ওয়ার্ল্ড ইনসাইড

অস্কারজয়ী ডকুমেন্টরিতেই ছিল নাভালনির মৃত্যুর আভাস!


প্রকাশ: 18/02/2024


Thumbnail

রাশিয়ার পুতিনের আধিপত্য এবং কড়া স্বৈরাচারিতার কারণে কেউ তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস করে না। তবে নাভালনির সেই সাহস ছিল। 

বৈশ্বিক রাজনীতিতে যেন তোলপাড় হচ্ছে রাশিয়ান সমালোচক অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যু নিয়ে। তাঁর রহস্যে ঘেরা মৃত্যুতে যেমন সবাই দুঃখ প্রকাশ করছে, তেমন ভাবে অনেকের দাবী তারা আগেই জানতেন এমন কিছু হবে।  

পশ্চিমা দেশগুলোর মতে, সামনের নির্বাচন ঝামেলাহীন ভাবে পার করার জন্যই পথের কাটা সরালেন রাশিয়ান অধিপতি ভ্লাদিমির পুতিন।

কানাডার পরিচালক ড্যানিয়েল রোহার ২০২২ সালে প্রশ্ন করেছিলেন, রাশিয়ান বিরোধী দলীয় নেতা অ্যালেক্সি নাভালনিকে। ‘আপনি যদি চিরবিদায় নিয়ে চলে যান, তবে রাশিয়াবাসীদের উদ্দেশ্যে আপনার শেষ বক্তব্য কি হবে?’ তিনি উত্তরে বলেছিলেন, ‘তারা যদি আমাকে মেরেই ফেলতে চায় তাহলে বুঝতে হবে আমি অসম্ভব শক্তিশালী। সেইজন্যই তারা আমাকে পথ থেকে সরাতে চাইছে। আমাদের সাহস হারালে চলবে না, এই শক্ত অবস্থান ধরে রাখতে হবে।’ এর সাথে নিজের মাতৃভাষা, রুশ ভাষায় নাভালনি ডকুমেন্টরিতে, হার না মানার কথাও বলেন। 

উত্তর দেওয়ার আগে কৌতুক করে নাভালনি এও বলেন,‘ মনে হচ্ছে আপনি আমার মৃত্যু পরবর্তী মামলা নিয়ে কোনো সিনেমা বানাচ্ছেন!’ সেই কথাই এখন রাশিয়ার সাধারণ জনগণের মনে বুলেট মতো ক্ষত করছে। মাত্র ৪৭ বছর বয়সে রহস্যজনকভাবে শক্তিশালী বিরোধী রুশ নেতা নাভালনি পরলোক গমন করেন। তার এই মৃত্যুতে রয়েছে পরিবার এবং দলীয় সমর্থকদের সন্দেহ। 

যুগান্তকারী নেতা নাভালনির উপর ডকুমেন্টরি তৈরি করার সময়, পরিচালকের সাথে হয় এই কথোপকথন। সেই ডকুমেন্টরিটি অস্কার পুরস্কারের সম্মানও অর্জন করেছিল। বন্ধুর মৃত্যুতে পরিচালক ড্যানিয়েল দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি কতটা মর্মাহত হয়েছেন, তাও উল্লেখ করেন। 

ড্যানিয়েল জানান, সিনেমার শ্যুটিং চলাকালে নাভালনির সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। তিনি খুবই হাস্যরসাত্মক মানুষ ছিলেন। নাভালনি নিজেও হাসতে পছন্দ করতেন এবং সবার সাথেই মজা করে হাসানোর চেষ্টা করতেন।তখন নাভালনির স্ত্রী ইউলিয়ার সাথেও ড্যানিয়েলের বন্ধুত্ব হয়। 

ডকুমেন্টরি তৈরি করার আগে নাভালনিকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছিল।  সেই ঘটনাই ছিল ডকুমেন্টরির মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। নেতা নাভালনি এবং তার দল একটি চক্রান্তের পর্দা উন্মোচন করেন। চক্রান্তটি ছিল মূলত স্নায়ুনাশক বিষ প্রয়োগ করে নাভালনি-কে হত্যা করার।    

২০২০ সালের আগস্ট মাসে সাইবেরিয়ায় বিমানে জরুরি ল্যান্ডিং করাতে হয়েছিল। সরকারি অনুমতিতে বার্লিনে চিকিৎসাধীন থাকায় প্রাণ বেঁচে গিয়েছিল নাভালনির । জার্মান সরকারের মতে তার রক্তে  রাসায়নিক স্নায়ু নিস্তেজক পদার্থ পাওয়া গিয়েছিল। ‘নোভিচক’ নামক এই বিষ সোভিয়াত ইউনিয়ন দ্বারা তৈরি করা হয়; যা রাশিয়ার গোয়েন্দারা শত্রুদের বিরুদ্ধে ব্যবহার করে। তাকে রাশিয়া ফেরত না যাওয়ার জন্য হুমকি অবধি দেওয়া হয়েছিল।

তবে সকলের সর্তক বার্তা অমান্য করে কারাবাস নিশ্চিত জেনেও নিজ দেশেই ফেরত যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন তিনি। এজন্য তাকে পশ্চিমাবাসীরা সাহসী হিসেবে মনে করতেন। দেশে যাওয়ার পরই তাকে মস্কোতে কারাবন্দী করে রাখা হয়।

রাশিয়া সরকারের মতে নাভালনি ছিলেন, আমেরিকার গুপ্তচর বা সিক্রেট এজেন্ট। দেশদ্রোহী এবং বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় ১৯ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয় তাকে।

নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেলে থেকে নিজের বক্তব্য জনগণের সামনে আনতেন নাভালনি। পুতিনের বিরুদ্ধে খোলাখুলি ভাবে কথা বলতে তিনি কখনোই ভয় পেতেন না। তাই পুতিনের এই কট্টর সমালোচকের মৃত্যুকে অনেকে পরিকল্পিত খুন বলে মনে করেন।

তিনি রয়টার্সের একটি সাক্ষাৎকারে দুর্নীতিকে রাশিয়ার রাজনীতির ভিত্তি বলেছিলেন। রাজনীতিকে ব্যবহার করে পুতিন যেভাবে নিজেকে অর্থনৈতিক ভাবে ফুলে ফেঁপে বড় করছিলেন, সেই ব্যাপারেও প্রমাণসহ দাবি তোলেন রুশ আইনজীবী।



প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭