এককাট্টা সবসময়। এমনকি প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ও প্রধান দুটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে সম্পর্কের নীতির তেমন একটা পার্থক্য নেই। তবে বাংলাদেশে এই বিষয়টি একেবারেই বিপরীত। 

আওয়ামী লীগ যেমন ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখার নীতিতে বিশ্বাস করে। প্রতিবেশীই প্রথম এই নীতি রেখে ভারতের সঙ্গে সম্মানজনক ভাবে অমীমাংসিত সমস্যার সমাধান করতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন অবস্থান গ্রহণ করে তাদের সুযোগ সুবিধা অনুযায়ী। 

এক সময় বিএনপিতে ছিল চীনপন্থীদের প্রভাব। আর তাই বিএনপির সঙ্গে চীনের ঘনিষ্ঠতা অনেক বেড়েছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী লীগের সঙ্গেও চীনের সম্পর্ক অনেক ভালো। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ভারত। কারণ ভারত শুধু বাংলাদেশের প্রধান প্রতিবেশীই নয়, আমাদের সীমান্তের প্রায় পুরোটাই ভারতের সঙ্গে ভাগ করা। আর এই কারণেই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাব অনেক বেশি। এ বারের নির্বাচনে তা প্রমাণিত হচ্ছে। তবে এ বারের নির্বাচন ছাড়াও ২০০১ সাল থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের প্রভাবের কথা সকলেই জানে এবং এ নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা রকম হিসেব কষা হয়। 

বিএনপির ভারত কৌশল কি? 

২০০১ সালে নির্বাচনে ভারতের সহযোগিতা নিয়েই বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল এমন বক্তব্য দেওয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট বক্তব্য রেখেছেন। কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি ভারতের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছিল। দশ ট্রাক অস্ত্র ঘটনা যার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। আর এরপর থেকেই বিএনপির সঙ্গে ভারতের দূরত্ব তৈরি হয়। তারপরও ভারত তোষণ নীতি বিএনপি অব্যাহত রেখেছিল। প্রকাশ্যে বিএনপি ভারতের সমালোচনা করত না। কিন্তু ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর থেকে বিএনপির রাজনীতিতে আবার ভারত বিরোধিতা শুরু হয়, যেটা বিএনপি করেছিল ১৯৭৯ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত। কিন্তু প্রকাশ্য ভারত বিরোধিতা বিএনপির মধ্যে নানারকম প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। 

ভারত কৌশল নিয়ে বিএনপিতে এখন তিন ধরনের মতামত দেখা যাচ্ছে। প্রথমত, অনেকে মনে করছেন যে, ভারত বিরোধীতাই বিএনপির আসল শক্তির উৎস। ভারত বিএনপির কখনও বন্ধু হতে পারে না এবং ভারতের কারণে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় রয়েছে। কাজেই ভারতের সমালোচনা করা উচিত এবং একটি ভারত বিরোধী জনমত বাংলাদেশে তৈরি করা উচিত। কিন্তু এই মতের সঙ্গে একমত নয় বিএনপির অনেকে। বিএনপির একটি বড় অংশ রয়েছেন যারা মনে করেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়ন ছাড়া বিএনপির রাজনীতির কোন ভবিষ্যত নেই। আর এই সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য ভারতের সঙ্গে নতুন করে দেনদরবার এবং একটি দীর্ঘমেয়াদী সংলাপের প্রয়োজন বলে তারা মনে করছেন। আর তৃতীয়ত, একটি অংশ মনে করছেন যে, ভারতের সঙ্গে নরম গরম দুটি সম্পর্কই রাখাই উচিত। এদিকে যেমন ভারতকে চাপে রাখার কৌশল গ্রহণ করা উচিত। নানা বিষয়ে ভারতের সমালোচনা করা উচিত। অন্যদিকে কূটনৈতিক ভাবে যেন ভারত সম্পূর্ণ বিএনপি বিদ্বেষী না হয়ে যায় সেজন্য একটি অংশের সম্পর্ক অব্যাহত রাখা দরকার। তবে এই তিন মতের মধ্যে শেষ পর্যন্ত বিএনপি কোন পথে যাবে সেটি দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭