ইনসাইড পলিটিক্স

আওয়ামী লীগের নতুন পঞ্চপাণ্ডব


প্রকাশ: 16/02/2024


Thumbnail

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পঞ্চপাণ্ডব তত্ত্ব নতুন নয়। আওয়ামী লীগের এ রকম কিছু নেতারা একসঙ্গে সংগঠনের জন্য কাজ করেন, যারা দলের সাধারণ সম্পাদক নন, কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় গুরুত্বপূর্ণ। সাংগঠনিক বিভিন্ন কাজে দল তাদের ওপর নির্ভরশীল থাকে। আওয়ামী লীগ সভাপতির পর বিভিন্ন সময়ে এই পঞ্চপাণ্ডবরাই দলের মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী ভূমিকায় এসেছিল।

পচাঁত্তর পরবর্তী আওয়ামী লীগের রাজনীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, নব্বই এর দশকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পঞ্চপাণ্ডব পর্বের সূচনা হয়েছিল। সেই সময় পঞ্চপাণ্ডব হিসেবে মনে করা হত আমির হোসেন আমু, আব্দুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আব্দুল জলিল এবং মোহাম্মদ নাসিমকে। এরপর পঞ্চপাণ্ডব দত্ত বিলীন হয়ে যায়। আবার ২০১৮’র নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পঞ্চপাণ্ডবের উত্থান ঘটে। সেসময় পাঁচজন নেতাকে ঘিরেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক তৎপরতা আবর্তিত হয়েছিল। তবে এই পাঁচজন নেতা কেউই মন্ত্রী বা দলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন না। এদের মধ্যে ছিলেন জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম এবং এস এম কামাল। এখন নির্বাচনের পর এই পঞ্চপাণ্ডবদের অন্তত দুজন মন্ত্রী হয়েছেন। এখন আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পঞ্চপাণ্ডবের নতুন বিন্যাস ঘটেছে। এবারে আওয়ামী লীগের যারা পঞ্চপাণ্ডব হিসাবে পরিচিত হচ্ছেন, তাদের মধ্যে রয়েছেন মহল মাহবুবউল আলম হানিফ, বাহাউদ্দিন নাছিম, মির্জা আজম, এস এম কামাল এবং সুজিত নন্দী। 

পঞ্চপাণ্ডব তত্ত্বের মূল ধারণা হল যে, সাধারণ সম্পাদকের প্যারালাল ক্ষমতাবান। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি গোষ্ঠী, যারা আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারক এবং সংগঠনে সাধারণ সম্পাদকের বিকল্প গোষ্ঠী। সাধারণ সম্পাদকের কাছে অনেকে অনেক কথা বলতে পারে না বা সাধারণ সম্পাদককে অনেক বিষয়ে দলের নেতারা চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে না। সেই চ্যালেঞ্জ জানানোর ক্ষেত্রে কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নেন এবং তারা সাধারণ সম্পাদককে দলের নীতি নির্ধারণী বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাবিত করেন। অনেক ক্ষেত্রে এই পঞ্চপাণ্ডব সাংগঠনিক অনেক সিদ্ধান্তও গ্রহণ করে থাকেন। 

আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ২০০৯ সাল থেকে একটি নতুন ধারণার প্রবর্তন করা হয়েছে দল এবং সরকারকে আলাদা রাখা। যারা মন্ত্রিসভায় থাকেন, তাদেরকে সাংগঠনিক পদে রাখা হয় না। এরকম বিবেচনাতেই বেশ কয়েকজন দলের নেতা বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ হারিয়েছিলেন। আবার কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা আছেন, যাদেরকে সরকার এবং দল উভয় জায়গায় বিবেচনা করে রাখা রাখা হয়। এবারও মন্ত্রিসভায় সে রকম ব্যবস্থা আছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, ডা. দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং আব্দুর রহমানের মতো গুরুত্বপূর্ণ নেতারা এখন সরকার এবং দলে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মন্ত্রিত্ব থাকার কারণে সার্বক্ষণিক ভাবে দলকে সময় দেওয়া, নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, দলীয় কার্যালয়ে যাওয়া, বিভিন্ন জেলায় যাওয়া, সমস্যা এবং বিরোধ গুলোকে সরেজমিনে দেখা ইত্যাদি সম্ভব হয় না। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামোতে পঞ্চপাণ্ডব অন্তত গুরুত্বপূর্ণ। এবার যে পাচঁজন নেতা পঞ্চপাণ্ডব হিসেবে পরিচিত হচ্ছেন তারা কর্মী বান্ধব। তাদের সঙ্গে কর্মীরা যোগাযোগ করছেন এবং সংগঠন পরিচালনার ক্ষেত্রে ক্রমশ তারা নীতি নির্ধারকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হচ্ছেন।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭