এডিটর’স মাইন্ড

শিরীন আখতারের মনোনয়ন নিয়ে কি হয়েছিল?


প্রকাশ: 18/02/2024


Thumbnail

জাসদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা শিরীন আখতার শেষ পর্যন্ত জাতীয় সংসদে যেতে পারলেন না। ফেনীর যে আসনটি থেকে তিনি নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন সেই আসনে আওয়ামী লীগের ত্যাগী পরীক্ষিত এবং দুঃসময়ের নেতা আলাউদ্দিন নাসিমকে মনোনয়ন দেয়া হয়। আলাউদ্দিন নাসিম ওই এলাকায় অবিসংবাদিত ভাবে জনপ্রিয়। 

আওয়ামী লীগ নির্বাচনের আগে যে জনমত জরিপগুলো করেছিল সেই জনমত জরিপে আলাউদ্দিন নাসিম শিরীন আখতারের চেয়ে বিপুল ব্যবধানে এগিয়ে ছিলেন। একারণে আওয়ামী লীগ সেই শিরীন আখতারকে প্রার্থী করার ঝুঁকি নেয়নি। শিরীন আখতারকে প্রার্থী না করার ফলে ১৪ দলের শরিকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা এবং অসন্তোষ তৈরি হয়েছিল। এ নিয়ে ১৪ দলের নেতারা গণভবনে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকও করেছিলেন। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আশ্বস্ত করেছিলেন যে, শিরীন আখতারের বিষয়টি পরে দেখা হবে এবং সেই আশ্বাসে শিরীন আখতারের আসনটি নিয়ে আর এগোয়নি। ওই আসনে আলাউদ্দিন নাসিম নির্বাচন করেন এবং তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হন। 

আলাউদ্দিন নাসিম সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ছিল যে, তিনি ভোটার উপস্থিতি বাড়াতে পেরেছিলেন। বিএনপি নির্বাচন না করার পরও যে সমস্ত আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল উৎসাহজনক তার মধ্যে ফেনীর ওই আসনটি অন্যতম। কিন্তু নির্বাচনের পর শিরীন আখতার সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেতে পারেন এমন একটি আলোচনা ছিল। শিরীন আখতার নিজেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। ওবায়দুল কাদের তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন, বিষয়টি আমরা দেখছি, আমাদের মাথায় আছে। 

হাসানুল হক ইনু নিজে আমির হোসেন আমুর সঙ্গে দেখা করেছিলেন, যিনি ১৪ দলের সমন্বয়কও বটে। আমির হোসেন আমু তাকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, বিষয়টি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন ৪৮ টি আসনে মনোনয়ন চূড়ান্ত করল তখন দেখা গেল শিরীন আখতার নেই। 

আওয়ামী লীগের কোনো কোনো পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, শিরীন আখতারের মনোনয়ন না পাওয়ার জন্য ১৪ দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল দায়ী। জাসদ তাদের প্রধান নেতা হাসানুল হক ইনুকে সংসদে না পেয়ে মন খারাপ করেছে এবং এই কারণেই তারা সংরক্ষিত আসনে প্রার্থী দিতে চাননি। কিন্তু হাসানুল হক ইনু বাংলা ইনসাইডার এর সঙ্গে আলাপকালে এই বক্তব্য অস্বীকার করেছেন। তিনি বরং বলেছেন যে, শিরীন আখতারের বিষয়টি মোটামুটি সিদ্ধান্ত ছিল। তারপরও কেন আওয়ামী লীগ তাকে মনোনয়ন দিল না সংরক্ষিত আসনে সেটা তাদের কাছেও বিস্ময়! তারা অপেক্ষা করেছিলেন যে, আওয়ামী লীগ থেকে তাদেরকে ডাকা হবে বা শিরীন আখতারকে মনোনয়ন দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। 

হাসানুল হক ইনু বলেছেন যে, আমরা অপেক্ষায় ছিলাম। আমরা কেন রাগ করব, আমরা কেন বলব যে শিরীন আখতারকে আমরা সংসদে পাঠাব না। বরং তিনি নিজেই বিষয়টি নিয়ে ১৪ দলের সমন্বয়কের সাথে কথা বলেছিলেন। সেই প্রসঙ্গটিও উত্থাপন করেন। 

প্রশ্ন হল যে, জাসদ যদি আগ্রহী থাকে এবং প্রধানমন্ত্রী যদি এ ধরনের কোন অঙ্গীকার করে থাকেন তাহলে শিরীন আখতার কেন সংরক্ষিত আসনে মনোনয়ন পেলেন না? এটি নিয়ে জাসদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। 

তবে বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে, আওয়ামী লীগ এখন ১৪ দলের ব্যাপারে নতুন করে ভাবছে। শিরীন আখতারের মনোনয়ন না পাওয়াটা তার একটি বার্তা। আওয়ামী লীগ মনে করছে যে, ১৪ দলের যে শরিক দলগুলো আছে সেই শরিক দলগুলো কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক চাপ অনেকে বেড়েছে। এখন আওয়ামী লীগে মনোনয়ন লাভে ইচ্ছুক প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এবার সংরক্ষিত আসনে ১৫৪৯ জন মনোনয়ন জমা দিয়েছিলেন। তাদের মধ্যে মাত্র ৪৮ জনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ কারণেই আওয়ামী লীগ শেষ পর্যন্ত শিরীন আখতারকে সংরক্ষিত আসনে আনতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সূত্রগুলো বলছে যে, আওয়ামী লীগ এখন ১৪ দল কতটুকু প্রয়োজনীয় সেই হিসেবে নিকাশ করছে। সেই হিসেবে নিকেশে শেষ পর্যন্ত ১৪ দল টিকবে কিনা সেটাই এখন দেখার বিষয়।


প্রধান সম্পাদকঃ সৈয়দ বোরহান কবীর
ক্রিয়েটিভ মিডিয়া লিমিটেডের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান

বার্তা এবং বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ২/৩ , ব্লক - ডি , লালমাটিয়া , ঢাকা -১২০৭
নিবন্ধিত ঠিকানাঃ বাড়ি# ৪৩ (লেভেল-৫) , রোড#১৬ নতুন (পুরাতন ২৭) , ধানমন্ডি , ঢাকা- ১২০৯
ফোনঃ +৮৮-০২৯১২৩৬৭৭