ইনসাইড বাংলাদেশ

অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া সেই কামারুল এখন স্বতন্ত্র এমপি


প্রকাশ: 18/02/2024


Thumbnail

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল। বিএনপির তাণ্ডব ছিল সারা দেশজুড়ে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ধরে ধরে ক্রসফায়ারে দেওয়া হতো। আওয়ামী লীগের বিশেষ করে যুবলীগ-ছাত্রলীগের যারা মাঠের সৈনিক তাদেরকে টার্গেট করতো র‌্যাব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হতো। অস্ত্র মামলা দেওয়া হতো। এরপর তাদেরকে গোসল করানো হতো। অবশেষে তওবা পরিয়ে নিয়ে গিয়ে ক্রসফায়ারে হত্যা করা হতো। এটি ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট আমলের একটা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। 

সেই সময়ে কুষ্টিয়ায় যুবলীগের নেতা ছিলেন কামারুল আরেফিন। তার নেতৃত্বে কুষ্টিয়ায় বিএনপি-জামায়াতের অনিয়ম, দুর্নীতি এবং স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন জমে উঠেছিল। যুবলীগের এই লড়াকু নেতাকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গ্রেফতারের পর তাকে থানায় নেওয়া হয়, গোসল করানো হয়। এসময় কুষ্টিয়া থেকে খবর আসে যুবলীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে, কামারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার ক্রসফায়ার নিশ্চিত। এই তথ্য জানার পর তৎকালীন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মির্জা আজম যুবলীগের কর্মীদের কাছে কুষ্টিয়ার এসপির টেলিফোন নম্বর চান। টেলিফোন নম্বর নেওয়ার পর মির্জা আজম সরাসরি এসপিকে ফোন করেন। সৌভাগ্য কামারুলের, মির্জা আজমের ফোন ধরেন এসপি। মির্জা আজম তার পরিচয় দেন যে, তিনি সংসদ সদস্য, হুইপ এবং যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি এসপিকে বলেন, আমি জানি আপনি কামারুলকে গ্রেপ্তার করেছেন। একটু পর তাকে ক্রসফায়ারে দেবেন। কামারুল যুবলীগের একজন কর্মী। রাজনৈতিক আন্দোলন করা ছাড়া তার অন্য কোনও অপরাধ নেই। কিন্তু তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার ব্যাপারটি আমরা জেনেছি। 

মির্জা আজম এসপিকে আরও বলেন, আপনি মনে রাখবেন বিএনপি-জামায়াতই শেষ সরকার নয়। বিএনপি-জামায়াতের পর আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। তখন আমি মন্ত্রী হব। আমি মন্ত্রী হয়ে কিন্তু আপনার এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আপনাকে বিচারের আওতায় আনব। তাছাড়া আমি জানি যে, ঢাকায় আপনার পরিবার কোথায় থাকে। আমরা যুবলীগের কর্মীরা এই হত্যার বদলা নেব। আপনি ন্যায়-নীতি যদি অনুসরণ না করেন, আইনের পথে না চলেন, যদি আইনগতভাবে কামারুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে আপনার পরিণতি ভবিষ্যতে কী হবে তা আপনি নিজেই চিন্তা করুন। 

এই বক্তব্য রাখার পর মির্জা আজম ফোন রেখে দেন। এসপি শুধু নীরবে বক্তব্য শোনেন। এরপর এসপি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেন। তিনি বোঝেন যে, যুবলীগের নেতাকর্মীরা জেনে গেছেন যে, কামারুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তাকে ক্রসফায়ারে দেওয়া হবে। বাধ্য হয়ে অবশেষে কামারুলকে ছেড়ে দেন ওই এসপি। অলৌকিকভাবে ক্রসফায়ারের হাত থেকে বাঁচেন কামারুল।

সেই কামারুল আরেফিন এবার আলোচনার ঝড় তুলেছেন। জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুকে বিপুল ভোটে পরাজিত করে কুষ্টিয়া-২ আসন থেকে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। মাঠে জনপ্রিয় এই কামারুল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি। শরিকদের কাছে আওয়ামী লীগকে এই আসনের মতো অনেক আসনই ছেড়ে দিতে হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে যারা দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছে, দুঃসময়ে যারা দলের জন্য লড়াই করেছে; এরকম আরও অনেক কামারুল এখনো অপাঙ্কতেয় হয়ে পড়ে আছে। কেউ কেউ নিজ যোগ্যতায় এবং নিজ মেধায় এবার সংসদ সদস্য হয়েছেন, রাজনীতিতে এসেছেন। কিন্তু, সবাই কি কামারুলের মতো পেয়েছেন অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকা আর এমপি হওয়ার সৌভাগ্য?



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭