ইনসাইড বাংলাদেশ

সব ফ্রন্টে যুদ্ধ: নতুন সরকার কি পারবে?


প্রকাশ: 16/02/2024


Thumbnail

১১ জানুয়ারি টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগ। নতুন সরকার গঠনের পর যে স্বস্তি সময় থাকে বা হানিমুন পিরিয়ড থাকে সে রকম স্বস্তির সময় এই সরকার একদমই পায়নি। বরং সরকার গঠনের পর থেকেই একের পর এক সমস্যার শুরু হচ্ছে, নানামুখী চাপে আছে সরকার। 

অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মনে করে যে, নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পরেই সব ফ্রন্টে যুদ্ধ শুরু হয়েছে। এই ফ্রন্টগুলোর মধ্যে রয়েছে;

১. রাজনৈতিক ফ্রন্ট: রাজনৈতিক ফ্রন্টের যুদ্ধ নির্বাচনের পর শেষ হয়ে যাবে এমন আশা করেছিলেন অনেকে। বিশেষ করে ২০১৪’র নির্বাচনের পর যেভাবে বিএনপি সব কিছু থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে ছিল যেমনটি প্রত্যাশিত ছিল এ বারও। কিন্তু নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পরও বিএনপি ঢিমে তালে হলেও আন্দোলনের কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে। ইতোমধ্যে বিএনপির প্রধান দুই নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মুক্তি পেয়েছেন। তাদের মুক্তি বিএনপিতে নতুন শক্তি দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ফ্রন্টে তাই নতুন সরকারের যুদ্ধ অব্যাহত থাকবে। 

২. অর্থনৈতিক ফ্রন্ট: অর্থনৈতিক ফ্রন্টে একটি নাজুক অবস্থায় পড়ে গেছে সরকার। অর্থনৈতিক ফ্রন্টের যুদ্ধে সরকার কি কৌশল নেবে, সামনের দিনগুলোতে মুদ্রাস্ফীতি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, ডলার সংকট, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ইত্যাদি নানা চাপ কিভাবে সামলাতে পারবে সরকার সেটি এখন দেখার বিষয়। এই ফ্রন্টে সরকারের সবচেয়ে বড় সমস্যা হল সরকারি পৃষ্ঠপোষক কিছু দুর্বৃত্ত, লুণ্ঠন কারী জাঁকিয়ে বসেছে। যারা ব্যাংকগুলোকে খালি করে ফেলেছে, বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত অর্থনৈতিক ফ্রন্টে সরকার কোন আশার আলো দেখতে পারবে না বলেই মনে করা হচ্ছে।

৩. সুশীল ফ্রন্ট: সুশীল সমাজের সাথে সরকারের টানাপোড়েন বেশ কিছুদিন ধরেই। অনেকে মনে করেছিল যে, নির্বাচনের পর সুশীলদের সাথে সম্পর্কে টানাপোড়েনের কিছুটা উন্নতি হবে। কিন্তু সেই পরিস্থিতি এখনও পর্যন্ত হয়নি। বরং ইউনূস ইস্যু নিয়ে সুশীল সমাজ আবার এককাট্টা হচ্ছে। বিশেষ করে ড. ইউনূসের দণ্ড, তার বিরুদ্ধে অর্থপাচারের চার্জশিট প্রদান এবং সর্বশেষ গ্রামীণ কল্যাণের ঘটনা নিয়ে ড. ইউনূসের পাশে দাঁড়াচ্ছে তথাকথিত সুশীল গোষ্ঠী। এটি সরকারকে নতুন করে চাপে ফেলতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন। 

৪. সামাজিক ফ্রন্ট: সামাজিক ফ্রন্টেও সরকার স্বস্তিতে নেই। ধর্ষণ, সন্ত্রাস ইত্যাদি বেড়ে গেছে। বিশেষ করে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এবং ক্ষমতাসীনদের পৃষ্ঠপোষকতায় বিভিন্ন সামাজিক অপরাধের বাড়বাড়ন্ত সরকারকে একটি বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলেছে। কারণ অনেকেই মনে করছেন যে, ক্ষমতাসীন দলের পৃষ্ঠপোষকতায় এই ধরনের অনিয়ম অপকর্ম গুলো হচ্ছে।

৫. সীমান্ত ফ্রন্ট: সীমান্ত ফ্রন্টও বাংলাদেশে একটি অস্বস্তিকর অবস্থা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের আরাকান আর্মির সঙ্গে মিয়ানমারের সামরিক সরকারের দ্বন্দ্ব সংঘাত যেকোন সময় যে কোন দিকে মোড় নিতে পারে। এখন পর্যন্ত এই ফ্রন্টে সরকার কৌশলী আছে এবং একটা ইতিবাচক কূটনীতিক অবস্থান ধরে রাখতে পেরেছে। কিন্তু কতদিন এই পরিস্থিতি থাকবে সে নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে আরাকান আর্মি বলে যারা মিয়ানমারে গেরিলা যুদ্ধ করছে তাদের শেষ লক্ষ্য কি তা বুঝার জন্য সরকারকে আরও গভীর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে বলেই মনে করছেন অনেকে। এছাড়াও ছোট খাটো অনেক জায়গায় সরকারকে যুদ্ধ করতে হচ্ছে। সব ফ্রন্টের যুদ্ধে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নতুন সরকার কি পারবে এটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭